Advertisement
E-Paper

‘জমি মাফিয়া’ রুখতে পাহারায় প্রমীলারা

ফুটবল নিয়ে মাঠ দাপাচ্ছে কিশোর-যুবকরা। লাঠি হাতে পাহারায় এলাকার মহিলারা। সাধের মাঠ বাঁচানোর জন্য ঘর সংসারের কাজ সামলে পালা করে মাঠ পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় কয়েকশো মহিলা।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০০:২০
মাঠ পাহারায় প্রমীলা বাহিনী। ঝাড়গ্রাম শহরের ভরতপুরে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

মাঠ পাহারায় প্রমীলা বাহিনী। ঝাড়গ্রাম শহরের ভরতপুরে দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

ফুটবল নিয়ে মাঠ দাপাচ্ছে কিশোর-যুবকরা। লাঠি হাতে পাহারায় এলাকার মহিলারা। সাধের মাঠ বাঁচানোর জন্য ঘর সংসারের কাজ সামলে পালা করে মাঠ পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় কয়েকশো মহিলা।

‘জমি মাফিয়া’দের হাত থেকে এলাকার শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী মাঠটিকে বাঁচানোর জন্য কোমর বেঁধে নেমেছেন ঝাড়গ্রাম শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভরতপুর এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় প্রশাসনিক মহলে অভিযোগ জানিয়ে কোনও কাজ না হওয়ায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন শিবানীদেবীরা। তাঁদের অভিযোগ, এলাকার যুবক ভারতীয় সেনাকর্মী নির্মল দাস কার্গিল যুদ্ধে শহিদ হন। নির্মল একসময় এই মাঠেই খেলতেন। নির্মল শহিদ হওয়ার পরে তাঁর নামে প্রতি বছর এই মাঠে ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রায় ৬ হাজার বর্গ ফুটের এই মাঠটিতে শহরের ভরতপুর, বেনাগেড়িয়া, শ্রীরামপুর এলাকার পাশাপাশি, স্থানীয় কন্যাডোবা গ্রামের কিশোর-যুবকরাও নিয়মিত খেলাধুলো করে। মাঠের পাশে রয়েছে ভরতপুর বিবিডি ক্লাব। পর পর পাঁচ বার সরকারি অনুদান পেয়েছে ক্লাবটি। ক্লাবের উদ্যোগে স্থানীয় মাঠে নানা ধরনের খেলাধুলো হয়। ভরতপুরের স্থানীয় মহিলাদের পরিচালনায় সর্বজনীন দুর্গাপুজোটি হয় এই মাঠে।

অভিযোগ, জমির কারবারিরা এখন ভরতপুরের মাঠটি দখল করার জন্য নানা রকম ভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের একাংশের মদত রয়েছে। ঘটনা হল, গত ২৪ অগস্ট জমির কয়েকজন দালাল এসে মাঠটি মাপজোক শুরু করে। মাঠটি রায়তি জমিতে রয়েছে দাবি করে ওই দালালরা জানিয়ে দেন, মাঠের অর্ধেক জমি বিক্রি হয়ে গিয়েছে। এরপরই স্থানীয় বাসিন্দারা কাগজপত্র দেখতে চান। স্থানীয়দের দাবি, জমির কারবারিরা কাগজ দেখাতে পারেননি। স্থানীয় মহিলাদের বাধায় তাঁরা পিছু হঠতে বাধ্য হন। ফের জমির দালালরা এসে বাসিন্দাদের হুমকি দিয়ে যায় বলে অভিযোগ।

স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহিত মাহাতো বলেন, “ছেলেবেলায় এই মাঠে ফুটবল খেলেছি। শহরে খেলাধুলোর জায়গা কমে আসছে। কিন্তু স্থানীয় মহিলারা মাঠটিকে আগলে রেখেছেন।” স্থানীয় সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম জেলাশহর হতে চলেছে। এই সুযোগে শহরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এক শ্রেণির জমি-মাফিয়া। খাস ও দাবিদারহীন রায়তি জমি দখল করে সেগুলি বিক্রি করা হচ্ছে। ভূমি দফতরের একাংশের যোগসাজশে ওই সব জমির কাগজপত্রও তৈরি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। ভরতপুরের মাঠটিকেও এভাবে গ্রাস করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

স্থানীয় মহিলারা জানালেন, জমির কারবারিরা হুমকি দেওয়ায় তাঁরাও পালা করে মাঠ পাহারা দিচ্ছেন। স্থানীয় ভরতপুর বিবিডি ক্লাবের সদস্যদের অভিযোগ, ‘‘প্রশাসনিক মহলে জানিয়েও লাভ হয়নি। তাই স্থানীয় মহিলারা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন।’’ এলাকার প্রাক্তন পুরপিতা নবু গোয়ালা বলেন, “কস্মিনকালে এই মাঠের কোনও মালিক ছিল বলে শুনিনি।” ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান পুরপিতা তৃণমূলের আনন্দমোহন পণ্ডা বলেন, “প্রায় ৭০-৮০ বছর ধরে এই মাঠে খেলাধুলো হচ্ছে। চাই মাঠটিকে রক্ষা করা হোক।”

ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। জমিটা কী অবস্থায় আছে, সেই রেকর্ড দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

Land mafia
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy