Advertisement
০৬ মে ২০২৪
৯টি আসনেই জয়ী বামেরা

বেলপাহাড়ির সমবায়ে বিপর্যয় তৃণমূলের

ফের বেলপাহাড়িতে সমবায় সমিতির নির্বাচনে চূড়ান্ত বিপর্যয় ঘটল শাসকদলের। রবিবার ‘কাঁকড়াঝোর লার্জসাইজ মাল্টিপারপাস কো অপারেটিউ সোসাইটি’ (কাঁকড়াঝোর ল্যাম্পস্‌)-এর পরিচালন মণ্ডলীর নির্বাচনে ৯টি আসনের ৮টিতে হেরে গিয়েছেন তৃণমূলপন্থী প্রার্থীরা। একটি আসনে আবার তৃণমূলপন্থীরা কোনও প্রার্থীই দিতে পারেন নি। ওই সমবায় সমিতির ৯টি আসনেই জয়ী বামপন্থীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৫ ০১:০১
Share: Save:

ফের বেলপাহাড়িতে সমবায় সমিতির নির্বাচনে চূড়ান্ত বিপর্যয় ঘটল শাসকদলের। রবিবার ‘কাঁকড়াঝোর লার্জসাইজ মাল্টিপারপাস কো অপারেটিউ সোসাইটি’ (কাঁকড়াঝোর ল্যাম্পস্‌)-এর পরিচালন মণ্ডলীর নির্বাচনে ৯টি আসনের ৮টিতে হেরে গিয়েছেন তৃণমূলপন্থী প্রার্থীরা। একটি আসনে আবার তৃণমূলপন্থীরা কোনও প্রার্থীই দিতে পারেন নি। ওই সমবায় সমিতির ৯টি আসনেই জয়ী বামপন্থীরা।

এর আগে গত মে মাসে বেলপাহাড়ির গিদিঘাটি ল্যাম্পস্‌-এর পরিচালন মণ্ডলীর নির্বাচনে সব ক’টি আসনে প্রার্থী দিয়েও একটি আসনেও জিততে পারে নি তৃণমূল। রবিবার কাঁকড়াঝোর ল্যাম্পস্‌-এর নির্বাচনে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় শাসক দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছে, বেলপাহাড়ির পঞ্চায়েত সমিতি ও দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল নিরঙ্কুশ ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও কী করে এমনটা হল? ভোটের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, সমিতির এই নির্বাচনে মোট প্রাপ্ত ভোটের ৮০ শতাংশ পেয়েছেন বামপন্থীরা। শুধু তাই নয়, এবারই ছিল এই সমবায় সমিতির প্রথম নির্বাচন। ক্ষমতা দখলের জন্য রীতিমতো কোমর বেঁধে ময়দানে ঝাঁপিয়ে ছিলেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তা সত্ত্বেও এমন করুণ ফলের জন্য রীতিমতো হতাশ শাসক-শিবির। তিন মাসের ব্যবধানে পর পর দু’টি সমবায় নির্বাচনে তৃণমূলপন্থী প্রার্থীদের শোচনীয় পরাজয়ের ফলে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা তৃণমূলের নেতৃত্বও। কারণ, সূত্রের খবর, কিছুদিন পরে জঙ্গলমহলে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এমন হতাশাজনক ফলের জন্য বেলপাহাড়ি ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব নেত্রীর তোপের মুখে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন দলের নেতা-কর্মীদের একাংশ।

স্থানীয়ভাবে তৃণমূলের জন সমর্থন কী তাহলে কমছে? খোদ শাসক দলের একাংশ মানছেন, বেলপাহাড়িতে উন্নয়নের নামে যা চলছে তা মোটেই কাম্য নয়। দলবাজি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠছে। সাধারণ মানুষ পঞ্চায়েতের পরিষেবা পাচ্ছেন না। কেবল শাসক দলের ঘনিষ্ঠরা যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ। এই আবহে ঝাড়খণ্ড সীমানাবর্তী এলাকাগুলিতে মাওবাদীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। মাস তিনেক আগে গিদিঘাটি ল্যাম্পস্‌-এর নির্বাচনে তৃণমূলের পক্ষ থেকে গাড়িতে করে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু ভোটের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, দলের সমর্থকরা বামেদের ভোট দিয়েছেন। এবারও সেই ঘটনাই ঘটেছে বলে মনে করা হচ্ছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এটা অশনি সঙ্কেত বলে মনে করছেন তৃণমূলের একাংশ।

কাঁকড়াঝোর ল্যাম্পস্‌-এর সদর কার্যালয় রয়েছে বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত ভীমার্জুন গ্রামে। ২০০৫ সালে এই ল্যাম্পস্‌টি চালু হয়। প্রথমে ছিল অ্যাড হক কমিটি। ল্যাম্পস্‌-এর পরিচালনমণ্ডলীর নির্বাচন প্রত্যেক পাঁচ বছর অন্তর হয়। কিন্তু এলাকায় মাওবাদী নাশকতার কারণে ২০১০ সালে নির্বাচন করা যায় নি। অবশেষে সমবায় নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে কাঁকড়াঝোর ল্যাম্পস্‌-এর নতুন বোর্ড অফ ডিরেক্টরস্‌ বা পরিচালন মণ্ডলীর সদস্যদের নির্বাচনের ধার্য দিন হয় রবিবার। ল্যাম্পস্‌-এর সাধারণ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন পরিচালন মণ্ডলীর সদস্যরা। ৯টি আসনের সব ক’টিতে বামপন্থীরা প্রার্থী দিয়েছিল। তৃণমূলপন্থীরা ৮ টি আসনে প্রার্থী দেয়। ৫৭০ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দেন ৪২১ জন। ৯টি আসনের দু’টি আসন মহিলা সংরক্ষিত। দুই মহিলা-সহ ৯ জন বামপন্থী প্রার্থীই জয়ী হয়েছেন। বামেদের দু’জন প্রার্থী অজিত সিংহ ও অনিল সর্দার সর্বাধিক (৩৫৭) ভোট পেয়েছেন।

সিপিএমের বেলপাহাড়ি জোনাল কমিটির সম্পাদক উদ্ধব মাহাতোর দাবি, “তৃণমূলের প্রতি সাধারণ মানুষের মোহভঙ্গ হচ্ছে। মানুষ এখন বাস্তবটা বুঝতে পেরেছেন। সেই জন্য তৃণমূলের লোকেরাই আমাদের প্রার্থীদের সমর্থন করেছেন।” তৃণমূলের বেলপাহাড়ি ব্লক সভাপতি বংশীবদন মাহাতো বলেন, “যেখানে ভোট হয়েছিল সেই ভীমার্জুন এলাকাটি সিপিএমের হার্মাদ-ঘাঁটি। তা সত্ত্বেও আমরা ৮টি আসনে প্রার্থী দিয়ে লড়াই করেছি। ওই সমবায় সমিতির সাধারণ সদস্যদের বেশিরভাগই সিপিএম সমর্থক। আমাদের সমর্থক সদস্যরা ভোট দিতে যেতেই পারেন নি।”

আশির দশকে জঙ্গলমহলের তিন জেলায় আদিবাসী উন্নয়ন সমবায় নিগমের (টিডিসিসি) নিয়ন্ত্রণাধীন ‘লার্জসাইজ মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি’ বা সংক্ষেপে ল্যাম্পস্‌ গড়ে তোলা হয়। জঙ্গলমহলের আদিবাসীরা বিশেষ মরশুমে কেন্দুপাতা ও শালবীজ সংগ্রহ করেন। আগে কম দামে মহাজনরা আদিবাসীদের কাছ থেকে কেন্দুপাতা কিনে নিতেন। সঠিক দাম না পেয়ে ঠকতেন আদিবাসীরা। সে জন্য সরকারি দরে বনজ সম্পদ কেনার জন্য টিডিসিসি-র নিয়ন্ত্রণে ল্যাম্পস্‌ গুলি চালু করা হয়। প্রতিটি ল্যাম্পস্‌-এর নির্বাচিত ‘বোর্ড অফ ডিরেক্টরস্‌’ রয়েছে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ল্যাম্পস্‌গুলির নিবার্চন হয়। টিডিসিসি ল্যাম্পস্‌গুলিকে টাকা দেয়। সেই টাকায় ল্যাম্পস্‌গুলি এলাকার আদিবাসীদের কাছ থেকে সরকারি দামে সরাসরি কেন্দুপাতা ও শালবীজ কিনে নেয়। এরপর টিডিসিসি-র মাধ্যমে ওই সব বনজ সম্পদ কলকাতা-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের বাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য ল্যাম্পস্‌ থেকে সদস্যদের ব্যক্তিগত ঋণও দেওয়া হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Trinamool Belpahari jangalmahal jhargram
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE