Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

শ্রমিকদের আধারে নাম তোলা চলছে ঢিমেতালে

ঢিমেতালে চলছে একশো দিনের প্রকল্পে শ্রমিকদের আধার কার্ডের জন্য নাম তোলা। মাের্চর মধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সব শ্রমিকের আধার কার্ড নথিভুক্ত করার কথা থাকলেও কাজ হয়েছে সিকি ভাগ।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫০
Share: Save:

ঢিমেতালে চলছে একশো দিনের প্রকল্পে শ্রমিকদের আধার কার্ডের জন্য নাম তোলা। মাের্চর মধ্যেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সব শ্রমিকের আধার কার্ড নথিভুক্ত করার কথা থাকলেও কাজ হয়েছে সিকি ভাগ।

জেলায় মোট ২৯টি ব্লক। এই সব ব্লকে শ্রমিক রয়েছেন ১১,২৭,৭৬৫ জন। এর মধ্যে ২,৭৭,০৮০ জন শ্রমিকের আধার কার্ডের নম্বর অথবা আইইডি নম্বর এখনও পর্যন্ত নথিভুক্তকরণ হয়েছে। অর্থাত্‌ মোট শ্রমিকের মধ্যে প্রায় ২৪.৫৭ শতাংশ শ্রমিকের আধার কার্ড নথিভুক্তকরণের কাজ হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ব্লকগুলোকে কাজে গতি আনতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা।

শ্রমিকদের নথিভুক্ত না হলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিডিও বলেন, “মার্চ মাসের মধ্যেই কাজ শেষের কথা ছিল। এখন একশো দিনের কাজ প্রকল্পের সমস্ত তথ্য ‘এমআইএস সিস্টেম’-এ নথিভুক্ত হয়। শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরের পাশে আধার কার্ডের নম্বর নথিভুক্ত হওয়ার কথা। তা না হলে এপ্রিল থেকে মাস্টার রোল জেনারেট করতে সমস্যা হতে পারে। মাস্টার রোল জেনারেট না করলে শ্রমিকেরা কাজ পাবেন কী করে!”

আধার নম্বরের ভিত্তিতে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকির ব্যবস্থা চালু করেছিল কেন্দ্রের পূর্বতন ইউপিএ সরকার। কিন্তু তখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আধার তৈরি না হওয়া বা শিবিরে ডাক না পাওয়ার মতো অভিযোগ ওঠে। নানা মহলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। নানা সমস্যার জেরে তখন গোটা বিষয়টিও ধামাচাপা পড়ে যায়। এখন নরেন্দ্র মোদীর সরকার ফের আধার কার্ড তৈরির উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আধার কার্ডের কাজ ফের শুরু করার আর্জি নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা ইউআইএআই-এর চেয়ারম্যান নন্দন নিলেকানি। তারপর সারা দেশে দ্রুত আধার কার্ড প্রকল্প বাস্তবায়িত করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। মার্চ মাসের মধ্যে এ রাজ্যে পাঁচ বছরের ঊর্ধ্বে সব নাগরিকের বায়োমেট্রিক তথ্যসংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছিল জাতীয় জনগণনা দফতর।

আধার কার্ড তৈরির লক্ষ্যে বিভিন্ন এলাকায় শিবির করে নাগরিকদের বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নাগরিকদের বিভিন্ন তথ্য যেমন মুখের ছবি, চোখের মণির ছবি, আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করা হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৯টি ব্লকের মধ্যে ১৭টিতে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিকদের আধার কার্ডের নম্বর নথিভুক্তকরণের কাজ অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। তুলনায় বাকি ১২টি ব্লকের কাজ ভাল। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এই ১২টি ব্লক হল চন্দ্রকোনা-২, দাসপুর-১, দাসপুর-২, ডেবরা, গড়বেতা-৩, ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুর-২, মেদিনীপুর সদর, নারায়ণগড়, সবং এবং সাঁকরাইল। একশো দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিক সেকেন্দার দালাল, মধু খান, জায়গুন বিবিরা বলেন, ‘‘কাজ না পেলে তো সমস্যা। আধার কার্ড করে নিয়েছি। দিন কয়েক আগে পঞ্চায়েত থেকে ওই কার্ডের নম্বর নিয়েও গিয়েছে। জানিয়েছে, আধার কার্ডের নম্বর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নম্বরের পাশে নথিভুক্ত হবে। না হলে মাস্টার রোলের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে।’’ পাঁচখুরি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান মহম্মদ আকবর খান বলেন, ‘‘দ্রুত সব শ্রমিকের আধার কার্ডের নম্বর নথিভুক্ত করা হবে। এ জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

যে ১৭টি ব্লকে কাজে গতি নেই সেগুলি হল— বিনপুর-১, বিনপুর-২, চন্দ্রকোনা-১, দাঁতন-১, দাঁতন-২, গড়বেতা-১, গড়বেতা-২, গোপীবল্লভপুর-১, গোপীবল্লভপুর-২, জামবনি, কেশিয়াড়ি, কেশপুর, খড়্গপুর-১, মোহনপুর, নয়াগ্রাম, পিংলা এবং শালবনি। এই সব ব্লকগুলোর কারও ৪.০৫ শতাংশ কাজ এগিয়েছে! কারও ৪.৫৫ শতাংশ কাজ এগিয়েছে! কারও বা ৮.১২ শতাংশ কাজ এগিয়েছে! পরিস্থিতি দেখে ব্লকগুলোকে এ কাজে গতি আনার লিখিত নির্দেশও দিয়েছেন একশো দিনের কাজ প্রকল্পের ডিস্ট্রিক্ট নোডাল অফিসার মদনমোহন ভট্টাচার্য। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিডিও-র কথায়, “কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। পরিকাঠামো দুর্বল হলে তো সমস্যা হবেই! তবে সমস্যার সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও করা হচ্ছে।”

জেলার নির্দেশের পর কাজ কতদূর এগোয়, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE