Advertisement
২১ মে ২০২৪

জল-চুরিতে বাড়ছে সঙ্কট, পুরসভা দর্শক

নিয়ম আছে। তবে নিয়ম না মানাটাই যেন দস্তুর। কোথাও বাড়ির ভিতরেই তৈরি হয়েছে রিজার্ভার। পুরসভার টাইম কলের জল দিয়েই দিব্যি রিজার্ভার ভর্তি করা হচ্ছে।

বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাস্তার টাইম কলের জল। বিবেকানন্দনগরে।

বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাস্তার টাইম কলের জল। বিবেকানন্দনগরে।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ০৮:১২
Share: Save:

নিয়ম আছে। তবে নিয়ম না মানাটাই যেন দস্তুর।

কোথাও বাড়ির ভিতরেই তৈরি হয়েছে রিজার্ভার। পুরসভার টাইম কলের জল দিয়েই দিব্যি রিজার্ভার ভর্তি করা হচ্ছে। কোথাও রাস্তার পুরসভার কল থেকেই পাম্প করে পাইপের মাধ্যমে জল চলে যাচ্ছে বাড়িতে। ফল, কেউ বেশি জল পাচ্ছেন। আবার কারও এক বালতি জল ভরতে প্রাণ জেরবার।

মেদিনীপুর শহরের অনেক এলাকাতেই নিত্যসঙ্গী জল সঙ্কট। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সুভাষপল্লি হোক বা ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের বেনেপাড়া, ২০ নম্বরের জুগনুতলা হোক বা ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের প্রান্তিকনগর— পানীয় জলের সঙ্কট প্রায় সর্বত্র।

শহরে পর্যাপ্ত পানীয় জল সরবরাহ করার মতো পরিকাঠামো পুরসভার নেই। এ ছাড়াও সর্ষের মধ্যেই তো ভূত। নিয়ম অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি পুরসভার টাইম কল থেকে পাম্পের মাধ্যমে জল নিয়ে রিজার্ভার ভর্তি করতে পারেন না। কিন্তু হচ্ছে এর ঠিক উল্টো। রাস্তার কল থেকে পাইপ লাগিয়ে জল চুরি তো চলছেই। এমনকী অনেকে বাড়ির মধ্যে কিছুটা নীচু করে টাইম কল বসাচ্ছেন। ফলে জলের চাপ বেড়ে যাওয়ায় দ্রুত রিজার্ভার ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। পরে পাম্পের মাধ্যমে রিজার্ভার থেকে বাড়ির ছাদে থাকা ট্যাঙ্কে জল তোলা হচ্ছে। সঙ্গে জলের অপচয় তো রয়েছেই। জলের চাপ কম থাকায় উঁচু এলাকার বাসিন্দারা পর্যাপ্ত জল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। টাইম কল দিয়েও সুতোর মতো জল পড়ছে।

মির্জাবাজারের পুলক পাল, প্রান্তিকনগরের তারাশঙ্কর দত্তরা বলেন, “এক বালতি জল ভর্তি করতে আধ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। কখনও আবার জলই পাই না। আবার অনেকে পুরসভার জল রিজার্ভারে ভর্তি করে দিব্যি ব্যবহার করছে।” বাড়ির জলাধারে জল ভরার দাপটে রাস্তার বেশিরভাগ কলেই জল পড়ে সুতোর মতো। বস্তি এলাকায় প্রায়ই জল নিয়ে অশান্তি হয়। তাই এ বার পুরসভা বস্তিতেও জলের সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “কেউ চাইলে তাঁকে জলের সংযোগ দেওয়া উচিত। তাই পুরবোর্ডের এই সিদ্ধান্ত।”

রাজাবাজারের বাসিন্দা জগবন্ধু ঘোষের কথায়, “আমাদের জল আনতে দূরে যেতে হবে। না হলে জলই পাব না। আর অন্যত্র লোকে প্রয়োজনের থেকেও বেশি জল পাবে, এ কেমন বিচার! কেন সঙ্কট থাকবে?” জলের সমস্যা সমাধানে পুর-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, শীঘ্রই ২০০ কোটি টাকার জলপ্রকল্পের কাজ শুরু হবে। তা বাস্তবায়িত হলেই জলসঙ্কট মিটে যাবে। সদ্য তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। ফলে তা করতে ৪-৫ বছর লাগবেই। ততদিন কী জলযন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলবে না? প্রশ্ন উঠছে, কেন জল চুরি, বেআইনিভাবে বাড়িতে জলাধার তৈরি বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাহলেও তো জল সঙ্কটে কিছুটা রাশ টানা যায়। পুর পারিষদ (জল) মৌ রায় বলছেন, “বাড়িতে জলের সংযোগ নিয়ে জলাধারে জল ভর্তি করাটা বেআইনি।”

তাহলে তা বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? অভিযোগ, সবই ভোট রাজনীতি। এটা বন্ধ করতে গেলে শহরজুড়ে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেবে। তার প্রভাব পড়বে ভোটবাক্সে। তাই দায় এড়িয়ে মৌ রায়ের যুক্তি, “এ সব অনেক আগের পুরবোর্ডের সময় থেকেই চলছে। এখন যাতে কেউ বাড়িতে সংযোগ নিয়ে জলাধার তৈরি না করেন সে দিকে কাউন্সিলরদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে!” কল থেকে পাইপ লাগিয়ে জলচুরি বন্ধে পুরসভা অভিযান চালাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। জল অপচয় নিয়ে মানুষকে সচেতন হওয়ার দাওয়াইয়ের কথাও বলছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সচেতনতা বাড়াতে কে উদ্যোগী হবে? পুরসভা নিরুত্তর। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Water crisis Municipality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE