Advertisement
০৩ মে ২০২৪

আর হোমে নয়, দেশে ফিরতে চায় দুই তরুণী

বাবার উপর ‘অভিমানে’ ঘর ছেড়েছিল প্রথম জন। ‘ভাল কাজের’ আশায় সীমান্ত পেরিয়ে এই দেশে এসেছিল দ্বিতীয় জন। দু’জনের কারও পক্ষেই সুখের হয়নি সেই অভিজ্ঞতা! যৌনপল্লি থেকে হোম নানা ‘হাত’ ঘুরে, একাধিক ঠিকানা বদলে দু’জনেই এখন চায় ঘরে ফিরতে।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:৪২
Share: Save:

বাবার উপর ‘অভিমানে’ ঘর ছেড়েছিল প্রথম জন। ‘ভাল কাজের’ আশায় সীমান্ত পেরিয়ে এই দেশে এসেছিল দ্বিতীয় জন। দু’জনের কারও পক্ষেই সুখের হয়নি সেই অভিজ্ঞতা! যৌনপল্লি থেকে হোম নানা ‘হাত’ ঘুরে, একাধিক ঠিকানা বদলে দু’জনেই এখন চায় ঘরে ফিরতে।

‘বাড়ি থেকে পালিয়ে’ বছর এগারোর ফতেমা (নাম পরিবর্তিত) বাসে চেপে সোজা চলে এসেছিল ঢাকায়। বরাত জোরে এক পোশাক কারখানায় জুটেও যায় কাজ। সেখানেই এক যুবকের সঙ্গে পরিচয়। সেই ‘শুভাকাঙ্খী’ যুবকই আরও ভাল কাজের লোভ দেখিয়ে ফতেমাকে তুলে দেয় এক মহিলার হাতে। আদতে মেয়ে পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত ওই মহিলা ফতেমাকে বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত পার করে পৌঁছে দেয় এ দেশে। তারপরই ওই দালাল চক্রের মাধ্যমে ফতেমার ঠাঁই হয় মুম্বইয়ের পতিতা পল্লিতে! সেখানে ফতেমার নাম হয় ‘রূপসী’।

প্রায় বছর তিনেক সেখানে আটকে থাকার পর, একদিন সুযোগ বুঝে মুম্বইয়ের পতিতা পল্লি থেকে পালিয়ে ট্রেনে এ রাজ্যে চলে আসে ফতেমা। দিঘার কাছে পথ হারানো ফতেমাকে স্থানীয়রা পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশ তাকে হস্তান্তর করে পূর্ব মেদিনীপুরের চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে। কমিটির নির্দেশেই ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে ফতেমার ঠাঁই হয় তমলুকের নিমতৌড়ির এক স্বেচ্ছাসেবী

সংস্থার হোমে।

কিন্তু, আর হোমে থাকতে চায় না বছর ষোলোর ফতেমা ওরফে রূপসী খাতুন। মা-মাটির টানে সে ফিরতে চায় বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার নিজের গ্রামে। বাবা রিকশা চালক, মা গৃহবধূ। বাড়িতে বাবা-মা ছাড়াও রয়েছেন ভাই আর বোন। বেশ কিছু বছর দেখা হয়নি পরিজনদের সঙ্গে। লাজুক ফতেমা বলে, “এখানে থাকতে একদম ভাল লাগে না। ভীষণ বাড়ি ফিরে যেতে

ইচ্ছে করে!”

ফতেমার মত আর এক বাংলাদেশি কিশোরী পারভিন নাহার (নাম পরিবর্তিত) রয়েছে তমলুকের এই হোমে। নার্গিসের সঙ্গে ‘মিল’ রয়েছে তারও। বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার বারুইখালি থানার এক গ্রামে মামার বাড়িতেই থাকত পারভিন ওরফে গোলাপী খাতুন। লেখাপড়া না জানা পারভিনকেও কাজের লোভ দেখিয়ে সীমান্ত পার করে এ দেশে এনেছিল দালালচক্র। শেষ পর্যন্ত দিল্লি নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে দেয়। সেখানে দু’বছর থাকার পর কলকাতায় ফিরে দিঘায় এসেছিল একজনের সঙ্গে। পুলিশের তল্লাশিতে সেখানকারই এক হোটেল থেকে উদ্ধার হয় পারভিন। ২০১৩ সালের ৯ জুন থেকে পারভিনের ঠাঁই হয় তমলুকের হোম। সে-ও ফিরতে চায় বাংলাদেশে নিজের বাড়িতে। পারভিন বলে, “বাড়ির জন্য মন কেমন করে। বাড়ি যেতে চাই।”

ফতেমা-পারভিন নিজের বাড়ি ফেরার জন্য আবেদন জানিয়েছে জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের কাছে। হোমের পরিচালনার দ্বায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক যোগেশ সামন্ত বলেন, “দুই কিশোরীকে কাউন্সেলিং করে মানসিক ভাবে স্বাভাবিক করার পর ওদের কাছ থেকে ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়। গত নভেম্বর মাসে ওদের বাড়ির ঠিকানা জানার পরেই আমরা ওদের বাড়ি ফেরানোর জন্য রাজ্য সমাজ কল্যাণ দফতরের কাছে আবেদন জানিয়েছি।” জেলা চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটির কাছে আবেদন করেছেন বলে জানান।

জেলা সমাজ কল্যাণ দফতরের আধিকারিক গৌতম দাস বলেন, “ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির নির্দেশে ওই দুই কিশোরীকে তমলুকের হোমে রাখা হয়েছে। চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি ওদের ফেরানোর নির্দেশ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান দিলীপকুমার দাস ওই দুই কিশোরীকে বাংলাদেশে ফেরানোর ব্যাপারে তোড়জোড় চলছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “এ জন্য প্রশাসনিক প্রক্রিয়া চলছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

home ananda mondal bangladeshi teenager
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE