Advertisement
০৪ মে ২০২৪
নেতাই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ

আদালতে পেশ বন্দুক, চিহ্ণিত করলেন সাক্ষী

গুলি চালনার ঘটনার পর তদন্তে নেমে নেতাই থেকে উদ্ধার করা দু’টি বন্দুক এবং প্রায় ৩০ রাউণ্ড কার্তুজ বুধবার আদালতে পেশ করল সিবিআই। বন্দুক দু’টি চিহ্নিত করেন মামলার অন্যতম সাক্ষী সন্দীপ জানা। বুধবার নেতাই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তৃতীয় দিনে সিবিআইয়ের আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এই দু’টি বন্দুকই রায়পাড়া থেকে উদ্ধার হয়।”

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০১৪ ০৮:০৩
Share: Save:

গুলি চালনার ঘটনার পর তদন্তে নেমে নেতাই থেকে উদ্ধার করা দু’টি বন্দুক এবং প্রায় ৩০ রাউণ্ড কার্তুজ বুধবার আদালতে পেশ করল সিবিআই। বন্দুক দু’টি চিহ্নিত করেন মামলার অন্যতম সাক্ষী সন্দীপ জানা। বুধবার নেতাই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের তৃতীয় দিনে সিবিআইয়ের আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “এই দু’টি বন্দুকই রায়পাড়া থেকে উদ্ধার হয়। এগুলো বাঁশ গাছের ঝোপের মধ্যে ছিল। বন্দুক উদ্ধারের পর সিজার লিস্টে আমি সইও করি।” এ দিন দু’টি বন্দুক কাপড়ে মোড়া সিল করা অবস্থায় আদালতে পেশ করা হয়। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালীন বিচারকের অনুমতি নিয়ে সিল খোলা হয়।

গত সোমবার থেকে মেদিনীপুর আদালতে শুরু হয়েছে নেতাই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ। মামলাটি চলছে মেদিনীপুরের বিশেষ জেলা ও দায়রা বিচারক পার্থপ্রতিম দাসের এজলাসে। বুধবার ছিল সাক্ষ্যের তৃতীয় দিন। এদিনও বেলা ১২টা নাগাদ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বুধবার দু’জন সাক্ষ্য দেন। দু’জনই নেতাইয়ের বাসিন্দা। একজন সন্দীপ জানা। অন্যজন দীনবন্ধু পাল। তার আগে এই মামলায় ধৃত ১০ জন অভিযুক্তকে আদালতে হাজির করা হয়। চলে আসেন সিবিআইয়ের আইনজীবী পার্থ তপস্বী, অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী চণ্ডীচরণ মহাপাত্রও। প্রথমে সাক্ষ্য দেন দীনবন্ধুবাবু। সিবিআইয়ের আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা। দিনটা ঠিক মনে নেই। সকাল ৮টা- ৯টা হবে। আমি তখন মাঠে আলু লাগাচ্ছিলাম। দেখি, ৫- ৬টি মোটর সাইকেল গ্রামে ঢুকছে। একটা মোটর সাইকেলেই মনে হয় দু’জন ছিল। বাকিগুলোয় তিনজন করে। মোটর সাইকেলে দলের পতাকাও ছিল।” সিবিআইয়ের আইনজীবী জানতে চান, কোন দলের? নেতাইয়ের ওই বাসিন্দা জানান, “সিপিএম দলের।” দীনবন্ধুবাবু জানান, দিন কয়েক পর ফের ১০- ১৫টা মোটর সাইকেলে করে কয়েকজন গ্রামে আসে। তখন একটি পিক-আপ ভ্যানও ছিল। তখন অবনী সিংহ, তপন দে, চণ্ডী করণ, খলিলউদ্দিন, অনুজ পাণ্ডে, ডালিম পাণ্ডেদের আমি দেখেছি। সকলে রথীন দণ্ডপাটের বাড়িতে ওঠে। পরে গ্রামবাসীদের ডেকে জানায়, ওদের জন্য কিছু কাজ করে দিতে হবে। কী কাজ? সিবিআইয়ের আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে মামলার অন্যতম এই সাক্ষী বলেন, “ওই রান্নাবান্না, রাত পাহারা।” দীনবন্ধুবাবু এ দিন আদালতে জানান, তাঁকেও কাজ করতে হয়েছিল। তাঁর কথায়, “২০১১ সালের ৪ জানুয়ারি আমার ডিউটি পড়ে ছিল। সকালে রথীন দণ্ডপাটের বাড়িতে রান্না করতে যেতে হয়েছিল। সব্জি বিক্রি করতে লালগড় বাজারে গিয়েছিলাম। তাই রান্না করতে যেতে একটু দেরি হয়েছিল। দেরি হওয়ার জন্য ওরা রাগারাগিও করে।” তিনি বলেন, “আমাকে বলা হয়েছিল, বাড়ি থেকে রুটি তৈরি করে আনার জন্য। আমি অবশ্য না বলে দিয়েছিলাম।” তাঁকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবিরে যেতে হয়েছিল বলেও আদালতে জানান দীনবন্ধুবাবু। তিনি বলেন, “৬ জানুয়ারি প্রশিক্ষণে গিয়েছিলাম। আমাদের ওখানে কংসাবতী নদী আছে। তার পাশে। ওখানে অনেক কিছু শেখানো হয়েছিল। ওই দিন আমি ছাড়াও আরও ২০-২৫ জন ছিলেন।” গ্রামবাসীরা এই প্রশিক্ষণেরই প্রতিবাদ করেছিলেন বলে জানান তিনি। তাঁর দাবি, বাড়ির ছেলেরা অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেবে, এটা মায়েরা মেনে নিতে পারেননি।

তিনি বলেন, “৭ জানুয়ারি সকালে লালগড় বাজারে গিয়েছিলাম। বাজারেই শুনি, রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির সামনে অনেক গ্রামবাসী জড়ো হয়েছেন। তারপর বাড়ি ফিরি। এসে দেখি, বাড়ির দরজা বন্ধ। তখন আমিও রথীনের বাড়ির সামনে যাই। জানতে পারি, কয়েকজন গিয়েছেন অবনী সিংহের সঙ্গে কথা বলতে। যাতে অন্তত অস্ত্র প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়। কিছু পরে পূর্ব দিক থেকে গুলির শব্দ শুনি। তারপর রথীনের বাড়ির উপর থেকে গুলি চালনা শুরু হয়। আমার পাশেই ছিল তাপস মণ্ডল। ওর পায়ে গুলি লাগে। তাপসকে নিয়ে দ্বারকানাথ পণ্ডার বাড়ি যাই।” যারা গুলি ছুঁড়েছিল, তাদের ৪ জনকে তিনি ঝাড়গ্রাম জেলে গিয়ে চিহ্ণিত করেন বলেও আদালতে জানান নেতাইয়ের ওই বাসিন্দা। অন্যদিকে, মামলার আরেক সাক্ষী সন্দীপ জানা বলেন, “সেটা ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিক হবে। আমি সেই দিন বাড়িতেই ছিলাম। অবনী সিংহ, জয়দেব গিরি, অনুজ পাণ্ডেরা মোটর সাইকেলে করে আমার বাড়িতে আসে। আমি লুকিয়ে যাই। খোঁজ না- পেয়ে ওরা বাড়িতে বলে, আমি যেন পার্টি অফিসে গিয়ে দেখা করি।” তিনি জানান, রান্নাবান্না- রাত পাহারা এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য সেই সময় ফতোয়া জারি করা হয়েছিল। জানানো হয়েছিল, প্রত্যেক বাড়ির অন্তত একজনকে রান্না করতে যেতে হবে, রাত পাহারা দিতে যেতে হবে, অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে হবে। তিনি বলেন, “এরপর গ্রামের লোকেরা রান্নাবান্না-রাত পাহারা দেওয়ার কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু, গোড়া থেকেই অস্ত্র প্রশিক্ষণে অনেকের আপত্তি ছিল। বিশেষ করে বাড়ির মেয়েদের।” তাঁর কথায়, “৬ জানুয়ারি যখন বাড়িতে ছিলাম, তখন জানতে পারি, অস্ত্র শিক্ষা নিতে গিয়ে আমার পাশের বাড়ির একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছে।” সন্দীপবাবু এ দিন আদালতে জানান, ৭ জানুয়ারি সকালে তিনি মাঠে গিয়েছিলেন। মাঠ থেকে ফিরে দেখেন, বাড়িতে কেউ নেই। জানতে পারেন, সকলে রথীন দণ্ডপাটের বাড়ির সামনে গিয়েছে। এরপর তিনিও রথীনের বাড়ির সামনে যান। সামনে তখন গ্রামবাসীদের জমায়েত। রথীনের বাড়ির ছাদে বন্দুক নিয়ে বেশ কয়েকজন ঘোরাঘুরি করছে। তিনি বলেন, “কিছুক্ষণ পর পূর্ব দিক থেকে গুলির শব্দ শুনতে পাই। পরে রথীনের বাড়ির ছাদ থেকেও গুলি ছোঁড়া শুরু হয়। সবাই ছোটাছুটি শুরু করল। তখন যে যে দিকে পারছে, পালাচ্ছে। শ্যামানন্দ ঘোড়ইয়ের গুলি লাগল। অরূপ পাত্রও গুলিবিদ্ধ হল। সরস্বতী ঘোড়ইয়ের গুলি লাগল। আমি তখন দ্বারকানাথ পণ্ডার বাড়িতে চলে যাই। পরে গুলি ছোঁড়া বন্ধ হতে নদীর ধার দিয়ে নিজের বাড়িতে যাই।” আজ, বৃহস্পতিবার ফের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

netai mamla
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE