জিলিপি ভাজা হচ্ছে হাড়দা গ্রামের মেলায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
‘নিলামের জিলিপি’— এ বার চেখে দেখার সুযোগ পাচ্ছেন ঝাড়গ্রামের পর্যটকরাও! জিলিপি অবশ্য নতুন নয়, নতুন নয় লক্ষ্মীপুজোয় বিনপুরের হাড়দা গ্রামের বিশেষ জিলিপিও। তবে এ বারই প্রথম সেই জিলিপিকে ‘ট্যুর প্যাকেজ’-এ সামিল করেছে একাধিক বেসরকারি পর্যটন সংস্থা।
হাড়দার শুঁড়ি সম্প্রদায়ের পারিবারিক কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো ১৫৫ বছরের পুরনো। পুজোর মেলায় তৈরি হয় এই বিশেষ জিলিপি। দেবীর নৈবেদ্যে অবশ্য জিলিপির ঠাঁই নেই। মেলার একটি নির্দিষ্ট দোকানেই তৈরি হয়, বিক্রি হয়। হাড়দাবাসীর বিশ্বাস, ওই দোকানে থরে থরে জিলিপির রসে মিশে থাকে লক্ষ্মীর আশীর্বাদ।
কিন্তু কে জিলিপি বানাবেন? সে জন্য আগাম নিলাম ডাকে পুজো কমিটি। যিনি সর্বোচ্চ দর দেন, কেবলমাত্র তিনিই মেলায় প্রসাদী জিলিপির দোকান খোলেন। মেলার পাঁচ দিন একমাত্র ওই দোকানেই জিলিপি বিক্রি হয়। বিউলি ডালের গুঁড়োর সঙ্গে আতপ চালের গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি হয় বিশেষ ধরনের এই জিলিপি। বছরে মাত্র এক বার। এ বার দোকান খোলার বরাত পেয়েছেন শুঁড়ি পরিবারের সদস্য অমল সাহা।
নিয়ম অনুযায়ী কোজাগরীর পরে প্রতিপদ থেকে এই জিলিপি তৈরির কথা। তবে এখন লক্ষ্মীপুজোর দিনেই জিলিপি তৈরি শুরু হয়ে যায়। বিক্রি হয় ৭০ টাকা কিলো দরে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত বছর মেলায় দু’শো কুইন্টাল জিলিপি বিক্রি হয়েছিল।
ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি ভ্রমণ সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, “প্যাকেজ ট্যুরে বৈচিত্র্য আনতে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উপর গুরুত্ব দিচ্ছি। সেই ভাবনা থেকেই হাড়দার বার্ষিক জিলিপির পরম্পরাকে এই প্রথমবার ট্যুর প্যাকেজে সামিল করা হয়েছে।” একটি পর্যটন সংস্থার কর্ত্রী দেবযানী কর্মকার বলেন, “সপ্তাহান্তে রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে প্রচুর মানুষ আসছেন। সেই কারণে শনিবার লক্ষ্মীপুজোর দিনে পর্যটকদের হাড়দায় নিয়ে যাওয়া হবে।”
জনশ্রুতি, কয়েকশো বছর আগে হাড়দার শুঁড়ি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা গ্রামের সম্পন্ন ‘মোড়ল’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ওই পরিবারগুলিকে ‘মণ্ডল-বাকুল’ বলা হত। শোনা যায়, ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে গ্রামের অক্রূর মোড়ল স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে মণ্ডল-বাকুলের পারিবারিক কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো শুরু করেন। জিলিপি সংস্কৃতিও সেই সময়কার। এ বার সেই পুজোর বাজেট ১১ লক্ষ টাকা। স্থায়ী লক্ষ্মী মন্দিরে একই কাঠামোর উপর মৃণ্ময়ী প্রতিমা তৈরি করে পুজো হয় প্রতিবছর। তবে লক্ষ্মী একা নন। তাঁর বাঁদিকে থাকেন সরস্বতীও। দু’পাশে দু’জন করে মোট চারজন সখী থাকেন। তাঁদের বলা হয় ‘লুক-লুকানি’। লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মাথার উপর থাকেন নারায়ণ।
মণ্ডল-বাকুলের সদস্য খড়্গপুরের হিজলি হাইস্কুলের ইতিহাসের শিক্ষক অশেষকুমার সাহা জানান, দেড়শো বছর আগে মণ্ডল-বাকুলের অধীনে ৬০টি পরিবার ছিল। এখন তা চারশো ছাড়িয়েছে। তাঁরাই দায়িত্ব ও খরচ বহন করেন। পরিবারের বধূ হাড়দা পঞ্চায়েতের সদস্য পুতুল সাহা বলেন, “এ সময় প্রবাসীরা গ্রামে ফেরেন, দূর-দূর থেকে মানুষ আসেন জিলিপি কিনতে। চার দিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন হয়ে থাকে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy