এ দিকে শুধু ঘাটাল নয়। বাম-বিজেপিকে ধুয়ে মুছে সাফ করে একদা সিপিএমের দুর্গ চন্দ্রকোনা, খড়ার ও ক্ষীরপাই পুরসভাতেও ভাল ফল করেছে তৃণমূল।
কিন্তু প্রশ্ন হল রামজীবনপুরে মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে কী রোখা যেত তৃণমূলকে?
এ বিষয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরা বলেন, “আমার হারলেও চারটি পুরসভাতে শতাংশের নিরিখে খুব একটা পিছিয়ে নেই। ফলে বিরোধী ভোট গুলি একজোট হলে শাসক দল যে হারত, সেটা বলাই বাহুল্য।’’
জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি জগন্নাথ গোস্বামী অবশ্য একধাপ এগিয়ে বলেছেন, “আমরা এ বারে পুরভোটে খুব একটা মাথা ঘামায়নি। যদি প্রচার এবং দলীয় লড়াই ঠিকঠাক হত তবে তৃণমূল অনেক পিছিয়ে থাকত। ঘাটালে একটি ওয়ার্ড তো আমরা দখলও করেছি।’’ আর বিজেপি তাদের ফলাফলে খুশিই। দলের জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা রামজীবনপুরে ভাল ফল করেছি। বাকি পুরসভা গুলিতে (যেখানে প্রার্থী ছিল) ভোট ভালই পেয়েছি।’’
এ দিনের ফলাফল দেখে ঘাটাল পুরভোটে তৃণমূলের সেনাপতি তথা ঘাটালের বিধায়ক শঙ্কর দোলই বলেন, ‘‘আমাদের প্রতি মানুষের সমর্থন প্রমাণিত হল। কোনও দল ভোটে ছাপ্পা মারার অভিযোগও তুলতে পারেনি। রামজীবনপুর বাদে বাকি চারটি পুরসভায় আমরা একক ভাবে শুধু নয়, ভাল অঙ্কের ব্যবধানে নিরুঙ্কুশ ভাবে জয়ী হয়েছি।’’
ভোটে জেতা নিয়ে অবশ্য আশাবাদী ছিলই শাসক শিবির। মঙ্গলবার ফল প্রকাশের পর রামজীবনপুর বাদে বাকি চারটি পুরসভা একক ভাবে দখলের পরই তৃণমূলের মুখে চওড়া হাসি। ঘাটালে ১০ টি আসন পাওয়া নিয়ে তৃণমূল শিবির নিশ্চিত ছিল। কিন্তু খড়ার ও চন্দ্রকোনাতেও বিরোধীরা এ ভাবে ধুয়েমুছে যাবে তা ভাবা যায়নি। চন্দ্রকোনায় গতবারে ৪ টি আসন সিপিএম পেলেও এ বারে তার একটিও ধরে রাখতে পারেনি। একমাত্র নির্দল প্রার্থী গোবিন্দ দাস কোনও দলের সমর্থন না-নিয়েই ফের জয়ী হয়েছেন। বাকি ১১ টি আসনই দখল করে আবেগে আপ্লুত চন্দ্রকোনার তৃণমূল শিবির।
খড়ারেও গতবারে যেখানে ৪ টি আসন পেয়েছিল সিপিএম, সেখানে এ বারে ১ টি আসনেই মুখরক্ষা করেছে তারা। অন্যদিকে তৃণমূল পেয়েছে ৯টি আসন। ক্ষীরপাই শহরও সিপিএমের দুর্গ বলে পরিচিত। বছর খানেক আগে টানা পঁচিশ বছরের পুরপ্রধান দুর্গাশঙ্কর পান সিপিএম ছেড়ে তৃণমূল দলে যোগ দেন। তৃণমূলের রাশ অনেকটাই চলে যায় তাঁর হাতে। তাতেও যে পরিস্থিতি খুব একটা ভাল ছিল না, তা স্বীকার করেছিলেন দুর্গাশঙ্করবাবু নিজেই। মূলত তাঁর প্রচেষ্টাতেই ফাটল ধরেছে বাম দুর্গে। তবু বলা যায় এই শহরেই সিপিএম কিছুটা হলেও অস্তিত্ব ধরে রেখেছে।