Advertisement
E-Paper

School: পড়ুয়াদের স্কুলে ফেরাতে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন শিক্ষিকা 

স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম পর্যন্ত তিনজন শিক্ষক। করোনা কালে পড়ুয়ার সংখ্যা নেমে এসেছে সত্তরেরও নীচে।

আরিফ ইকবাল খান

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:৫৬
n ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবদের বোঝাচ্ছেন স্বর্ণালী। রবিবার হলদিয়ার জগৎপুরে।

n ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাতে অভিভাবদের বোঝাচ্ছেন স্বর্ণালী। রবিবার হলদিয়ার জগৎপুরে। নিজস্ব চিত্র।

কেউ মাঠে কাজ করছেন। কেউ ধান ঝাড়ছেন। আমন ধান ওঠার পর এই সময় খুবই ব্যস্ত গ্রামের মানুষ। তারই মাঝে এক ঝাঁক স্কুল পড়ুয়াকে নিয়ে মাঠে-ঘাটে, হেঁসেলে ঢুকে পড়ছেন হলদিয়া মহকুমার সুতাহাটার চৈতন্যপুর গ্রাম পঞ্চায়েতর গোবিন্দপুর জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা স্বর্ণালী পন্ডা।

স্কুলে পঞ্চম থেকে অষ্টম পর্যন্ত তিনজন শিক্ষক। করোনা কালে পড়ুয়ার সংখ্যা নেমে এসেছে সত্তরেরও নীচে। এখনও প্রাথমিক বা উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুল খোলার ব্য়াপারে সরকারি সিদ্ধান্ত না হলেও প্রস্তুতি থেমে নেই। তবে ইতিমধ্যেই নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল চালু হলেও অনেক ক্ষেত্রেই পড়ুয়াদের গরহাজিরায় চিন্তিত বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিতে গিয়ে নাবালিকা বিয়ে থেকে সন্তানসম্ভবা হয়ে যাওয়ার ঘটনাও সামনে এসেছে। চোখের সামনে এমন উদাহরণে ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি থেকে স্কুল খুললে তাদের নিয়মিত স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে বাবা-মা সচেতন করার পাশাপাশি কচিকাঁচা পড়ুয়াদের টানতে হাতে নানা উপহার নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরছেন শিক্ষিকা স্বর্ণালী।

দিদিমণিকে দোরগোড়ায় দেখে বেজায় খুশি পড়ুয়ারাও। আক তাদের দেখে সান্টার মতো নিজের ব্যাগ শিক্ষিকা বের করছেন চকলেট, পেনসিল আর নানা রকমের সুগন্ধী ইরেজার। তুলে দিচ্ছেন কচি হাতগুলোতে। বোঝাচ্ছেন বদলে আসতে হবে স্কুলে। পড়তে হবে বই। দেউলিয়ার গোবিন্দপুর মালপল্লিতে রবিবার বাড়ি বাড়ি ঘুরছিলেন দিদিমণি। কাননবালা মাল, পাপিয়া মাল-সহ অনেকেই দিদিমণিকে একদিন পর কাছে পেয়ে খুশি। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পাপিয়ার পড়াশোনার খোঁজ নেওয়ার সাথে সাথে তার দাদা প্রণবেশেরও খোঁজ নিলেন দিদিমণি। প্রণবেশ স্কুলছুট। কাজের খোঁজে সে এখন মুম্বইতে। পাপিয়া জানায়, বাবা নিকুঞ্জ মাল প্রতিবন্ধী । মা মাছ বিক্রি করেন। পাশের গ্রাম জগৎপুরে গিয়ে মসজিদ থেকে মক্তবের মৌলবী সকলের সঙ্গেই কথা বললেন শিক্ষিকার। এক সময় খোঁজ করলেন আব্দুল আলি কোথায় ? উত্তর এল ‘মাঠে আছে ম্যাডাম’। মেধাবী ছাত্র আব্দুল তখন ধান কেটে মাথায় করে বয়ে আনছে। দিদিমণির হাত থেকে চকলেট, পেনসিল নিয়ে আব্দুল শুধাল ‘দিদিমণি স্কুল কবে খুলবে’?

প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে স্কুল এখনও না খুললেও স্কুলের শিক্ষক– শিক্ষিকারা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছেন ছাত্র ছাত্রীদের সাথে। আখতারুন, মুখতারুন , চাঁদনি, আনিশা- সহ এক ঝাঁক ছাত্রী দিদিমণির সাথে এ দিন গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে স্কুলে ভর্তির ফর্মও বিলি করে। গ্রামের বাসিন্দা সায়েরা বিবি বলেন, ‘‘দিদিমণি প্রায়ই ফোনে যোগাযোগ করেন। কিছু দরকার হলে নিজেই চলে আসেন। গ্রামের সব বাচ্চার নাম জানেন। ছেলেমেয়েদের যেন অবশ্যই স্কুল পাঠাই সে কথাও বলেন।’’ আর এক পড়ুয়ার অভিভাবক বলেন, ‘‘এই গ্রামে পড়াশোনার আগ্রহ বাড়িয়েছেন দিদিমণি।’’

আর স্বর্ণালীর কথায়, ‘‘শিক্ষকতাকে ব্রত ভেবে এই পেশায় এসেছি। চাই সকলে পড়াশোনা করুক। তাই স্কুল বন্ধ থাকলেও ছেলেমেয়েগুলো কেমন পড়ছে তার খোঁজ নিতে নিয়মিত ওদের সাথে যোগাযোগ রেখেছি। স্কুলে রিডিং কর্নার, স্মার্ট ক্লাস করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’ সুতাহাটার বিডিও আসিফ আনসারি জানান, ওই স্কুল শিক্ষিকার এমন উদ্যোগের প্রশংসা করি। খুব ভাল কাজ করছেন তিনি।’’ হলদিয়া সার্কেলের এ আই রুদ্রনারায়ণ দোলই বলেন, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের এই ধরনের কাজ খুবই উৎসাহব্যঞ্জক।’’

midnapore Schools
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy