Advertisement
০২ মে ২০২৪
শিক্ষক দিবসে ছন্দে ফিরল মেদিনীপুর কমার্স কলেজ

ইস্তফার সিদ্ধান্ত বদল টিচার ইন-চার্জের

অবশেষে ইস্তফার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেন মেদিনীপুর কমার্স কলেজের টিচার ইন-চার্জ বিবেকানন্দ দাস মহাপাত্র। পরপর দু’দিন কলেজে অশান্তির পরে গত ৩০ অগস্ট দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন বিবেকানন্দবাবু। শুক্রবার তা নিয়ে আলোচনার জন্যই পরিচালন সমিতির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে বিবেকানন্দবাবুকে ইস্তফাপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। তাতেই জট কাটে। বৈঠক শেষে বিবেকানন্দবাবু বলেন, “অনেকেই ইস্তফাপত্র তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

কাজে ব্যস্ত টিচার ইন চার্জ বিবেকানন্দ দাস মহাপাত্র।  —নিজস্ব চিত্র।

কাজে ব্যস্ত টিচার ইন চার্জ বিবেকানন্দ দাস মহাপাত্র। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০২:১৪
Share: Save:

অবশেষে ইস্তফার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেন মেদিনীপুর কমার্স কলেজের টিচার ইন-চার্জ বিবেকানন্দ দাস মহাপাত্র। পরপর দু’দিন কলেজে অশান্তির পরে গত ৩০ অগস্ট দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চেয়ে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতিকে চিঠি দিয়েছিলেন বিবেকানন্দবাবু। শুক্রবার তা নিয়ে আলোচনার জন্যই পরিচালন সমিতির সদস্যরা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে বিবেকানন্দবাবুকে ইস্তফাপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। তাতেই জট কাটে।

বৈঠক শেষে বিবেকানন্দবাবু বলেন, “অনেকেই ইস্তফাপত্র তুলে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এ দিন সমিতির বৈঠকেও একই অনুরোধ জানানো হয়। তাই আমি আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলাম।” পরিচালন সমিতির সভাপতি শ্যামলেন্দু মাইতির কথায়, “ওঁকে (বিবেকানন্দবাবু) ইস্তফাপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছিল। উনি তাতে সাড়া দেওয়ায় আমরা সকলেই খুশি।”

সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরেরই মানিকপাড়া বিবেকানন্দ শতবার্ষিকী কলেজের টিচার ইন-চার্জ টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের চাপে ইস্তফা দিয়েছেন। খোদ শিক্ষামন্ত্রীর অনুরোধেও তিনি সিদ্ধান্ত বদলাননি। তারপর নদিয়ার চাপড়ার বাঙালঝি কলেজের অধ্যক্ষ টিএমসিপির আচরণে ‘অপমানিত’ হয়ে ইস্তফা দেন। তিনি অবশ্য পরে সিদ্ধান্ত বদলান। মেদিনীপুর কমার্স কলেজের ক্ষেত্রেও এ বার সেই একই ঘটনা ঘটল।

মেদিনীপুরের কৈবল্যদায়িনী মহাবিদ্যালয়ের (কমার্স কলেজ) ছাত্র সংসদ রয়েছে ছাত্র পরিষদের (সিপি) দখলে। শহরে একমাত্র এই কলেজেই ছাত্র সংসদের দখল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) হাতে নেই। তাই এই কলেজের ক্ষমতা দখলে মরিয়া টিএমসিপি মাঝেমধ্যে অশান্তি বাধায় বলে অভিযোগ। গত ২৮ ও ২৯ অগস্ট সেই সূত্রেই কমার্স কলেজে সিপি-টিএমসিপি গোলমাল হয়। ২৮ তারিখ দু’টি ছাত্র সংগঠনেরই প্রতিষ্ঠা দিবস ছিল। পতাকা তোলাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাধে। ২৯ তারিখ ছাত্র সংসদের ঘর ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চান টিচার ইন-চার্জ। তবে তাঁর ইস্তফা গৃহীত হয়নি।

বিষয়টি জেনে তৎপর হন খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গত ৩০ অগস্ট সকালে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি শ্যামলেন্দু মাইতির। সব শুনে পার্থবাবু কলেজ খোলা রাখার অনুরোধ করেন। তারপরই কলেজ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাও বিস্তারিত খোঁজখবর নেন। এরপরই টিচার ইন-চার্জের ইস্তফা ঠেকাতে তৃণমূল শিবিরে তৎপরতা শুরু হয়। বিবেকানন্দবাবুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়। দীনেনবাবু আশ্বাস দেন, কলেজে পড়াশোনার পরিবেশ বজায় রাখতে পুলিশ-প্রশাসন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনও কঠোর সিদ্ধান্ত নিলে দলের কেউ হস্তক্ষেপ করবে না বলেও আশ্বাস দেন দীনেনবাবু।

ইতিমধ্যে কলেজ পরিচালন সমিতির বৈঠক ডাকা হয়। এ দিন বৈঠকের শুরুতেই বিবেকানন্দবাবুকে ইস্তফাপত্র প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়। কলেজ সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরার ছবি দেখে গোলমালে জড়িত ছাত্রদের চিহ্নিত করা হবে। তাদের অভিভাবকদের ডেকে সতর্কও করা হবে। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা কমার্স কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য আশিস চক্রবর্তী বলেন, “বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েই আলোচনা হয়েছে। এটুকু বলতে পারি, কোনও অন্যায়কেই প্রশয় দেওয়া হবে না।”

শিক্ষক দিবসের দিনই টিচার ইন-চার্জ ইস্তফার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসায় ছন্দে ফিরেছে মেদিনীপুর কমার্স কলেজ। দিন কয়েকের টানাপড়েনের জেরে কলেজের ছন্দটাই যেন হারিয়ে গিয়েছিল। এদিন থেকে অবশ্য ফের কলেজ ছন্দে ফেরা শুরু করেছে। বিবেকানন্দবাবু নিজের দায়িত্বে বহাল থাকায় খুশি ছাত্র সংগঠনগুলো। সিপির জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুলের দাবি, “টিএমসিপি কর্মীদের আচরণে বিরক্ত হয়েই উনি ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন। গোলমালে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলবে।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা বলেন, “কলেজ স্বাভাবিক ছন্দে ফিরলে তো ভালই। আমরা চাই, যাদের জন্য কলেজে গোলমাল হল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।” টিএমসিপির জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির অবশ্য বক্তব্য, “কমার্স কলেজের ছাত্র সংসদ সিপির দখলে রয়েছে। ওরাই গোলমাল করেছিল। আমরা চেয়েছিলাম, টিচার ইন-চার্জের দায়িত্বে উনিই থাকুন।” এ দিন পরিচালন সমিতির বৈঠকের পর সহকর্মীদের সঙ্গে হাসিঠাট্টায় মাতেন বিবেকানন্দবাবু। তাঁকে চেনা মেজাজে দেখতে পেয়ে সহকর্মীরাও খুশি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

midnapore collegiate school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE