অভিনব: স্কুলের বারান্দায় চিঠি লেখায় ব্যস্ত পড়ুয়ারা —নিজস্ব চিত্র
নয় নয় করে এক হাজার পোস্টকার্ড লেখা হল স্কুলে!
ফিরে আসুক চিঠির সেদিন। সরস্বতী পুজোর চিঠি লিখেই এই আর্জি জানাচ্ছে কেশপুরের এক স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। পুজোর আমন্ত্রণপত্র হিসেবে সাধারণত স্কুল থেকে ছাপানো কার্ড দেওয়া হয়। এই স্কুল থেকে অবশ্য দেওয়া হচ্ছে হাতে লেখা পোস্টকার্ড। তাতে লিখেছে ছাত্রছাত্রীরাই। পাঁচ- দশটা নয়, নয় নয় করে এক হাজার পোস্টকার্ড লেখা হয়েছে। পুজোর আমন্ত্রণপত্র হিসেবে তা বিলিও শুরু হয়েছে। অভিনব এই উদ্যোগ কেশপুরের মুণ্ডলিকা বিদ্যাপীঠের।
পোস্টকার্ডে শুরুতেই লেখা, ‘শ্রদ্ধাভাজনেষু’। পরে লেখা, ‘কালি- কলম- মন, এই তিনের সুষম মিলনে রচিত বিস্মৃতপ্রায় পত্রশিল্পের স্মরণে আমাদের বাণীবন্দনায় এ বারের বিষয় ভাবনা ‘ডাকঘর’। অন্তর্জালের বেড়াজাল ভেদ করে আমাদের প্রাণবন্ত পত্রশিল্প ফিরে আসুক সকলের সান্তর প্রয়াসে। এই ঐকান্তিক কামনায় বাগদেবীর আরাধনায় আপনাকে জানাই হার্দিক আমন্ত্রণ।’ আর নীচে লেখা, ‘বিনীত- মুন্ডলিকা বিদ্যাপীঠের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ।’ ঠিক যে ভাবে পোস্টকার্ডে লেখা হয় সেই ভাবেই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রজাপতি ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এখন পোস্টকার্ডের দিন গিয়েছে। পুরনো দিন ফেরানোর চেষ্টা থেকেই এই উদ্যোগ।’’
চিঠি লেখার জন্য দিন কয়েক যেন দম ফেলার ফুরসত পায়নি সুরশ্রী রায়, সুব্রত দোলুই, স্বাগত রাণারা। দশম শ্রেণির সুরশ্রী, নবম শ্রেণির সুব্রত, নবম শ্রেণির স্বাগতদের কথায়, ‘‘সরস্বতী পুজোর এমন চিঠি লিখতে বেশ ভাল লেগেছে।’’ শুরুতে পোস্টকার্ড লেখার ‘ভার’ দেওয়া হয়েছিল জনা দশেক ছাত্রছাত্রীকে। পরে আরও জনা কুড়ি ছাত্রছাত্রী এ ব্যাপারে উৎসাহ দেখায়। তারাও পোস্টকার্ড লেখা শুরু করে। স্কুলের সহ- শিক্ষক চঞ্চল হাজরার কথায়, ‘‘ছাপানো কার্ডের থেকে খরচ অনেক কমই হল। এক- একটা কার্ড ছাপাতে কম করে পাঁচ টাকা পড়ত। পোস্টকার্ডের দাম ৫০ পয়সা। আমরা পোস্ট অফিস থেকে এক হাজার পোস্টকার্ড কিনে এনেছিলাম। ফলে, পুজোর আমন্ত্রণপত্রের ক্ষেত্রে খরচেরও কিছুটা সাশ্রয় হল।’’
হাতে লেখা একটি আমন্ত্রণ পত্র। নিজস্ব চিত্র
একটা সময় ছিল যখন ডাকহরকরারা সুতলি বাঁধা চটের বস্তা নিয়ে ঘুরতেন। খাম- পোস্টকার্ড কত কী থাকত সেই বস্তার মধ্যে। পোস্টকার্ডে বড় বড় করে ঠিকানা লেখা থাকত। ডাক- টিকিট সাঁটানো থাকত। এ সব এখন যেন অতীত। নানা প্রান্তে ছড়িয়ে- ছিটিয়ে থাকা ডাকবাক্সগুলোই বলে দেয়, সময় দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে। ছুটছে তড়িৎ- গতিতে! স্কুলের পোস্টকার্ড লিখেছে দেবজিৎ রায়, রঞ্জন দোলুইরাও। একাদশ শ্রেণির রঞ্জন, নবম শ্রেণির দেবজিতের কথায়, ‘‘এই প্রথম এত চিঠি লিখলাম। ভাল লেগেছে। পরের বছরও চিঠি লিখতে চাই।’’ স্কুলের সহ- শিক্ষক চঞ্চলের কথায়, ‘‘এখন চিঠি লেখার ক্ষেত্রে আগের সেই উৎসাহ নেই। আমরা ওই উৎসাহটাও ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy