Advertisement
E-Paper

ব্যাঙ্কই নেই পূর্বের ৬৩টি পঞ্চায়েতে

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেটুকু রোজগার করবেন তা সরকারি ব্যাঙ্কে রাখবেন। তাতে গ্রাহকের নিরাপত্তা যেমন সুনিশ্চিত হবে, তেমনই আয় বাড়বে সরকারের। সেই অনুযায়ী শুরু হয়েছে ‘জন-ধন যোজনা’। অনেক প্রচার, অনেক ভাবনা, তারপর হিসাব— কোটি কোটি ভারতবাসী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৫ ০১:১১

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যেটুকু রোজগার করবেন তা সরকারি ব্যাঙ্কে রাখবেন। তাতে গ্রাহকের নিরাপত্তা যেমন সুনিশ্চিত হবে, তেমনই আয় বাড়বে সরকারের। সেই অনুযায়ী শুরু হয়েছে ‘জন-ধন যোজনা’। অনেক প্রচার, অনেক ভাবনা, তারপর হিসাব— কোটি কোটি ভারতবাসী ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করেছেন। কিন্তু প্রদীপের তলায় অন্ধকারের মতো রয়ে গিয়েছে হাজার হাজার গ্রাম। যেখানে বহু কিলোমিটার হেঁটে গেলেও ব্যাঙ্ক মেলে না। সেখানে গিয়ে কাজ করার মতো সামর্থ্য নেই গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দারও। সে সামর্থ্য কখনও শারীরিক, কখনও আবার শিক্ষাগত বা সচেতনতার।

পূর্ব মেদিনীপুর এর ব্যতিক্রম তো নয়ই, বরং ছবিটা যেন অনেক স্পষ্ট হয়ে যায় এখানকার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ঘুরলে। প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাঙ্ক না থাকার ফলে যে বিভিন্ন কাজ কর্মে অসুবিধা হচ্ছে সে কথা স্বীকার করেছেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী জ্যোতির্ময় করও। সম্প্রতি পাঁশকুড়ায় একটি সরকারি অনুষ্ঠানে এসে তিন বলেন, ‘‘আমাদের জেলার প্রায় ৬৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাঙ্ক নেই। যার ফলে নানা সমস্যা রয়েছে। ওই সব গ্রাম পঞ্চায়েত গুলিতে যাতে ব্যাঙ্ক চালু করা যায় সে বিষয়টি রাজ্য সরকার দেখছে।’’

পূর্ব মেদিনীপুরের লিড ডিস্ট্রিক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার অসীমকুমার পণ্ডিতও স্বীকার করেছেন গোটা জেলায় প্রায় ৬৩টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই। তাঁর দাবি, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। ধীরে ধীরে ওই সব গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা গুলিতে শাখা খোলাও হচ্ছে। অসীমবাবুর বক্তব্য, ‘‘তা ছাড়া বিভিন্ন ব্যাঙ্কের কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট তো রয়েছেই। সেখান থেকেও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা যেতে পারে।’’

কিন্তু সমস্যাটা অন্য জায়গায়। কাস্টমার পয়েন্ট-এ সব কাজ একটি ব্যাঙ্কের শাখার মতো করা যায় না। সেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা থাকে। ফলে একসঙ্গে অনেক টাকার প্রয়োজন হলেও তা তোলা যায় না। সমস্যায় পড়েন গ্রাহকরা। জানা গিয়েছে শহিদ মাতঙ্গিনী, কাঁথি ১, ভগবানপুর ২, পটাশপুর ২ ও খেজুরি ১ ব্লকে একটি করে গ্রা ম পঞ্চায়েতে কোনও ব্যাঙ্কের শাখা নেই। চণ্ডীপুর, হলদিয়া, নন্দীগ্রাম ২, রামনগর ১, ভগবানপুর ১, খেজুরি ২, কাঁথি ২ ও এগরা ২ ব্লকে দু’টি করে গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যাঙ্ক নেই। পাঁশকুড়া, ময়না, নন্দকুমার, কাথি ৩, রামনগর ২, পটাশপুর ১ ও এগরা ২ ব্লকে তিনটি করে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাঙ্ক নেই। তমলুক ব্লকে সাতটি, নন্দীগ্রাম ১ ব্লকে ৫টি, সুতাহাটায় ৪টি ও মহিষাদলের ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক নেই।

তবে সেখানে বাসিন্দাদের কিছু সুবিধা দিতে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট (বিজনেস করসপন্ডেন্স) চালু করেছে। সেখানে বাসিন্দারা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। একশো দিনের কাজের প্রকল্প বা বার্ধক্যভাতা, বিধবা ভাতা প্রাপকদের টাকা সেখান থেকে পাওয়া যায়। কিন্তু টাকা জমা নেওয়া ও দেওয়ার পরিমাণ নির্দিষ্ট। কোথাও ২৫হাজার, কোথাও ২০হাজার, কোথাও বা ১০হাজার টাকা উর্ধ্বসীমা। তার বেশি টাকা চাইলেও পাওয়া যাবে না। আবার জমা দিতে চাইলেও তা সম্ভব নয়।

তবে সর্বত্র যে এই সার্ভিস পয়েন্টও রয়েছে তেমন নয়। তমলুকের পিপুলবেড়িয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান রমেশচন্দ্র বেরা জানান, ‘‘আমাদের এলাকায় সম্প্রতি একটি ব্যাঙ্কের কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট তৈরি হয়েছে। সেখানে সব কাজ হয় না। ছ’কিলোমিটার দূরে গিয়ে ব্যাঙ্কের কাজ সামলাতে হয়।’’ সুতাহাটার জয়নগরের প্রধান পার্বতী পাত্রেরও একই বক্তব্য।

নন্দীগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবু তাহের জানান, ‘‘আমাদের ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫টি পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাঙ্ক নেই। ওই সব এলাকাগুলিতে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট খুলে কিছুটা হলেও সুবিধা দিচ্ছে। তবে সেই সুবিধা ব্যাঙ্কিং সুবিধার ১০শতাংশও নয়।’’ নন্দীগ্রামের মহম্মদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শেখ আহমদুল্লা জানান, ‘‘আমাদের এলাকায় কোনও ব্যাঙ্ক নেই। এখানে একটি ব্যাঙ্কের কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট খুলেছে। সেদিন হাজার পাঁচেক টাকা খুব দরকার ছিল। পেলাম না। কর্মী বললেন, টাকা নেই। ছুটতে হল ৬ কিলোমিটার দূরে নন্দীগ্রামে।’’

বাড় উত্তরহিংলি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বারিতবরণ মান্না জানান, ‘‘পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা ব্রজলালচকের একটি ব্যাঙ্কে আসে। আমরা চাই আমাদের এলাকাতেও ব্যাঙ্ক খোলা হোক। তাতে কাজে
সুবিধা হয়।’’

ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি ব্যাঙ্কেরই সার্ভিস পয়েন্ট খোলার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার জন্য বিমা করা থাকে। সেই অঙ্কের বাইরে গিয়ে টাকা রাখা বা লেনদেন করা সম্ভব হয় না। সার্ভিস পয়েন্টের নিরাপত্তাও তেমন নয়। ফলে সমস্যা থেকেই যায়।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক অন্তরা আচার্য জানান ব্যাঙ্কের শাখা খোলার বিষয়টি আমাদের কিছু করার নেই। তবে যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ব্যাঙ্ক নেই সেখানে ব্যাঙ্কের শাখা খোলার বিষয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

bank haldia prime minister narendra modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy