Advertisement
E-Paper

পড়ুয়াদের গল্প-ছড়া লেখা শেখাতে কর্মশালা 

ছবিটা পাল্টাতে উদ্যোগী হল এক স্কুল। মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলে শুক্রবার এক কর্মশালা হল। যেখানে গল্প, ছড়া, কবিতা কী, কী ভাবে এ সব লিখতে হয়, তা শেখানো হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৫
চলছে কর্মশালা। নিজস্ব চিত্র

চলছে কর্মশালা। নিজস্ব চিত্র

ঠাকুরমার ঝুলি থেকে টিনটিন— বছর খানেক আগেও এই সব গল্পের বইয়ে বুঁদ হয়ে থাকত খুদেরা। আর এখন গল্প, ছড়া, কবিতা পড়ার সময় নেই! লেখারও সময় নেই! মোবাইলের স্ক্রিনেই আটকে আছে খুদেদের চোখ! ছবিটা পাল্টাতে উদ্যোগী হল এক স্কুল। মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলে শুক্রবার এক কর্মশালা হল। যেখানে গল্প, ছড়া, কবিতা কী, কী ভাবে এ সব লিখতে হয়, তা শেখানো হয়। ছিলেন মেদিনীপুরের বিশিষ্ট কবি, গল্পকার, ছড়াকারেরা। তাঁরাই স্কুল পড়ুয়াদের এ সব পাঠ দেন।

কেন এই উদ্যোগ? গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলের সহ-প্রধান শিক্ষক প্রলয় বিশ্বাস বলছিলেন, “আজকের দিনে ছেলেমেয়েদের মধ্যে সৃজনশীল গুণাবলির বিকাশের খুব প্রয়োজন। তাই এই আয়োজন। আমরা ছোটবেলায় কত গল্প শুনেছি। লেখারও চেষ্টা করেছি। এখনকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে গল্প পড়া-লেখার ততটা আগ্রহই নেই। অথচ, এই আগ্রহটা ফিরিয়ে আনা জরুরি। এমন কর্মশালাই আগ্রহটা ফিরিয়ে আনতে পারে।” তাঁর কথায়, “একদিনের এই কর্মশালায় হয়তো বিশাল কিছু শিখিয়ে দিতে পারবে না। এটা একটা চেতনা, বোধ গড়ে তোলার প্রয়াস।”

দিন কয়েক পরে গুড়গুড়িপাল হাইস্কুলের হীরক জয়ন্তী বর্ষপূর্তি শুরু হবে। এই উপলক্ষে কর্মশালার আয়োজন বলে স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে। কর্মশালায় যোগ দেওয়ার জন্য শহর-শহরতলির বেশ কয়েকটি স্কুলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছে স্কুলগুলো। কোনও স্কুল থেকে পাঁচ-দশজন পড়ুয়া এসেছে আবার কোনও স্কুল থেকে দশ-বারোজন পড়ুয়া এসেছে।

স্কুলের এই কর্মশালায় এসেছিলেন গল্পকার গোপেশ রায়, বাচিকশিল্পী তারাপদ মাইতি, কবি-ছড়াকার প্রদীপ দেব বর্মন প্রমুখ। গোপেশবাবু বলছিলেন, “এটা ভাল উদ্যোগ। খুব সহজেই গল্প, ছড়া, কবিতা লেখা যায়। এটাকে কঠিন, জটিল বিষয় হিসেবে নেওয়ার প্রয়োজন নেই। আড্ডার ছলে, আন্তরিক ভাবে ভাবতে হবে। গল্প, কবিতা, ছড়া সবই এক সূত্রে বাঁধা।” প্রদীপবাবুর কথায়, “ছাত্রছাত্রীদের সৃজনশীল ও আনন্দময় শিক্ষায় মগ্ন রাখার এই উদ্যোগের প্রশংসা করতেই হয়। স্কুলকে ধন্যবাদ। কোনও কঠিন শব্দ নয়। খুব সহজ শব্দ দিয়েই কবিতা, ছড়া লেখা যায়। ছাত্রছাত্রীদের এটা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ওরা খুব উত্সাহ নিয়েই সব শুনেছে।”

গোপেশবাবু বলছিলেন, “যখন একটি শিশু জন্মগ্রহণ করে তখন নানা রকম শব্দ করে। তার কান্না, তার হাসি, এ সব দিয়ে সে নিজেকে জানাতে চায়। মা বলতে শেখে। এটাই তার প্রথম কবিতা। কবিতা, গল্প লেখার ক্ষেত্রে সমাজকে, সময়কে, লোকাচারকে শিখতে হবে।” তারাপদবাবুর কথায়, “এমন কর্মশালায় থাকতে পেরে নিজেরই খুব ভাল লাগছে।”

পড়ুয়াদের নিয়ে কর্মশালায় এসেছিলেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরাও। মৌপাল দেশপ্রাণ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়ার কথায়, “এই ভাবনাটা সত্যিই অন্য রকম। সেই দিক থেকে এটা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত যে কোনও স্কুল এ রকম একটি কর্মশালার আয়োজন করছে। আমাদের জানা কোনও স্কুলে এ রকম কর্মশালা হয়নি। এতে সামিল হতে পেরেছি। এটা আমাদের কাছে বাড়তি পাওনার মতো।”

চুয়াডাঙা হাইস্কুলের শিক্ষক সুদীপকুমার খাঁড়ার কথায়, “সামাজিক অবক্ষয়ের যুগে সুস্থ গুণাবলির বিকাশে এই ধরনের কর্মশালা নিশ্চিত ভাবে সহায়তা করবে।” চাঁদড়া হাইস্কুলের শিক্ষিকা অন্তরা ঘোষের কথায়, “গল্প, কবিতা, ছড়া সম্পর্কে আমাদের সকলেরই একটা আলাদা অনুভূতি রয়েছে। এটা অনুভূতিটা অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের মধ্যে থাকা জরুরি। এমন কর্মশালা ছাত্রছাত্রীদের সাহিত্যচর্চায় উত্সাহ দেবেই।”

কর্মশালায় যোগ দিয়ে খুশি ছাত্রছাত্রীরাও। চুয়াডাঙা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী জুহিনা হোসেন, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র কাইস আলম বলছিল, “এখানে থাকতে পেরে খুব ভাল লাগছে। অনেক কিছু জেনেছি। শিখেছি। এ বার গল্প, কবিতা লেখা শুরু করব।”

Story Telling Workshop School
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy