Advertisement
E-Paper

জোটে বিরোধী শূন্য দশা ঘুচবে? প্রশ্ন

সিপিএমের তরফে জোটের বার্তা এক রকম স্পষ্ট। গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে এক জোট হওয়ার আহ্বান জানাতে চলেছে দল। এই পরিস্থিতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে মূলত দু’টো প্রশ্ন। পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে প্রশ্নটা হল, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যে ১৬টি আসন একাই করায়ত্ত করেছিল তৃণমূল, তাতে কি ভাঙন ধরাতে পারবে এই বিরোধী জোট?

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:৪৯

সিপিএমের তরফে জোটের বার্তা এক রকম স্পষ্ট। গণতান্ত্রিক সব শক্তিকে এক জোট হওয়ার আহ্বান জানাতে চলেছে দল। এই পরিস্থিতিতে ঘুরপাক খাচ্ছে মূলত দু’টো প্রশ্ন।

পূর্ব মেদিনীপুরের ক্ষেত্রে প্রশ্নটা হল, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে যে ১৬টি আসন একাই করায়ত্ত করেছিল তৃণমূল, তাতে কি ভাঙন ধরাতে পারবে এই বিরোধী জোট? আর পশ্চিমের ক্ষেত্রে প্রশ্ন, গত বিধানসভা ভোটে যে ১০টা আসন ধরে রেখেছিল, এ বার কি সেই সংখ্যাটা বাড়বে?

ক’দিন আগেও যে সিপিএমের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, এ বার তিনিই তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত সিপিএম নেতা-কর্মীদের দেখতে সটান হাসপাতালে হাজির। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব অবশ্য এই জোট নিয়ে আশাবাদীই। তাদের দাবি, শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দলের সুযোগ নিয়ে সুবিধা পাবে বিরোধীদের জোটই। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সভাপতি আনোয়ার আলি স্পষ্টভাবে বলেন, ‘‘আমরা দলের নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে চলব। সিপিএমের জোট গড়ার সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। কারণ বর্তমান রাজ্য সরকারের নানা অগণতান্ত্রিক কাজ ও তৃণমূলের ফ্যাসিস্ট কার্যকলাপ রুখতে বিরোধীদের জোট জরুরি ছিল।’’ সিপিএমের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির মতে, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাস ও রাজ্য সরকারের নানা কাজে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাই বিরোধীদের জোট প্রয়োজন। তৃণমূল ও বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই করতে দলীয় কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ তৈরি হয়েছে।’’ সিপিআইয়ের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক অশোক দিন্দার কথায়, ‘‘মানুষ চাইছে কংগ্রেসের সঙ্গে বামদলগুলির জোট হোক। আর কংগ্রেসের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি রয়েছে। তাই জোট গড়ার ক্ষেত্রে আমরাও বেশ আশাবাদী।’’

কিন্তু জোট আসলে তাদেরই সুবিধা দেবে বলে আশাবাদী জেলার তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সহ-সভাপতি চিত্তরঞ্জন মাইতি বলেন, ‘‘ সিপিএমের সঙ্গে কংগ্রেসের জোট হলে প্রকৃত কংগ্রেস সমর্থকরা তা সমর্থন করবেনা। তাঁরা আমাদের দলকেই সমর্থন করবে। ফলে জেলায় আমাদের দলের বরং লাভ হবে।’

ছবিটা আবার কিছুটা আলাদা পশ্চিমে। গত কয়েক বছরে পশ্চিম মেদিনীপুরে বামেদের জনসমর্থন ব্যাপক হারে কমেছে। দলের একটা বড় অংশই মনে করে, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে জনসমর্থন বাড়বে। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেলায় বামেদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৪৪ শতাংশ। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েতে কমে হয় ৩৪ শতাংশ। আর ২০১৪ সালের লোকসভায় তা আরও কমে হয় ২৯ শতাংশ। দলেরই এক সূত্রে খবর, গত লোকসভা নিরিখে সবক’টি কেন্দ্রেই বামেদের ভোট কমেছে। গত লোকসভার নিরিখে জেলায় বামেদের প্রাপ্ত ভোট ২৯ শতাংশ। তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ৫১ শতাংশ। বিজেপির ১০ শতাংশ। কংগ্রেসের ৭ শতাংশ। সিপিএমের এক সূত্রের অবশ্য দাবি, ২০১৪ সালের পরিস্থিতি এখন জেলায় নেই। ২০১৬ সালের নির্বাচনে খুব সহজেই বামেরা ৩৫-৩৬ শতাংশ ভোট পেতে পারে।

জোট প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, “দলের অবস্থানের কথা শুনেছি। দেখা যাক কী হয়।” দলের এক জেলা নেতা অবশ্য মানছেন, “আমরা তো শুরু থেকেই চাইছি, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি একজোট হয়ে নির্বাচনে লড়ুক। মানুষ তৃণমূলকে আর চাইছে না। বল এখন কংগ্রেসের কোর্টে।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “আমরা আগেও যা বলেছি। এখনও তাই বলছি। হাইকমান্ড যা সিদ্ধান্ত নেবে, জেলা কংগ্রেস তাকেই মান্যতা দেবে।” দলের এক জেলা নেতার কথায়, “তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষের জোট হয়েই গিয়েছে!”

জোট হলে কি বিজেপির চিন্তা বাড়বে? বিজেপির জেলা সভাপতি ধীমান কোলের জবাব, ‘‘আমরা ওদের নিয়ে এতটুকু চিন্তিত নই! সিপিএম- কংগ্রেসের বন্ধুত্ব মানুষ মানবে না! এ সব সুবিধাবাদী জোট!” তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়েরও কটাক্ষ, “জোটঘোঁট করে তৃণমূলকে কিছু করা যাবে না! মানুষ তৃণমূলের সঙ্গে ছিল। তৃণমূলের সঙ্গেই রয়েছে।” শাসক দলের এক নেতা অবশ্য আড়ালে মানছেন, “বিরোধী শক্তি শক্তিশালী হলে ভাবনা থেকেই যায়!”

TMC Assembly election left congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy