আনন্দপুরে সিপিএমের কার্যালয়ের সামনে পুলিশের নজরদারি ।
জোট আবহে ভয় ভাঙার ছবি রাজ্য জুড়ে। বিভিন্ন জেলায় দীর্ঘদিন পর ভোটের আগে অনেক সিপিএম কার্যালয়ের ঝাঁপ খুলেছে। কেশপুরে অবশ্য ছবিটা অন্য। গত মঙ্গলবার আনন্দপুরে সিপিএমের লোকাল কার্যালয় খোলেন কয়েকজন সিপিএম কর্মী। ওই কর্মীদের অভিযোগ, কার্যালয়ে ঢুকে তাঁরা দেখেন, আসবাবপত্র লণ্ডভণ্ড। জল নেই। বিদ্যুতের লাইনও কেউ কেটে দিয়েছে। তৃণমূলের লোকেদের ভয়ে তাঁরা বাইরেও বেরোতে পারছেন না বলে অভিযোগ।
বিপদ বুঝে পুলিশের দ্বারস্থ হন তাঁরা। পুলিশই জলের ব্যবস্থা করে দেয়। গোলমাল এড়াতে কার্যালয়ের সামনে পুলিশ পিকেটও
বসানো হয়েছে। বিধানসভা ভোটের পর থেকে কেশপুরে সিপিএমের ১৫২টি শাখা কার্যালয়ের সবক’টিই এখনও বন্ধ। ৭টি লোকাল কমিটির কার্যালয়ও বন্ধ। খোলা বলতে শুধু দলের জোনাল কমিটির কার্যালয় জামশেদ ভবন। মঙ্গলবার দুপুরে ঘরছাড়া ১৯ জন কর্মী- সমর্থক বাড়ি ফেরেন। বিধানসভা ভোটের পর থেকেই ঘরছাড়া ছিলেন তাঁরা। এলাকায় ফিরে ওই কর্মীরা লোকাল কমিটির কার্যালয় খোলেন। সিপিএম কর্মীদের অভিযোগ, তাঁরা দলীয় কার্যালয়ে ঢুকে দেখেন কার্যালয়ের সব কিছু লণ্ডভণ্ড। বিদ্যুৎ, জল কিছুই নেই। ওই দিন বিকেলে তপন ভুঁইয়া নামে এক সিপিএম সমর্থক বিদ্যুতের লাইন মেরামত করার জন্য এসেছিলেন। তৃণমূলের লোকজন তপনবাবুকেও মারধর করে বলে অভিযোগ।
সিপিএম কর্মীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুর থেকে তাঁরা কার্যত দলীয় কার্যালয়ে বন্দি অবস্থায় কাটাচ্ছেন। তৃণমূল কর্মীদের হুমকির জেরে তাঁরা বাজার করতেও বেরতে পারছেন না। সিপিএমের লোকাল কার্যালয়ের পাশেই তৃণমূলও একটি নির্বাচনী কার্যালয় খুলেছে। কেশপুরের সিপিএম প্রার্থী রামেশ্বর দোলুই বলেন, “আমাদের অফিসের পাশেই ওরা (তৃণমূল) অফিস করেছে। সেখানে লোকজন জমায়েত করেছে। দলের কার্যালয় থেকে কাউকে বেরোতে দেওয়াই হচ্ছে না।”
সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক মানিকবাবু বলেন, “বন্ধ কার্যালয় খোলার পর থেকেই এখানে অত্যাচার শুরু হয়েছে। তৃণমূলের লোকেরা মাঝে-মধ্যে ঢিল ছুঁড়ছে। জলের লাইনও কেটে দিয়েছে। ফলে, জলের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।” পুলিশের ভূমিকায় অবশ্য তাঁরা সন্তুষ্ট। মঙ্গলবার রাতে জল সঙ্কট চরমে ওঠে। সেই সময় পুলিশই জলের ব্যবস্থা করে দেয়। নির্বাচন কমিশনের নজরদারি থাকার ফলেই পুলিশের এই সহযোগিতা বলে মনে করছে সিপিএমের একাংশ।
তেষ্টা মেটাতে জল আনল পুলিশ
সিপিএমের কেশপুর জোনাল কমিটির সম্পাদক মানিক সেনগুপ্ত বলেন, “মঙ্গলবার রাতে পুলিশকে বলে জল আনাতে হয়। পুলিশ কয়েক বোতল জল দিয়ে যায়। না- হলে খুব সমস্যা হত।” সিপিএম কর্মী উত্তম ঘোষও বলছেন, “পুলিশ- প্রশাসনের আচরণ আগের থেকে ভাল। কিছু ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে।” গোলমাল এড়াতে কার্যালয়ের সামনে পুলিশ নজরদারিও চালাচ্ছে।
ঘটনাক্রমে মঙ্গলবারই রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তা এবং জেলাশাসক- পুলিশ সুপারদের নিয়ে বৈঠক করে কড়া বার্তা দেন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ। সিপিএমের একাংশ মনে করছে, কমিশনের এই কড়া মনোভাবের জেরেই পুলিশ একটু বদলেছে!
সিপিএমের কার্যালয়ে জল দেওয়া নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখর। তাঁর কথায়, “এ নিয়ে কিছু বলব না।” তবে তিনি বলেন, “ওখানে গোলমালের আশঙ্কা ছিল। তাই পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”
অত্যাচারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “কাজ নেই। তাই সিপিএম এ ভাবে কুত্সা- অপপ্রচার করছে!” দলের কেশপুর ব্লক সভাপতি সঞ্জয় পানেরও বক্তব্য, “সিপিএম তো আনন্দপুরে ওঁদের কার্যালয় খুলেছে। সমস্যার কী আছে! জলের লাইন, বিদ্যুতের লাইন দলের কেউ কাটেনি!”
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy