নিষিদ্ধ থার্মোকলে হতশ্রী কলেজ মাঠ। তৃণমূলের সম্মেলন শেষে। — সৌমেশ্বর মণ্ডল
প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ-কাপ-গ্লাস ও থার্মোকলের থালা-বাটি-গ্লাস মেদিনীপুর শহরে পুরোপুরি নিষিদ্ধ। দূষণ ঠেকাতে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভা। অথচ শহরের বুকে সেই তৃণমূলের জেলা সম্মেলনেই দুপুরের ভোজে দেদার ব্যবহৃত হল থার্মোকলের থালা, প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ। শনিবার বিকেলে সম্মেলন শেষে সে সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে মেদিনীপুর কলেজ মাঠের একেবারে হতশ্রী দশা।
এ দিন তৃণমূলের জেলা সম্মেলনের মঞ্চে হাজির ছিলেন মেদিনীপুরের পুরপ্রধান প্রণব বসু, উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস-সহ শহরের তৃণমূল কাউন্সিলরেরা। চোখের সামনে সব দেখেও কি পুরকর্তারা চুপ করে থাকবেন? উপপুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথবাবুর জবাব, “এ ক্ষেত্রে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তবে থার্মোকলের থালা শহর থেকে কেনা হয়নি। কিছু ব্লকের নেতারা কিনে এনেছেন। তাঁরা জানতেন না মেদিনীপুরে থার্মোকলের থালা নিষিদ্ধ। জানলে হয়তো শালপাতার থালাই কিনতেন।”
নিষেধাজ্ঞার কথা কি সত্যি জানা ছিল না? সদুত্তর এড়িয়ে তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির জবাব, “দূষণ ছড়ানোর কোনও প্রশ্ন নেই। সম্মেলন শেষ হতেই সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সাফাই তদারকি করেছি। রবিবারের মধ্যে পুরো মাঠ পরিষ্কার হয়ে যাবে।” উপ-পুরপ্রধান জানান, পুরকর্মীরাও মাঠ সাফাই করবেন। সব থার্মোকলের থালা তুলে নিয়ে গিয়ে শহরের অদূরে ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলা হবে।
এক দিকে দূষণ, অন্য দিকে আবর্জনা জমে নিকাশি অবরুদ্ধ হওয়া ঠেকাতে প্লাস্টিক ও থার্মোকলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মেদিনীপুর পুরসভা। রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গত বছর ১ মে পুরসভা জানিয়ে দেয়, ‘পুর-এলাকায় ৪০ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ, কাপ, গ্লাস, থার্মোকলের থালা, বাটি, গ্লাস বিক্রি, মজুত ও ব্যবহার করা পুরোপুরি নিষিদ্ধ হল। এই আদেশ অমান্য করলে পুর-আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ নির্দেশ কার্যকর করতে অভিযানেও নামে পুরসভা। একের পর এক বাজারে হানা দিয়ে প্লাস্টিক, থার্মোকলের সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়। কয়েকটি দোকান থেকে জরিমানাও আদায় করেন পুর-কর্তারা।
তারপরেও এ দিন তৃণমূলের জেলা সম্মেলনে প্রায় ৩৫ হাজার কর্মীকে ভাত, ডাল, আলুপোস্ত, বাঁধাকপির তরকারি আর চাটনি খাওয়ানোর আয়োজন করা হয় থার্মোকলের থালাতেই। বিরোধীরা এ নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়ছেন না। তাদের প্রশ্ন, তবে কি তৃণমূল আইনের ঊর্ধ্বে! সিপিএমের শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক সারদা চক্রবর্তীর কথায়, “আইন সকলের জন্য এক হওয়া উচিত।”
শহর কংগ্রেস সভাপতি, কাউন্সিলর সৌমেন খান আবার বলেন, “এটা ওদের (তৃণমূলের) সচেতনতারই অভাব। পুরসভাও সব দেখে চুপ থাকতে পারে না।” নিষিদ্ধ প্লাস্টিক-থার্মোকল ব্যবহার করলে শহরবাসীকে জরিমানা দিতে হয়। তাহলে তৃণমূল কেন দেবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন বিরোধীদের একাংশ।
মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস অবশ্য বলেন, “দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। এমন আর হবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy