ফের ছেলেধরা সন্দেহে দু’জনকে গণপিটুনি দেওয়ার অভিযোগ উঠল। সঙ্গে চলেছে লুঠপাট। এ বারের ঘটনাস্থল খড়্গপুর-২ ব্লকের চকমকরামপুর।
বৃহস্পতিবার রাতে চকমকরামপুর অঞ্চলের দক্ষিণগেড়িয়া গ্রামে একটি গাড়ি আটকায় স্থানীয়রা। ওই গাড়ির পিছনে তেঁতুলমুড়ির দিক থেকে ধাওয়া করে আসছিলেন বেশ কিছু মানুষ। দক্ষিণগেড়িয়ায় গাড়ি আটকানোর পরে তা থেকে টেনে নামানো হয় পাঁশকুড়ার বাসিন্দা সৌমিত দাস ও গাড়ির চালককে। তারপর শুরু হয় বেধড়ক মারধর। মারধর চলাকালীন সৌমিতের ল্যাপটপ, মোবাইল, ঘড়ি-সহ গাড়িতে থাকা বেশ কিছু সামগ্রী খোওয়া যায় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামলায়। প্রহৃত দু’জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। ততক্ষণে অবশ্য ভিড় পাতলা হয়ে গিয়েছে। তবে এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে মঙ্গল বাস্কে ও পরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শুক্রবার ধৃতদের মেদিনীপুর আদালতে হাজির করা হলে ৭ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে খোওয়া যাওয়া সামগ্রী এখনও পাওয়া যায়নি।
দিন পনেরো ধরেই পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার নানা প্রান্তে ছেলেধরা ঘুরে বেড়ানোর গুজব রটিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে সচেতনতা ফেরাতে বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ মাইকে প্রচার করছে। তা-ও পরিস্থিতিতে রাশ টানা যাচ্ছে না।
গত ৬ জুন খড়্গপুর মহকুমারই কেশিয়াড়ির খাজরার আম্বিগেড়িয়ায় ছেলেধরা সন্দেহে একই ভাবে একটি গাড়ি আটকে ওড়িশার তিনজনকে মারধর করা হয়েছিল। শুধু গ্রামাঞ্চল নয়, খড়্গপুর শহরের আয়মা, আরামবাটি, তালবাগিচা এলাকাতেও ছেলেধরা ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে গুজব শোনা যাচ্ছে হামেশাই। বলা হচ্ছে, পায়ে স্প্রিং, হাতে ক্লোরোফর্ম নিয়ে ছেলেধরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। খড়্গপুরের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক ফাল্গুনিরঞ্জন রাজ বলছিলেন, “আমি নিজে বহু গ্রাম পেরিয়ে স্কুলে যাই। তাছাড়া অবসরে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াই। এভাবে গুজব ছড়িয়ে মারধরের ঘটনায় লোকে আতঙ্কে রয়েছে। শুধু মাইকে প্রচার নয়, লাগাতার শিবির করে সচেতনতা বৃদ্ধি ও কড়া পদক্ষেপ করা উচিত প্রশাসনের।”
পাঁশকুড়া থেকে গাড়িতে খড়্গপুরের প্রেমবাজারে আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন বছর তিরিশের সৌমিত। জামনা থেকে বারবেটিয়ার রাস্তায় যাওয়ার সময়ে তেঁতুলমুড়ির কাছে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি ছাগলকে ধাক্কা মারে। সেখানেই কয়েকজন ‘ওই গাড়িতে ছেলেধরা যাচ্ছে’ বলে গুজব রটিয়ে দেয়। তারপর দক্ষিণগেড়িয়ায় গাড়ি আটকে চলে মারধর ও লুঠপাট। খড়্গপুর গ্রামীণ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন সৌমিত। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সুভাষ সেন বলেন, “ছেলেধরা যাচ্ছে বলে বহু মানুষ ওই গাড়িটির পিছু নিয়েছিলেন। তারপর এ ভাবে মারধর করা হয়েছে। খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।”
এ প্রসঙ্গে খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশীর আশ্বাস, “আমরা এ ক্ষেত্রে কড়া পদক্ষেপ করছি। যেখানে এমন গুজব ছড়াচ্ছে, সেখানে মাইকে সচেতনতা প্রচার চলছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy