E-Paper

উত্তম-স্মৃতির স্টেশনের দাবিদাওয়া উঠুক সংসদে, বাড়ছে প্রত্যাশা

টাটা-খড়্গপুর শাখার সরডিহা স্টেশনটি রয়েছে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া এলাকায়। মানিকপাড়ায় তৈরি হয়েছে একাধিক হোম স্টে।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২৪ ০৯:০৫
সরডিহা স্টেশন।

সরডিহা স্টেশন। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তমকুমারের স্মৃতি বিজড়িত স্টেশনে এখন আর থামে না এক্সপ্রেস ট্রেন। ভরসা শুধু টাটা ও খড়্গপুরের মধ্যে চলা গুটিকয় লোকাল। ঝাড়গ্রামের সেই সরডিহা স্টেশনের সমস্যা নিয়ে নতুন সাংসদ কালীপদ সরেন সংসদের আসন্ন অধিবেশনে সরব হবেন, এমনই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

টাটা-খড়্গপুর শাখার সরডিহা স্টেশনটি রয়েছে ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া এলাকায়। মানিকপাড়ায় তৈরি হয়েছে একাধিক হোম স্টে। পর্যটকরাও আসছেন। কিন্তু বছর তিনেক আগে একমাত্র এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপ উঠে যাওয়ায় পর্যটকদের পাশাপাশি এলাকাবাসীও চরম সমস্যায় পড়েছেন। সরডিহা স্টেশনটিকেও ‘অমৃতভারত’ স্টেশন হিসেবে আধুনিকীকরণের দাবিও করছেন এলাকার বাসিন্দারা। স্টেশন চত্বরে মহানায়কের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবিও উঠেছে।

১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পীযূষ বসুর পরিচালনায় উত্তমকুমার-সুপ্রিয়াদেবী অভিনীত ‘বাঘবন্দি খেলা’ ছবির প্রথম দৃশ্যে রানিপুর নামে যে স্টেশন চত্বরটি দেখা যায়, সেটি এই সরডিহা। ওই ছবিতে একাধিকবার স্টেশনটি দেখা গিয়েছে। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি ছবির শ্যুটিংয়ে মানিকপাড়ায় এসেছিলেন উত্তমকুমার, সুপ্রিয়াদেবী ও পার্থ মুখোপাধ্যায়। দিন চারেক শ্যুটিং হয়েছিল স্টেশন চত্বরে। তখন অবশ্য শেডবিহীন জরাজীর্ণ ফুটওভার ব্রিজ আর নিচু প্ল্যাটফর্ম ছিল। স্থানীয়দের আক্ষেপ, জেলার অন্যতম দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে সামান্য কিছু পরিকাঠামোর পরিবর্তন ছাড়া আর তেমন কিছু হয়নি। বহু আন্দোলন, দরবারের পরে ২০০৪ সালে হাওড়া-টাটা স্টিল এক্সপ্রেসের স্টপ মিলেছিল সরডিহায়। কিন্তু করোনা কালে ২০২১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আচমকা সরডিহা স্টেশন থেকে স্টিল এক্সপ্রেসের স্টপ প্রত্যাহার করে নেয় দক্ষিণ-পূর্ব রেল।

সরডিহা ছুঁয়ে টাটা-খড়্গপুর শাখার লোকাল ট্রেনের সংখ্যাও অপ্রতুল। দিনে মাত্র ৫ জোড়া লোকাল ট্রেন চলে। শনি ও রবিবার চলে তিন জোড়া লোকাল। সরডিহা স্টেশনে স্টিল এক্সপ্রসের স্টপের দাবিতে গত আড়াই বছরে রেল প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি দিয়েছেন এলাকাবাসী। গত বছর এই দাবিতে রাষ্ট্রপতি দৌপদী মুর্মুকেও লিখিতভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন মানিকপাড়া, সরডিহা, চুবকা ও দুধকুণ্ডি অঞ্চলের বাসিন্দারা।

স্টেশনের পাশাপাশি, সরডিহার রাস্তায় ও একটি চালকল চত্বরে উত্তমকুমার ও পার্থ মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে ‘বাঘবন্দি খেলা’র একাধিক দৃশ্যগ্রহণ হয়েছিল। সেই ছবিতে উত্তম অভিনয় করেছিলেন ভবেশ বাঁড়ুজ্জের চরিত্রে। এছাড়াও আরও কয়েকবার অন্যান্য ছবির শ্যুটিংয়ে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন মহানায়ক। মানিকপাড়ার বাসিন্দা দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চঞ্চল দে, রুপালি রানা বলছেন, ‘‘জেলার অন্যতম এই পর্যটন কেন্দ্রের স্টেশনে হাওড়ামুখী একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপ দেওয়া হোক। এক্সপ্রেস ট্রেনের অভাবে সরডিহা, মানিকপাড়া, চুবকা ও দুধকুন্ডি এলাকার যাত্রীরা প্রতিদিন চরম দুর্ভোগের শিকার হন।’’ তাঁদের সওয়াল, কলকাতার টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশন যদি উত্তমকুমারের নামাঙ্কিত হতে পারে, তাহলে সরডিহা স্টেশন চত্বরে মহানায়কের মূর্তি থাকবে না কেন! ‘বাঘবন্দি খেলা’ ছবির কোলাজ দিয়ে স্টেশন চত্বর সাজানোর দাবিও উঠেছে।

ঝাড়গ্রামের সাংসদ কালীপদ সরেন সংসদের অধিবেশনে জেলার রেল সংক্রান্ত বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মুও মানছেন, ‘‘ঝাড়গ্রামে রেলের ন্যায্য দাবিগুলি উপেক্ষিত। সরডিহায় এক্সপ্রেস ট্রেনের স্টপ দরকার। মহানায়কের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবিটিও যুক্তিযুক্ত। আমাদের সাংসদ নিশ্চয়ই মানুষের সমস্যা ও প্রত্যাশা সংসদে তুলে ধরবেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Jhargram Indian Railways

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy