Advertisement
০২ মে ২০২৪
ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ

অভিযোগে নামই নেই বহিষ্কৃত টিএমসিপি নেতার

শাসকদলের ছাত্র সংগঠন থেকে তিনি খাতায়-কলমে বহিষ্কৃত। অথচ সেই বহিষ্কৃত নেতার এমন দাপট, যে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় তাঁর নামে পুলিশে অভিযোগ জানানোর সাহস দেখালেন না ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ কর্তৃপক্ষ। সোমবার ঝাড়গ্রাম থানায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাইচাঁদ মাসান্ত যে লিখিত অভিযোগ করেছেন, তাতে টিএমসিপি-র বহিষ্কৃত নেতা সৌমেন আচার্য-সহ কারও নাম নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৪ ০২:৫৪
Share: Save:

শাসকদলের ছাত্র সংগঠন থেকে তিনি খাতায়-কলমে বহিষ্কৃত। অথচ সেই বহিষ্কৃত নেতার এমন দাপট, যে শিক্ষক নিগ্রহের ঘটনায় তাঁর নামে পুলিশে অভিযোগ জানানোর সাহস দেখালেন না ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ কর্তৃপক্ষ। সোমবার ঝাড়গ্রাম থানায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাইচাঁদ মাসান্ত যে লিখিত অভিযোগ করেছেন, তাতে টিএমসিপি-র বহিষ্কৃত নেতা সৌমেন আচার্য-সহ কারও নাম নেই। বহিরাগতেরা কলেজে ঢুকে হস্টেল সুপারকে গালি দিয়েছে, এই মর্মে অভিযোগ। কলেজ চত্বরে নিরাপত্তাও চেয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ।

নিগৃহীত হস্টেল সুপার তথা কলেজের শারীরশিক্ষার শিক্ষক বাদলকুমার জানা গোড়া থেকেই সৌমেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। ১১ নভেম্বর সৌমেন তাঁর কলার ধরে চড় কষাতে যান বলে অভিযোগ। তার পরেও অভিযোগে সৌমেনের নাম নেই কেন? জবাব দেননি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিমাইচাঁদবাবু। এর পরেও কি নৈতিক ভাবে আপনার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদে থাকা উচিত? রাগত স্বরে তিনি বলেন, “আপনার কাছে এর জবাবদিহি করব না। নিয়ম মেনে যা করার তাই করেছি।” বাদলবাবু জানান, পুলিশ জানতে চাইলে তিনি সৌমেনের নাম জানাবেন। তাঁর কথায়, “কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অভিযুক্তের নাম লিখলেন না, বুঝতে পারছি না। পুলিশ আমাকে জেরা করলে সব জানাতে প্রস্তুত। সে দিন সবাই দেখেছে কে আমাকে মারতে গিয়েছিল।” গোটা ঘটনা লিখিত ভাবে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও জানিয়েছেন বাদলবাবু। তিনি নিজে আবার তৃণমূল প্রভাবিত ‘অল বেঙ্গল স্টেট গভর্নমেন্ট কলেজ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর কলেজ ইউনিটের কোষাধ্যক্ষ।

১১ তারিখের ঘটনার পরে বাদলবাবু ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিকাশ ভবনে গিয়ে ডিপিআই নিমাইচন্দ্র সাহার সঙ্গে দেখা করেন। বিকাশ ভবন সূত্রের খবর, সে দিনই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে পুলিশে অভিযোগ করতে বলা হয়েছিল। এ দিন দুপুরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অভিযোগ জানান। তবে নিজে থানায় যাননি। লোক মারফত অভিযোগপত্র ঝাড়গ্রাম থানায় পাঠান। এ প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাননি ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ।

অভিযোগ পেয়ে এ দিনই কলেজে গিয়েছিল পুলিশ। যদিও ব্যস্ত থাকায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা হয়নি। বাদলবাবুও কলকাতায় গিয়েছিলেন। কথা হয়নি তাঁর সঙ্গেও। পুলিশ সূত্রে খবর, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ যে অভিযোগপত্র দিয়েছেন, তাতে এমন কিছু নেই যে তাকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করা যায়। তবে গোটা ঘটনাটি জানতে বাদলবাবুর সঙ্গে কথা বলা হবে। আর অধ্যক্ষের দাবি মেনে আজ, মঙ্গলবার থেকে কলেজের সামনে থাকবে পুলিশ পিকেট।

কলেজ সূত্রের খবর, চাপে পড়েই সৌমেনের নামে অভিযোগ করতে পারেননি কর্তৃপক্ষ। কারণ, টিএমসিপি থেকে বহিষ্কৃত হলেও ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজে দাপিয়ে বেড়ান সৌমেন ওরফে বুড়া। ২০১২-র সেপ্টেম্বরে তৎকালীন অধ্যক্ষ কিশোরকুমার রাঢ়ীকে চড় মারার অভিযোগ ওঠে সৌমেনের বিরুদ্ধে। তখন তিনি টিএমসিপি-র জেলা সহ-সভাপতি। সৌমেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরই উত্তরবঙ্গে বদলি হন কিশোরবাবু। সৌমেনের বিরুদ্ধে পুলিশও তখনও ব্যবস্থা নেয়নি।

এর পরে লরি লুঠ-ভাঙচুরের মামলায় জড়ানোয় সৌমেনকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু কলেজের ভোট থেকে ভর্তির ফর্ম বিলি, ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি, হস্টেলে থাকার সুযোগ পাওয়া সবই নিয়ন্ত্রণ করেন সৌমেন। তাই ১১ তারিখের ঘটনার পরেও বহিষ্কৃত নেতার হয়ে সুর চড়িয়েছে টিএমসিপি। কলেজ চত্বরে হয়েছে বিক্ষোভ।

তৃণমূল সূত্রে খবর, টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি এবং ঝাড়গ্রাম শহর ও জেলা তৃণমূলের একাধিক নেতার প্রশ্রয়েই সৌমেনের এই বাড়বাড়ন্ত। তবে রমাপ্রসাদ এ দিন দাবি করেন, “টিএমসিপি ও তৃণমূলের সঙ্গে সৌমেনের সম্পর্ক নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE