Advertisement
০৪ জুন ২০২৪

আসন ফাঁকা, ধুঁকছে ডিএলএড কলেজ

অনেক আসন ফাঁকা থাকায় বিএড কলেজগুলিতে দ্বিতীয় বার ফর্ম পূরণ চালু করতে হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়কে। দুই জেলার অধিকাংশ ‘ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন’(ডিএলএড)-র কলেজগুলিরও একই হাল! অনেক কলেজে মোট আসনের এক তৃতীয়াংশ ভর্তির আবেদনও জমা পড়েনি বলে দাবি।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০০:৪০
Share: Save:

অনেক আসন ফাঁকা থাকায় বিএড কলেজগুলিতে দ্বিতীয় বার ফর্ম পূরণ চালু করতে হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়কে। দুই জেলার অধিকাংশ ‘ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন’(ডিএলএড)-র কলেজগুলিরও একই হাল! অনেক কলেজে মোট আসনের এক তৃতীয়াংশ ভর্তির আবেদনও জমা পড়েনি বলে দাবি। বাধ্য হয়ে আবেদন জমা দেওয়ার সময়ও বাড়ানো হয়েছিল। তারপরেও সব আসন ভরবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অব প্রাইমারি এডুকেশন’ (ডব্ল্যুবিবিপিএ)-র অন্তর্গত সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩৯টি ডিএলএড কলেজ রয়েছে। এরমধ্যে বেসরকারি কলেজ ৩৬টি। বাতি ৩টি সরকারি কলেজ। নিয়ম অনুযায়ী কলেজগুলিকে প্রথমে বোর্ড থেকে আবেদনপত্র কিনতে হয়। ৫০টি আসন বিশিষ্ট কলেজের জন্য ন্যূন্যতম ৩০০টি আবেদনপত্র কিনতে হয়। ৩০০টি আবেদনপত্রের দাম পড়ে ১ লক্ষ টাকা। প্রয়োজনে কোনও কলেজ এর থেকে বেশি আবেদনপত্রও কিনতে পারে। কলেজগুলি পড়ুয়াদের সেই আবেদনপত্র বিক্রি করে। এ বার অনেক কলেজে আসন সংখ্যার অর্ধেক আবেদনপত্রও বিক্রি না হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। যে সকল পড়ুয়া ফর্ম তুলেছেন, তাঁরাও শেষ পর্যন্ত ভর্তি হবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, গোটা দেশে স্কুল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের নীতি-নির্ধারক সংস্থা ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন’ (এনসিটিই)-এর নিয়ম অনুসারে প্রাথমিকে শিক্ষকতার জন্য ডিএলএড ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক।

মেদিনীপুর, সাঁকরাইলের কুলটিকরিতে ‘ঋষি অরবিন্দ ইন্সটিটিউট অব টিচার এডুকেশন’র দু’টি ডিএলএড কলেজে মোট ১৫০টি আসন রয়েছে। যদিও এ বার ওই দু’টি কলেজে অনেক কম আবেদনপত্র বিক্রি হয়েছে বলে দাবি! ওই ডিএলএড কলেজের মালিক মৃণাল বারিকের কথায়, “সরকার ছাত্র পিছু ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে। পরিস্থিতি দেখে ৮০-৯০ হাজার টাকা নিয়েও ছাত্র ভর্তি করে নিতে চাইছি। তাতেও আবেদনপত্র বিকোচ্ছে না!’’ মৃণালবাবুর দাবি, ‘‘কলেজের দেড়শো আসনের জন্য ৩ লক্ষ টাকা খরচ করে বোর্ড থেকে ৯০০ আবেদনপত্র নিতে হয়েছে। অথচ ফর্ম বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০টি। চরম ক্ষতির মুখে পড়েছি।’’

দেশপ্রাণ কলেজ অব টিচার এডুকেশনের তিনটি ডিএলএড কলেজে মোট ১৫০টি আসন। অথচ একশোটিরও কম আবেদনপত্র বিক্রি হয়েছে বলে কলেজ সূত্রে দাবি! কলেজের মালিক অরুণাভ মণ্ডলের কথায়, “খুব খারাপ অবস্থা। প্রাথমিকে নিয়োগ শুরু না হলে আর বাঁচার উপায় নেই। সব কলেজ রুগ্‌ণ হয়ে পড়বে। কলেজ বন্ধ করে দিতে
বাধ্য হব।”

সরকারি কলেজে ডিএলএড পড়ার খরচ তুলনায় কম। যদিও সেখানেও কমবেশি এখই অবস্থা। সরকারি মেদিনীপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ডিএলএড পাঠক্রমে আসন সংখ্যা ৫০। গতবার ১১০০টি আবেদন জমা পড়েছিল। এ বার ফর্ম বিক্রি সাড়ে পাঁচশোতেই আটকে গিয়েছে বলে জানালেন কলেজের টিচার-ইনচার্জ মৃদুলা সরকার। ডিএলএডে ভর্তির ফর্ম কেনা ও জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ২০ জুন। ছাত্র না মেলায় ফের ৩০ জুন পর্যন্ত আবেদন পত্র জমা নেওয়ার দিন বাড়ানো হয়। তারপরেও অনেক আসন পূরণ হয়নি বলে জানা গিয়েছে।

কলেজগুলিতে আসন ভর্তি না হওয়ার কারণ কী? অধিকাংশ লোকের মতে, প্রাথমিকে দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ থাকায় ডিএলএড পড়ার প্রতি আগ্রহও কমছে। ফলে বছর কয়েক আগেও যেখানে আবেদনপত্র তোলার লাইন পড়ে যেত। সেখানে এ বার ডিএলএড কলেজগুলির সব আসন ভর্তি করাই মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইচ্ছে থাকলেও ডিএলএড পড়ার দিকে ঝোঁকেননি গৌরব দাস। তাঁর কথায়, “আমার যা নম্বর তাতে সরকারি কলেজে পড়ার সুযোগ পাব না জানি। লক্ষাধিক টাকা খরচ করে বেসরকারি কলেজে পড়ে দু’বছর সময় নষ্ট করেও চাকরির সুযোগ মিলবে কিনা তা নিয়ে তো প্রশ্ন রয়েছে।’’ একই কথা তাপসী ঘোষ, চিত্তরঞ্জন পালদের মুখেও। তাঁদের কথায়, “চাকরি পাব কিনা তা তো পরের কথা, পরীক্ষায় বসার সুযোগ যে পাব সে নিশ্চয়তা কোথায়। অকারণে টাকা খরচের পাশাপাশি দু’বছর সময় নষ্ট
করব কেন।”

যদিও এ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরার দাবি, ‘‘এখানে বিভিন্ন ডিএলএড কলেজে আসন বেশি থাকায় বেশিরভাগ পড়ুয়াই এই কোর্স করে নিয়েছে। তাই এ বার সব কলেজে আসন ভর্তি হয়নি। এর সঙ্গে নিয়োগের কোনও সম্পর্ক নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vidyasagar university
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE