Advertisement
E-Paper

টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে মা-হারা ছানাদের

দিন সাতেক ধরে এভাবেই কোলঘাটের সাগরবাড় এলাকার সারদাবসান গ্রামে ন’টি ছানার দেখভাল করছে কয়েকজন স্কুল পড়ুয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৯ ০১:০০
কুকুরছানাদের দুধ খাওয়াচ্ছে দুই পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র

কুকুরছানাদের দুধ খাওয়াচ্ছে দুই পড়ুয়া। নিজস্ব চিত্র

খড়ের গাদায় গাদাগাদি করে শুয়ে ন’টি কুকুর ছানা। এখনও চোখ ফটেনি। কিন্তু বোতলের দুধের গন্ধ শুঁকে নড়েচড়ে উঠল একটি। মুহূর্তে হ্যাঁচড়প্যাঁচড় করে পৌঁছে গেল সেই বোতলের সামনে। আর ছানাটিকে কোলে তুলে বোতলের সেই দুধ সযত্নে খাইয়ে দিল এক স্কুল পড়ুয়া।

দিন সাতেক ধরে এভাবেই কোলঘাটের সাগরবাড় এলাকার সারদাবসান গ্রামে ন’টি ছানার দেখভাল করছে কয়েকজন স্কুল পড়ুয়া। নিজেদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে কিনে আনছে দুধ। কুকুর ছানাদের জন্য বানাচ্ছে আস্তানা।

সারদাবসান গ্রামে দিন সাতেক আগে একটি পথ কুকুর ন’টি সন্তানের জন্ম দেয়। স্থানীয়েরা জানান, প্রসবের পর মা কুকুরটি আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। মা কুকুরকে অসুস্থ অবস্থায় দেখে স্থানীয় যুবক শেখ সাদেক আলি পশু চিকিৎসক ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু বাঁচানো যায়নি কুকুরটিকে। সে মারা যাওয়ার পর সদ্যোজাত কুকুর ছানাগুলির কথা ভেবে চিন্তিত হয়ে পড়েন সাদেক।

ওই সময় সাদেকের পাশে দাঁড়ায় স্থানীয় সাগরবাড় বি এস বিদ্যাভবনের একাদশ এবং পঞ্চম শ্রেণির দুই ছাত্র শেখ আরেকুল আলি এবং শেখ শোয়েল আলি। টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে বাজার থেকে দুধ, ফিডিং বোতলের নিপল কিনে আনে। টাকা দেন সাদেকও। এর পরে শুরু হয় ছানাদের নিরাপদ আস্তানা গড়ার কাজ। আপাতত এক প্রতিবেশীর খড়ের গাদার নীচে ত্রিপল ঘিরে বানানো হয়েছে ছানাদের বাড়ি। যাতে কেউ তাদের কোনও ক্ষতি করতে না পারে, সে জন্য পাহারাও দেওয়া হচ্ছে।

ফাঁকা ওষুধের বোতলে নিপল লাগিয়ে আরেকুল এবং শোয়েল বানিয়েছে ‘ফিডিং বোতল’। সাতদিন ধরে পড়ার ফাঁকে ফাঁকে দু’জনে ছানাগুলিকে দুধ খাইয়ে যায়। তারা যখন স্কুলে যায়, তখন ছানাদের যত্ন নেয় সাদেক। সাদেক টিউশন করে। সেই টিউশনির টাকা থেকেই দুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। টিফিন খরচের টাকা ছানাদের দেখভালের জন্য দিচ্ছে অন্য দুই পড়ুয়াও। সাদেক বলেন, ‘‘দিনে চারবার নিয়ম করে ন-টি ছানাকে দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। এর জন্য প্রতিদিন গড়ে ৩০ টাকার দুধ আনতে হচ্ছে।’’

সাদেক জানান, ছানাগুলি নিয়ে যাওয়ার জন্য কোলাঘাটের বিডিওকে এবং প্রাণী দফতরের আধিকারিককে ফোন করেছিলেন তিনি। তবে কেউ আসেননি বলে অভিযোগ। আরেকুলের কথায়, ‘‘ওরা একটু বড় না হলে তো আর ছেড়ে দিতে পারি না। অন্য কুকুর তো মেরে দেবে। প্রশাসন ওদের না উদ্ধার করলে আমারই ওদের দুধ খাইয়ে বড় করব।’’ এই বিষয়ে কোলাঘাটের বিডিও মদন মণ্ডল বলেন, ‘‘বিষয়টি সম্পর্কে জানি না।তবে প্রশংসনীয় কাজ। ওই পড়ুয়াদের শাবকগুলির দুধের খরচ দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করছি।’’

চলতি মাসেই কুকুর এবং তার তিন সদ্যোজাতকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে পুলিশ পশ্চিম বর্ধমানের এক মহিলাকে গ্রেফতার করেছিল। মেদিনীপুরেও কুকুরকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগ উঠেছে। ওই নৃশংস ঘটনাগুলি উল্টো পিঠে মানবিকতাও যে রয়েছে, সাদেক, আরেকুল, শোয়েলেরা তারই প্রমাণ।

Students Puppies
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy