Advertisement
০২ মে ২০২৪

সন্ন্যাসিনীর হাত ধরে বাড়িতে অর্চনা

সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে বা়ড়ি ফিরলেন চন্দনা শাসমল। ভুলে যাওয়া অতীতের অনেকটাই এখন মনে পড়ে তাঁর। গত ছ’বছর কাটিয়েছেন পথে পথে। তারও আগে থেকে শুরু হয়েছিল বিকার।

আদর: মায়ের সঙ্গে বসে শুভদীপ। নিজস্ব চিত্র

আদর: মায়ের সঙ্গে বসে শুভদীপ। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৭ ০১:৩১
Share: Save:

সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে বা়ড়ি ফিরলেন চন্দনা শাসমল। ভুলে যাওয়া অতীতের অনেকটাই এখন মনে পড়ে তাঁর। গত ছ’বছর কাটিয়েছেন পথে পথে। তারও আগে থেকে শুরু হয়েছিল বিকার। এখন স্বামী, ছেলের কথা আবার মনে পড়ে।

উনিশ বছর আগে স্বামীকে ছেড়ে বাপেরবাড়ি ফিরে এসেছিলেন চন্দনাদেবী। কোলে বছর দেড়েকের ছেলে। তখনই কিছু মানসিক বিকার দেখা গিয়েছিল। তাঁর বাবা ঘাটাল শহরের কোন্নগরের বাসিন্দা –ফাদিকর কাজ করতেন ঘাটাল আদালতে। মেয়ের চিকিৎসা করেছিলেন। কিন্তু তেমন লাভ হয়নি। বছর ছয়েক আগে সেই মেয়ে হঠাৎ হারিয়ে গেল। খুঁজেও আর পাওয়া যায়নি চন্দনাকে।

শনিবার সকালে মেয়ে নিজে টোকা দিলেন ঘরের দরজায়। মা অর্চনাদেবী হারানো মেয়েকে দেখে অবাক। চোখের জলেই ঘরে তুলে নিলেন। সেই ঘরের ভিতর দাঁড়িয়ে একুশ বছরের এক যুবক— চন্দনার ছেলে শুভদীপ। এ বার কাঁদলেন চন্দনা। ট্যাংরার এক সেবা প্রতিষ্ঠানের দুই সিস্টারকে বললেন তাঁর ছেলেকে আশীর্বাদ করতে। পুলিশ হাওড়া স্টেশন থেকে উদ্ধার করে ওই প্রতিষ্ঠানেই পৌঁছে দিয়েছিলেন চন্দনাদেবীকে। সেখানেই চিকিৎসা হয়েছে তাঁর। দু’দিন আগে চন্দনাদেবী বাড়ি ফেরার কথা বলেন, জানান ওই দুই সিস্টার।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সূত্রের খবর, বছর পঁচিশ আগে ঘাটাল শহরের চন্দনার সঙ্গে বিয়ে হয় দাসপুর থানার গৌরার বাসিন্দা শ্রীকান্ত শাসমলের। পাঁচ বছরের মধ্যেই ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি ফিরে আসেন চন্দনাদেবী। অচর্নাদেবী বললেন, “তখনই মেয়ে ভুলভাল কথা বলতে শুরু করে। বহু চিকিৎসক দেখিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েকে সুস্থ করতে পারিনি। বছর ছ’য়েক আগে মেয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়।” তিনি জানালেন, স্ত্রী, ছেলেকে দেখতে প্রথম প্রথম শ্রীকান্তবাবু আসতেন শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু পরে তিনি বিয়ে করেছেন। ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তবে এ দিন অন্য সমস্যা। অর্চনাদেবী বলেন, ‘‘ফিরে এসে মেয়ে, জামাইয়ের খোঁজ করছে। কী বলি ওকে?”

চন্দনাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে ওই সেবা প্রতিষ্ঠানের সিস্টাররা বলে দেন কী কী ওষুধ, কখন খেতে হবে। আর মামার বাড়িতে ব়ড় হওয়া শুভদীপ খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েছিল এ দিনের গোটা ঘটনায়। পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘‘রোজ ভাবতাম মাকে একদিন খুঁজে বার করব। আজ মা নিজেই ফিরে এল। এর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Woman Return Home
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE