প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃহস্পতিবারও সকাল থেকে প্রবল বৃষ্টি চলতে থাকে। সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত সাময়িকভাবে রোদ ঝলমলে আবহাওয়া থাকলেও দুপুর থেকে ফের বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির পাশাপাশি বৃহস্পতিবার জেলায় ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার আগাম সতর্কতা থাকায় এ দিন সকাল থেকেই জেলার স্বাভাবিক জনজীবন ব্যাহত হয়। জেলার সব প্রাথমিক স্কুল ছাড়াও উপকূল এলাকায় সব স্কুল-কলেজ ছুটি দেওয়া হয়। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল ছিল অনেকটাই কম।
গত সোমবার থেকে টানা বৃষ্টির জেরে জেলার তমলুক, হলদিয়া, কাঁথি, এগরা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় আমন, আউস ধানচাষের জমি, সব্জি পান, ফুল ও মাছচাষের পুকুর-ভেড়ি জলে ডুবে কৃষক ও মৎস্যজীবীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। গত মঙ্গলবার ও বুধবার এই দু’দিনেই জেলায় গড়ে প্রায় ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। জেলায় বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। টানা বৃষ্টিতে জেলার নন্দকুমার, তমলুক, চণ্ডীপুর, কোলাঘাট, পাঁশকুড়া, মহিষাদল, এগরা, ভগবানপুর, পটাশপুর, কাঁথি-১, ২ ও ৩ ব্লকের অধিকাংশ এলাকায় ধান, সব্জি, পান, ফুলচাষের জমি, মাছের ভেড়ি জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা কৃষি দফতরের উপ-অধিকর্তা সুশান্ত মহাপাত্র জানান, ‘‘এখনও পর্যন্ত ৬২ হাজার হেক্টর ধানজমি জলমগ্ন হয়েছে। এলাকায় আমন,আউশ ধানচাষের ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।’’
জেলার বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে থাকায় অনেকেই স্থানীয় স্কুল ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন। হাইস্কুলে আশ্রয় নেওয়া অর্জুন পাল, তাপস সামন্ত, ইলা সামন্ত, মনিরুল মল্লিক বলেন, ‘‘সোমবার থেকে জল জমার পরিমাণ বাড়ছিল। মঙ্গলবার থেকে বাড়িঘর জলে ডুবতে থাকতে থাকে। বাধ্য হয়ে বুধবার এখানে আশ্রয় নিয়েছি। তবে এখনও প্রশাসনের তরফে সাহায্য পাওয়া যায়নি।’’ হলদিয়ার মহকুমাশাসক শঙ্কর নস্কর এদিন জানান, ‘‘বৃষ্টির জেরে মহকুমায় মোট ৪৬০ টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১৬৩০ টি বাড়ি। ১৪৪টি মৌজা জলমগ্ন হয়েছে। প্রায় ৭০০ হেক্টর জমির চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’
প্রবল বৃষ্টির জেরে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিতরের এলাকা জল জমে গিয়েছে। ফলে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বুধবার রাত থেকে বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিতের জমা জল বের করার জন্য দুটি পাম্প মেসিন দিয়ে জল বের করার চেষ্টা চালানো হয়। তবে পরে ইউনিটটি চালু হয়। প্রবল বৃষ্টির জেরে কাঁসাই, রূপনারায়ণ, হলদি, চণ্ডীয়া, কেলেঘাই-বাগুই নদীর জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁসাই ও চণ্ডিয়া নদীর জলস্তর বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এ দিন জেলার উপকূলবর্তী এলাকার সব প্রাথমিক, হাইস্কুল-কলেজ ছুটি দেওয়া হয়। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য জানান, ‘‘জেলার বেশকিছু এলাকায় চাষের জমি ও গ্রামীণ রাস্তা জলমগ্ন হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে বড় কোন ক্ষয়ক্ষতির আসেনি। উপকূলবর্তী এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কবার্তা ছাড়াও আগামী ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। সমুদ্রে ট্রলার ও নৌকা নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়ায় নিষেধ করা হয়েছে।’’
ভেঙে পড়েছে বাসুদেবপুরের প্রাচীন মন্দির। ছবি: কৌশিক মিশ্র।
নিম্নচাপের বৃষ্টিতে জলমগ্ন ছিল এগরা মহকুমার প্রায় সবকটি ব্লক। তার ওপর বুধবার সন্ধ্যেয় হঠাৎ এল মিনিট দুয়েকের প্রবল ঘূর্ণিঝড়। তাতেই মূলত পটাশপুর-২ ব্লকের মথুরাগ্রামপঞ্চায়েত এলাকার চক্রশুল, ভুবন, লালুয়া, মদনমোহনপুর ও আড়গোয়াল গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার ১০-১২ টি গ্রামে ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি। ক্ষতিবাড় গ্রামের ঘরবাড়ি ও স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চালাও উড়ে গিয়েছে ঝড়ে। এছাড়া পটাশপুর-১ ব্লকের বড়হাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাটিও ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানান বিডিও বুলবুল বাগচি। পটাশপুর-২ ব্লকের বিডিও শুভজিৎ কুণ্ডু বলেন, ‘‘ মথুরা ও আড়গোয়াল অঞ্চলের বেশ কয়েকটি গ্রামের ক্ষতি হয়েছে। আমরা দ্রুত সেখানে ত্রিপল ও খাদ্য পাঠিয়েছি।’’ বাসুদেবপুরের প্রাচীন জগন্নাথ মন্দিরটি ভেঙে পড়ে বুধবার রাতেই।