পুরবোর্ড গঠন হয়ে গিয়েছে। কোন্দল ঠেকাতে প্রদীপ সরকারকে পুরপ্রধান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছে। এ বার উপ-পুরপ্রধান নির্বাচন করতে গিয়েই ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ অবস্থা তৃণমূলের।
৩৫ আসন বিশিষ্ট খড়্গপুর পুরসভায় তৃণমূল ১১টি আসন পায়। কংগ্রেস ১১টি, বিজেপি ৭টি ও বামেরা ৬টি আসনে জয়ী হয়। কয়েকদিন আগে বিজেপির চার কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় জমি হারাতে শুরু করে বিরোধীরা। তারপরে বাম শিবিরেও ফাটল ধরে। সিপিআইয়ের দু’জন ও বিজেপির আরও এক জন কাউন্সিলর শাসক দলে যোগ দেওয়ায় পরিস্থিতি ঘাসফুলের প্রায় অনুকূলে চলে আসে। বোর্ড গঠন এক প্রকার প্রায় নিশ্চিতই হয়ে যায় তৃণমূলের। বুধবার ১৯-১৫ ভোট পয়ে বোর্ড দখল করে তৃণমূল। যদিও বোর্ড দখলের পরও অস্বস্তি অব্যাহত শাসক দলের।
পুরপ্রধান শপথ গ্রহণ করলেও এখনও উপ-পুরপ্রধান, ৫ জন পুর-পারিষদ ও ৩ জন কাউন্সিলর ইন-চার্জ হিসেবে কাদের নির্বাচন করা হবে, তা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বকে। দলের টিকিটে জয়ী ১১ জন কাউন্সিলরদের মধ্যে প্রদীপবাবু ছাড়া বাকিরা সকলেই এই পদের দাবিদার। এ ক্ষেত্রে অন্য দল থেকে সদ্য তৃণমূলে আসা ৭ জন কাউন্সিলররও মাথাব্যথার কারণ। তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, “পুরবোর্ডের বাকি পদে কাদের নির্বাচিত করা হবে, সে বিষয়ে দলের রাজ্য নেতৃত্বই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।”
দলের আর এক কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘পূর্ণাঙ্গ পুরবোর্ড গঠনে এখনও হাতে এক মাস সময় রয়েছে। তাই অত দ্রুততার কিছু নেই।’’ নিয়ম অনুযায়ী, পুরপ্রধানই উপ-পুরপ্রধান ও পুর-পারিষদের দায়িত্ব ভাগ করে দেন। যদিও এ বিষয়ে খড়্গপুরে সদ্য নির্বাচিত পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “দলের নতুন ও পুরনো কাউন্সিলরদের একসঙ্গে নিয়েই উন্নয়নমুখী পুরবোর্ড গঠন করব এটুকু বলতে পারি। কয়েকদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।”
বিরোধীদের অভিযোগ, বিরোধীদের ভাঙিয়ে যে ভাবে শাসক দল পুরবোর্ড দখল করল, তা কত দিন স্থায়ী হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। রেলশহরে লাগাতার আন্দোলনের রূপরেখা গড়তে শুক্রবার সন্ধ্যায় গোলবাজারের কার্যালয়ে দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে বসে কংগ্রেস। একটি খুনের চেষ্টার মামলায় নাম জড়িয়েছে প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে-সহ কংগ্রেসের তিন কাউন্সিলরের নাম। কলকাতা হাইকোর্ট তাঁদের আগাম জামিনের আবেদন মঞ্জুরও করেছে। দলীয় সূত্রে খবর, শুক্রবারের বৈঠকে কয়েকজন কাউন্সিলর আশঙ্কা প্রকাশ করেন, শাসক দল তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিতে পারে। শনিবার কলকাতায় কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধীর কর্মিসভায় যান রবিশঙ্কর পাণ্ডে, ভেঙ্কট রামনা, সনাতন যাদব, কল্যাণী ঘোষ-সহ ৬ জন কাউন্সিলর। রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “আমাদের আশঙ্কা, এখনও দলের কাউন্সিলরদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হতে পারে। দলের কেন্দ্রীয় ও প্রদেশ নেতৃত্বকে সে কথা জানাতেই কলকাতায় যাচ্ছি। একইসঙ্গে আইনি লড়াইয়ের রূপরেখাও ঠিক করা হবে।” এ দিন খড়্গপুরের কয়েকজন কাউন্সিলরের বাড়ির সামনে থেকে পুলিশ পিকেট তুলে নেওয়া হয়।
এ দিন শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাসও বলেন, “খড়্গপুরে যে নোংরা রাজনীতি হয়েছে তার প্রতিবাদে আন্দোলন চলবে। শহরের প্রতিটি এলাকায় পথসভা করার ইচ্ছা রয়েছে। পুরো কর্মসূচি ঠিক করতে আগামী সপ্তাহে ৩৫টি ওয়ার্ডের কর্মীদের নিয়ে বৈঠকে বসব।” তবে রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “উন্নয়নের কাজে নিশ্চয় পুরবোর্ডের সঙ্গে সহযোগিতা করব। কোনও অনিয়ম দেখলে প্রতিবাদ জানাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy