Advertisement
১৮ মে ২০২৪
মেদিনীপুর মেডিক্যাল

অস্ত্রোপচারের দিন পেতেই পেরোচ্ছে মাস, ভোগান্তি

আজ, না হয় কাল, এই করে কেটে যাচ্ছে মাসের পর মাস। অস্ত্রোপচার না হওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের রোগীরা।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ অগস্ট ২০১৬ ০০:১৬
Share: Save:

আজ, না হয় কাল, এই করে কেটে যাচ্ছে মাসের পর মাস। অস্ত্রোপচার না হওয়ায় সমস্যায় পড়ছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের রোগীরা।

ভাঙা পা নিয়ে গত তিন মাস মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি দাসপুরের বৈকুণ্ঠপুরের বাসিন্দা অর্চনা দে। একইভাবে, ডান হাতের ভাঙা কব্জি নিয়ে চিকিৎসাধীন ঘাটালের গোপীগঞ্জের বৃদ্ধা নিয়তি প্রামাণিক। চন্দ্রকোনা রোডের সাত বছরের বালিকা সেলিমা শাহর কোমরে ব্যথা। সেও ভর্তি মেদিনীপুর মেডিক্যালে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রোগীদের অস্ত্রোপচার করার কথা বলেছেন চিকিৎসক। কিন্তু, কবে অস্ত্রোপচার হবে, জানে না কেউ।

রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, চিকিৎসকদের অনুরোধ করেও সুফল মেলে না। জোর দিয়ে কিছু বলতে গেলে শুনতে হয়, “রোগীর ছুটি করিয়ে দিচ্ছি। বাড়ি নিয়ে চলে যান। না হলে কলকাতায় যান!” এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ রোগীর আত্মীয়েরা বুধবার মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা ও হাসপাতাল সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজার কাছে অভিযোগ জানান। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অধ্যক্ষ বিভাগীয় চিকিৎসকদের দ্রুত অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করারও নির্দেশ দেন। কিন্তু অস্ত্রোপচার দূরের কথা, উল্টে এই ঘটনায় চিকিৎসকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে রোগীদের ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন বলে রোগীর পরিজনেদের অভিযোগ।

ঘাটালের গোপীগঞ্জের বাসিন্দা নিয়তিদেবীর বউমা নন্দা প্রামাণিকের অভিযোগ, “শাশুড়ি পড়ে গিয়ে হাত ভাঙায় প্রথমে ঘাটাল হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে মেদিনীপুরে পাঠানো হয়। একমাস এখানেই রয়েছি। এখন বলছে শাশুড়িকে বাড়িতে বা কলকাতায় নিয়ে চলে যেতে। এটা কি সম্ভব।” সেলিমার মা আরমা শাহেরও অভিযোগ, “মাসখানেকের বেশি হাসপাতালে পড়ে রয়েছি। এখন বলছে, বাড়ি নিয়ে চলে যাও। ”

এ বিষয়ে মেদিনীপুর শহর কংগ্রেসের সভাপতি সৌমেন খানের অভিযোগ, “রোগীরা পড়ে রয়েছেন। অস্ত্রোপচার হচ্ছে না। কিছু বললেই বলা হয় যন্ত্র খারাপ। জোর করে ছুটি দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘চিকিৎসকরা ‘প্রাইভেট চেম্বার’ নিয়েই ব্যস্ত। হাসপাতালে তাঁরা সময় দেবেন কী করে? এ রকম চললে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলব।”

ক্ষুব্ধ রোগীর পরিজনেরাও। তাঁদের সাফ কথা, “রোগীদের বাড়ি নিয়ে যাব না। দেখি, হাসপাতাল থেকে কী করে তাড়িয়ে দেয়।” কেন এমন ঘটনা ঘটছে? মেদিনীপুর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা বলেন, “হাসপাতাল থেকে কেউ যায়নি, এটা নিশ্চিত।” হাসপাতালের সুপার তন্ময়কান্তি পাঁজা বলেন, “অভিযোগের কথা শুনেছি। উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”

অর্থোপেডিক বিভাগ নিয়ে আগেও নানা অভিযোগ ওঠে। রোগীর পরিজনেদের অভিযোগ, মাসের পর মাস রোগীদের ফেলে রাখা হচ্ছে। কিছুতেই মিলছে না অস্ত্রোপচারের দিন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কলেজের অধ্যক্ষ অর্থোপেডিক বিভাগের চিকিৎসকদের জানিয়ে দিয়েছেন, দ্রুত অস্ত্রোপচারের কাজ শেষ করতে হবে। উপযুক্ত পরিষেবা দিতে হবে। সত্যিই সেই নির্দেশ কতটা কার্যকরী হল, তা অবশ্য সময়ই বলবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dwellers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE