Advertisement
০২ মে ২০২৪

ডাক্তারি ছাত্রের অপমৃত্যু, শোকস্তব্ধ মালঞ্চ

হস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক ডাক্তারি ছাত্রের। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে। দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রের নাম অগ্নিদীপ গঙ্গোপাধ্যায় (২১)। বাড়ি খড়্গপুরে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন অগ্নিদীপ।

অগ্নিদীপ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে।

অগ্নিদীপ গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৪ ০০:১৮
Share: Save:

হস্টেলের ছাদ থেকে পড়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু হল এক ডাক্তারি ছাত্রের। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কলকাতার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রাবাসে। দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রের নাম অগ্নিদীপ গঙ্গোপাধ্যায় (২১)। বাড়ি খড়্গপুরে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন অগ্নিদীপ।

হস্টেল সূত্রে খবর, ওই রাতে সাড়ে এগারোটা নাগাদ অধিকাংশ ছাত্র ক্যান্টিনে খাচ্ছিলেন। হঠাৎই একটা শব্দ পেয়ে বেরিয়ে তাঁরা দেখেন, একতলায় জলাধারের উপরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন অগ্নিদীপ। ওই ছাত্ররাই তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যালে নিয়ে যান। রাতে অবস্থার অবনতি হওয়ায় অগ্নিদীপকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে তাঁর অস্ত্রোপচারও হয়। কিন্তু মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত থাকায় তাঁকে বাঁচানো যায়নি। মঙ্গলবার ভোরে বাইপাসের ওই হাসপাতালে মারা যান অগ্নিদীপ।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃত ছাত্রের বাবা দুলাল গঙ্গোপাধ্যায় তমলুক কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। দাদা শুভ্রদীপ মেদিনীপুর মেডিক্যালে ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মী। খবর পেয়ে এ দিনই কলকাতায় এসেছেন তাঁরা। অগ্নিদীপের এক মাসতুতো দাদা বলেন, “ভাই খুব চাপা স্বভাবের ছিল। জয়েন্টে ভাল ফল করে এখানে পড়তে এসেছিল। কোথা থেকে কী হয়ে গেল, বুঝতেই পারছি না।” ২০১০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পরে ২০১১ সালে মেডিক্যালের জয়েন্টে বসেছিলেন অগ্নিদীপ। সে বার র‌্যাঙ্ক আশানুরূপ হওয়ায় তিনি আর ভর্তি হননি। ২০১২ সালে ফের জয়েন্ট দিয়ে মেডিক্যালে ৬০৭ র‌্যাঙ্ক করেন তিনি।

মেধাবী এই তরুণের বাড়ি খড়্গপুরের মালঞ্চ এলাকার ঢেকিয়ায়। এ দিন সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, পরিজন, প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধবরা ভিড় করেছেন। চাপা স্বরে কয়েকজন বলছেন, “এই তো সে দিনও এলাকায় দেখলাম। এমন ঝকঝকে ছেলেটার হঠাৎ কী এমন হল!”

অগ্নিদীপের বাবা দুলালবাবু বলেন, “আমার ছোট ছেলে আঁকা, আবৃত্তি, ক্রিকেট, পড়াশুনো সবেতেই ভাল। সোমবার রাতেও কথা হয়েছিল। তারপর কী যে হল!” অগ্নিদীপের বৌদি মৌসুমীদেবী জানালেন, গত সপ্তাহেও দেওর বাড়িতে এসেছিলেন। আচরণে অস্বাভাবিক কিছুই টের পাননি তাঁরা। সোমবার রাতেও স্বাভাবিক ভাবেই বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন অগ্নিদীপ।

অগ্নিদীপের স্কুল অতুলমণি পলিটেকনিক উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় মঙ্গলবার ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রণবকুমার দে বলেন, “ও খুবই কৃতী ছাত্র। স্কুলে কোনও দিন দ্বিতীয় হয়নি। গত বছর স্কুলের ৭৫ বর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠানেও এসেছিল অগ্নিদীপ। ওকে এ ভাবে হারাতে হবে ভাবিনি।” আকস্মিক এই মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছে অগ্নিদীপের বন্ধুরাও। তাঁর স্কুলের সহপাঠী সুনীল গোপের কথায়, “পাড়ার রাস্তায় সপ্তাহ শেষের ক্রিকেটটা আর জমবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE