Advertisement
১১ মে ২০২৪

অকাল দোলে মাতল বাঁশতলা

চৈত্রের চড়চড়ে রোদ। হারমোনিয়াম গলায় ঝুলিয়ে একদল কচিকাঁচাকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম পরিক্রমায় বেরিয়েছেন পেশায় শিক্ষক রাজীব দাস ও তাঁর বন্ধুবান্ধবরা। রবি ঠাকুরের ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগল যে দোল’-এর সুরে রোদের আঁচ ভুলে পথে নেমেছেন গ্রামের ছেলে-বুড়োরাও।

স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে রাজীব। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে রাজীব। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০০:২২
Share: Save:

চৈত্রের চড়চড়ে রোদ। হারমোনিয়াম গলায় ঝুলিয়ে একদল কচিকাঁচাকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাম পরিক্রমায় বেরিয়েছেন পেশায় শিক্ষক রাজীব দাস ও তাঁর বন্ধুবান্ধবরা।

রবি ঠাকুরের ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগল যে দোল’-এর সুরে রোদের আঁচ ভুলে পথে নেমেছেন গ্রামের ছেলে-বুড়োরাও। পরস্পরকে আবির মাখিয়ে বাতাসা খাইয়ে গ্রামের পথে এক্কেবারে উৎসবের মেজাজ! গ্রামের পাশের লাইনে শ্লথগতিতে যাওয়া দুরন্ত ট্রেনের যাত্রীরাও অবাক চোখে দেখছেন অকাল দোলের উৎসব। শনিবার এভাবেই বসন্তোৎসবে মাতলেন ঝাড়গ্রামের বাঁশতলা গ্রামের বাসিন্দারা।

এক সময় মাওবাদীদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই গ্রামের রেল স্টেশনে রাজধানী এক্সপ্রেসকে আটক করেছিল মাওবাদীরা। জঙ্গলমহলের অশান্তি পর্বে একের পর এক খুন, অপহরণ ও নাশকতার সাক্ষী ছিল এই বাঁশতলা। অশান্তি থিতিয়ে যাওয়ার মুখে বছর চারেক আগে বাঁশতলা গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক পদে যোগ দেন নদিয়া থেকে আসা বছর তিরিশের রাজীব দাস।

কিন্তু বাঁশতলায় এসে প্রথমটায় অবাক হয়েছিলেন রাজীব। এ কেমন শৈশব-কৈশোর? যেখানে সুকুমার রায় নেই, অবন ঠাকুর নেই। তখন থেকে স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি, এলাকার কচিকাঁচাদের বন্ধু হয়ে ওঠেন রাজীব। ক্রমে গ্রামবাসীর সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে রাজীবের। রাজীবের মাধ্যমে তাঁর সোশ্যাল নেটওয়ার্কের বন্ধুরাও বাঁশতলার বারোমাস্যা এবং কুমারী প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচিত হয়েছেন।

কলকাতার অশোক সান্যাল, সুমিতা ভৌমিক, অলোক কুণ্ডুর মতো ফেসবুকের বন্ধুরাও এ দিন বাঁশতলায় বসন্তোৎসবে যোগ দেন। আবির উড়িয়ে বাতাসা খাইয়ে গ্রাম পরিক্রমার পরে শালতলায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গ্রামের মহিলারা ঘরোয়া শরবত ও সুজির বরফি দিয়ে অতিথিদের আপ্যায়ণ করেন। ররীন্দ্রনাথের গানে, কবিতায় ও ছড়ায় রঙিন হয়ে ওঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানেও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সঙ্গে চলতে থাকে আবির-খেলা।

রাজীবের পরিকল্পনায় এই উৎসবের যৌথ উদ্যোক্তা ছিল বাঁশতলা জুনিয়র হাইস্কুল ও বাঁশতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অনুষ্ঠানটির সহযোগিতায় ছিল বিশিষ্ট চিত্র-পরিচালিকা শতরূপা সান্যালের সংস্থা‘স্কাড সোসাইটি’। প্রসঙ্গত, শতরূপা সান্যাল পরিচালিত বহু প্রশংসিত বাংলা সিনেমা ‘অন্য অপলা’র কাহিনীকার ও চিত্রনাট্যের লেখক হলেন রাজীব। অকাল দোলের প্রসঙ্গে রাজীবের জবাব, “উৎসবকে বাঁধাধরা দিনে বেঁধে রাখতে চাইনি। এখনও কোকিল ডাকছে। তাপদগ্ধ বসন্তের দিনে ক্লান্তি দূর করার জন্যই এমন উৎসবের আয়োজন।”

দগ্ধদিনেও শরীর জুড়িয়ে দিচ্ছিল ঘন শাল জঙ্গলের দমকা হাওয়া। শালতলায় পূজা, প্রিয়াঙ্কা, রাজ, বিরাজ, নিশীথের মতো স্কুল পড়ুয়ারা গেয়ে ওঠে, ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Holi Banshtala Untimely
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE