সিপিএম প্রার্থী সরফরাজ খানের সঙ্গে সুশান্ত ঘোষ।
দল তাঁকে প্রার্থী করার ঝুঁকি নেয়নি। তবে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে তাঁরই শরণাপন্ন হতে হল।
তিনি সুশান্ত ঘোষ- এক সময়ের গড়বেতার দাপুটে নেতা। এখম তাঁকে গড়বেতায় আসতে হলেও অবশ্য আদালতের অনুমতি নিতে হয়। ২০১১ সালের পর বুধবার প্রথম দলের গড়বেতা জোনাল কার্যালয়ে এলেন তিনি। কর্মীদের নিয়ে বৈঠকও করেন তিনি। যদিও কার্যালয়ের চার দেওয়ালের মধ্যেই নিজেকে আটকে রাখলেন দাসেরবাঁধ কঙ্কাল কাণ্ডে অভিযুক্ত সুশান্ত ঘোষ। এ বার গড়বেতায় সরফরাজ খানকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। দলের প্রার্থীকে জেতাতে প্রচারে নামবেন না? তাঁর বক্তব্য, ‘‘একগুচ্ছ মামলা রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন আদালতে যেতে হচ্ছে। আদালতে হাজিরা না দিলে তো ভোগে চলে যাব। কোন কাজটা করব।”
এ দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গড়বেতা জোনাল কমিটির সদস্য রয়েছেন ১৪ জন। চারটি লোকাল কমিটি মিলিয়ে মোট সদস্য ৫৯ জন। কিন্তু কর্মী বৈঠকে জনা তিরিশেক নেতাও হাজির ছিলেন! সিপিএম সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এ বার প্রার্থীর হয়ে লাগাতার প্রচারে নামবে সিপিএম। তবে প্রচারের সময় সতর্ক থাকার নির্দেশও দেওয়া হয় কর্মীদের। প্রথমে শহরে প্রার্থীকে নিয়ে প্রচার চালানো হবে।
হঠাত্ এতদিন পর ভোটের সময় দলীয় কার্যালয়ে কেন? সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, গড়বেতার সিপিএম নেতৃত্ব প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বিধায়ক সুশান্ত ঘোষকেই প্রার্থী হিসাবে চেয়েছিলেন। যদি দল তাতে নিতান্তই রাজি না হয় সে ক্ষেত্রে দলের দ্বিতীয় প্রস্তাব ছিল তপন ঘোষ। কিন্তু দল রাজি হয়নি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই দলের প্রাক্তন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের অনুগামী সুশান্ত ঘোষ বা তপন ঘোষকে প্রার্থী করতে রাজি হননি রাজ্য সম্পাদক সুর্যকান্ত মিশ্রের অনুগামী বর্তমান জেলা সম্পাদক তরুণ রায়।
যদিও এ সব মানতে রাজি নন সুশান্তবাবু। তাঁর কথায়, “আমাদের দলে প্রার্থী বড় কথা নয়। সংগঠন বড়।” সুশান্তবাবুকে বৈঠকে ডাকার কারণ কী? গড়বেতার এক জোনাল কমিটির সদস্যের কথায়, “এমনিতেই শাসক দলের ক্রমাগত চাপে দলের নেতা-কর্মীরা দিশেহারা। বেশিরভাগই ঘর ছাড়া। এই সময় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বাদ দিয়ে একজন সাধারণ যুব নেতাকে প্রার্থী করায় বেশিরভাগেরই মন ভেঙেছে। তাই কর্মীদের কিছুটা চাঙ্গা করতেই সুশান্তবাবু বৈঠক করলেন।”
এখনও সিপিএম প্রচারে নামেনি। এলাকায় আতঙ্কও রয়েছে। সুশান্তবাবুর অভিযোগ, “মারধর, ভয় দেখানো, মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো, পিটিয়ে খুন করা - শাসক দল কী না করছে। সবাই তো মানুষ। ভয় থাকবে না!” আর এই কারণেই যে প্রচারে নামতে পারেনি সিপিএম পরোক্ষে তাও স্বীকার করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, “প্রচারে শাসক দলের যে জৌলুস থাকে, তা কী বিরোধীদের থাকে?” তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, ২০১১ সালে বিরোধী থাকলেও তৃণমূল তো জোরকদমে প্রচারে নামতে পেরেছিল? সুশান্তবাবুর জবাব, “ওঁদের সারদার টাকা ছিল। আমাদের তো তা নেই।”
সুশান্ত ঘোষের কথায় অবশ্য পাত্তা দিচ্ছেন না গড়বেতার তৃণমূল প্রার্থী আশিস চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, ‘‘যাঁরা মানুষ খুন করে, তাঁদের মানুষ প্রত্যাখ্যান করে। এখন মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাঁরা কী আর বলবেন। ভোট চাইতে গিয়ে কী বলবেন? মানুষ যে ওদের কথা শুনবেন না তা বুঝতে পেরেই, ভোট চাইতে যাচ্ছেন না।”
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy