বন্ধ দোকান, কাঁথিতে
বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে সচল রইল দুই মেদিনীপুরের শিল্পশহর-হলদিয়া ও খড়্গপুর। হলদিয়ায় বন্দরের সঙ্গেই স্বাভাবিক ছিল জনজীবন। তবে খড়্গপুরের অধিকাংশ কারখানা চালু থাকলেও স্তব্ধ ছিল জনজীবন।
বেসরকারি পরিবহণ ব্যবস্থা ছাড়া আর সব কিছু স্বাভাবিক থাকল হলদিয়া শিল্পাঞ্চল। বুধবার সকাল থেকে হলদিয়া বন্দর-সহ শিল্পাঞ্চলের কারখানা, সরকারি অফিস সর্বত্রই কর্মীদের হাজিরা অন্যান্য দিনের মতোই। শিল্প সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক ছিল কারখানার উৎপাদনও। বুধবার সকাল ১১টা নাগাদ হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ (এইচডিএ)-এর অফিসে যান তমলুকের সাংসদ শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে বসেই খোঁজ নেন হলদিয়ার কারখানা ও অফিসের। পরে হলদিয়া রিফাইনারিতে গিয়ে কর্মীদের উপস্থিতির খোঁজ নেন। বন্দরের ডেপুটি চেয়ারম্যান মণীশ জৈন জানান, বন্দরে ১০০ শতাংশ উপস্থিতি রয়েছে। এদিন বন্দরে ১২টি জাহাজে কাজ হয়েছে। আইওসি হলদিয়া রিফাইনারির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এপি গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ১০০ শতাংশ উপস্থিতি ছিল।
এ দিনের ধর্মঘটের বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘হলদিয়ার শ্রমিক থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই কর্মনাশা ধর্মঘটকে প্রত্যাখ্যান করে কাজে যোগ দিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে দেখেছি, এ দিন কারখানা, অফিসে স্বাভাবিকের তুলনায় উপস্থিতির হার বেশি। উৎপাদনও বেশি হয়েছে। ধর্মঘটের বিরুদ্ধে আমাদের পথেও নামতে হয়নি। মানুষই এই ধর্মঘটকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’
হলদিয়ার রানীচকে সিটুর অফিসের সামনে কর্মীদের জটলা থাকলেও তাদের ধর্মঘট সফলে জন্য পথে নামতে দেখা যায়নি। কিন্তু পথে কেন দেখা মিলল না বামেদের? সিটুর হলদিয়া রিজিওনাল কমিটির সম্পাদক দেবেশ আদকের বক্তব্য, ‘‘জানান জোর করে ধর্মঘট করতে চাইনি। তবে অনেক মানুষই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন।’’ কিন্তু হলদিয়ার অফিসে, কারখানায় তো হাজির স্বাভাবিক? এর উত্তরে দেবেশবাবু বলেন, ‘‘সরকারি অফিসে কর্মীদের আসার বিষয়ে সরকারি নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া আইএনটিটিইউসি কাজে আসার বিষয়ে কর্মীদের চাপ দিয়েছে, ভয় দেখিয়েছে। কাজ বাঁচাতেই কর্মীরা কাজে আসতে বাধ্য হয়েছেন।’’ হলদিয়ার মহকুমাশাসক মলয় রায় বলেন, ‘‘হলদিয়া মহকুমার সরকারি অফিসগুলিতে এ দিন উপস্থিতির হার স্বাভাবিক রয়েছে। ধর্মঘট ঘিরে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’’
বন্ধে খড়্গপুরের নিমপুরা ও বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের বিভিন্ন কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি ছিল অন্যদিনের তুলনায় কম। তবে বিদ্যাসাগর শিল্প তালুকের ভারী নির্মাণ যন্ত্রাংশের কারখানা টাটা-হিতাচির ম্যানেজার (এইচআর) সুদীপ মালাকার বলেন, “ধর্মঘটে কারখানা সচলই রয়েছে। প্রায় ৮৫ শতাংশ স্থায়ী শ্রমিক ও ৭৫ শতাংশ অস্থায়ী শ্রমিক কাজে এসেছেন।”
নিমপুরা শিল্পতালুকে বিয়ারিং কারখানা সিমেন্স ছিল বন্ধ। ধর্মঘটে মিশ্র প্রভাব পড়েছে টাটা স্টিলের বিয়ারিং কারখানাতেও। বামেদের দাবি, অন্যদিনের থেকে কারখানায় শ্রমিকদের হাজিরা ছিল কম। যদিও কারখানার ম্যানেজার (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, “কারখানায় শ্রমিকদের উপস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। অন্যদিনের মতোই উৎপাদন হয়েছে।”
ধর্মঘট সফল করতে বাম শ্রমিক সংগঠনগুলি মিছিল বের করে। বাম শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, বন্ধ স্বতঃস্ফুর্ত। সমস্ত কারখানায় কম শ্রমিক আসায় উৎপাদনে কার্যত বন্ধ ছিল। জেলা প্রশাসনের নির্দেশ থাকায় মালি ক পক্ষ ধর্মঘট নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। আইটাকের জেলা সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, “শ্রমিকদের স্বার্থে এই বন্ধ সর্বাত্মক। তাই খড়্গপুর শিল্পাঞ্চলে কোনও কারখানায় শ্রমিকেরা কাজে আসেনি। দু’একটি কারখানায় তৃণমূল জোর করে শ্রমিক এনে কারখানা সচল রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাও ব্যর্থ হয়েছে। মালিকেরা ভয়ে অন্য কথা বলছে।’’
আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “শ্রমিকরা বন্ধে সাড়া দেননি। তাই বন্ধ বিফল। কারখানাগুলি পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। উৎপাদনের হার ছিল অন্য দিনের মতো।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কোথাও শ্রমিকদের কাজে আসতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। আসলে মানুষ বুঝে গিয়েছে এই বন্ধ রাজনীতিই রাজ্য পিছিয়ে পড়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy