Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ঈদে মাতোয়ারা আট থেকে আশি

উমাকে বিদায় দেওয়ার বিষাদ এখনও কাটেনি। শারদোত্‌সবের আলোয় স্নাত শিল্পশহর হলদিয়ার বিষণ্ণতা কাটিয়ে ঈদের খুশিতে মেতে উঠল আবালবৃদ্ধবণিতা।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৪ ০০:১১
Share: Save:

উমাকে বিদায় দেওয়ার বিষাদ এখনও কাটেনি। শারদোত্‌সবের আলোয় স্নাত শিল্পশহর হলদিয়ার বিষণ্ণতা কাটিয়ে ঈদের খুশিতে মেতে উঠল আবালবৃদ্ধবণিতা।

মাকে বিদায়ের পর নিস্প্রদীপ মণ্ডপ। প্যাণ্ডেল খোলার তাড়াও নেই কারও। দু’দিন আগেও আগেও যে আব্দুল, মতিউর, নুর মহম্মদরা পুজো মণ্ডপে বিভিন্ন দায়িত্ব কাঁধে ছিল শশব্যস্ত। পুজো শেষে তাঁরাই পূজা শেষে হলদিয়ার হেলিপ্যাড মাঠে নমাজের প্রস্তুতির কাজে লেগে পড়েছে।

পুজোর সময়ই ঈদের কেনাকাটা অনেকটা হয়ে গিয়েছে। তাই ঈদুজ্জোহার আগে কেনাকাটার ব্যস্ততা তেমন দেখা যায়নি। তবে ঈদের রকমারি খাবারের দোকানে ভিড় ছিল যথেষ্টই। খাবারের তালিকায় ছিল সিমাই, লাচ্ছা, পায়েস, বিরিয়ানি, কাবাব। সঙ্গে সাজগোজের জন্য আতর, মেহেন্দি কেনা তো আছেই। দু’-তিন বছর পর সুতাহাটার গ্রামের বাড়িতে ফিরেছেন একটি বহুজাতিক কোম্পানির আধিকারিক ইউসুফ আহমেদ। তাঁর কথায়, “মায়ের ডাক শুনব বলে বাড়ি আসি। আমার মায়ের বয়স হয়েছে। ছোটবেলায় উনি যে ভাবে আমাকে ডাকতেন, সেই সুরে এখনও ডাকেন।”

রামনগরের সাকিনা বেওয়া আজও তাঁর ছেলের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। শ্রমিকের কাজে যাওয়া রফিক যদি এ বার বাড়ি আসে। রফিকের বন্ধুরা সাকিনাকে জানিয়েছে, রফিক এ বারও ঈদের দিনে বাড়ি আসবে না। সাকিনা বেওয়া চোখে ভাল দেখতে পান না। তবু ছেলের অপেক্ষাতেই প্রহর কাটে তাঁর। রফিকের বন্ধুরা জানায়, বছর দু’য়েক আগে পথ দুর্ঘটনায় রফিকের মৃত্যু হয়েছে। সে কথা সাকিনাকে জানানো হয়নি।

হলদিয়া বন্দরের কর্মী হাসান ইমাম পরিবার নিয়ে বন্দরের আবাসনে থাকেন। তাঁর কথায়, “আবাসনের অন্য পরিবারের ছেলেমেয়েরা আমাদের বাড়িতে আসে। ঈদে আমরা একাসাথে খুব মজা করি” কুঁকড়াহাটির বাসিন্দা বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুল ইসলাম এ দিন নিজের বাড়ির কাছের মসজিদেই নমাজ পাঠ করেন। আমিনুল বলেন, “এলাকায় একটি কথাই বলি- বইকে হাতিয়ার করলে জাতির উন্নয়ন হবেই। নমাজ পাঠের পর আমরা বিশ্বশান্তির জন্য প্রার্থনা করি।”

দক্ষিণ ভারতে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন সাবিরুল হক। তাঁর কথায়, “আমি এই সময় বাড়ি ফিরি। এ বার পুজো ও ঈদ পরপর পড়ায় সব বন্ধুদের কাছে পাবো, এটাই খুব ভাল।” হলদিয়ার উঠতি বোলার তপসির আলি, ফাইয়াজ খান জানান, ঈদের নমাজে তাঁরা দেশ ও জাতির মঙ্গলকামনা করেছেন। তাঁদের কথায়, “দেশে শান্তি থাকলে উন্নতি হতে বাধ্য।” মেরিনা সুলতানা মহিষাদল কলেজের ছাত্রী। মেরিনা জানান, বাবা টিউশন করে আমাকে পড়ান। বাবা বুঝিয়েছেন, শিক্ষা মানুষকে উদার করে। প্রতি বছর ঈদের দিনে আমি নিজে একটি শপথ নিই। এ বার ভাল করে পড়াশোনা করার শপথ নিয়েছি। এ দিন মহিষাদলের কুমারপুর, কাঞ্চননগর, গাজিপুর, গেঁয়োখালি, নামালাখ্যায়, তেরাপেখ্যায় বড় নমাজ অনুষ্ঠিত হয়। ঈদ উপলক্ষে নাইকুণ্ডী বাজারে এ দিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। ঈদ উপলক্ষে হলদিয়ার জয়নগর, ডি-ঘাসিপুর , ব্রজলালচক, কুকড়াহাটি, খঞ্জনচক এলাকাতেও প্রথামাফিক নমাজ পাঠ হয়।

তমলুক শহর-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সর্বত্র শান্তিপূর্ণভাবে ঈদুজ্জোহা পালিত হল। ঈদ উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকেই জেলার সর্বত্র মসজিদে নমাজে যোগ দেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। এ দিন সকালে তমলুক শহরের লালদিঘির ঈদগাহ মসজিদ, স্টিমারঘাটের জুম্মা মসজিদ, মানিকতলা, মীরবস্তি, বলবল বস্তি, চোপদার পাড়া এলাকায় নমাজ পড়া হয়। জেলার নন্দীগ্রাম, পাঁশকুড়া, মেচেদা, কোলাঘাট, নন্দকুমার, চণ্ডীপুর, ময়নায় বিভিন্ন মসজিদে নমাজ পাঠে যোগ দেন স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান জানান, নন্দীগ্রামের সামসবাদ, গড়চক্রবেড়িয়া, দাউদপুর, মহম্মদপুর-সহ সর্বত্র পড়া হয় ঈদের নমাজ। ঈদ উপলক্ষে সবাই মিলে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার প্রার্থনা করা হয়েছে। এ দিন পাঁশকুড়া স্টেশনবাজার, পুরাতন বাজার, চাঁপাডালি, রাধাবল্লভচক, গোবিন্দনগর, কনকপুর, প্রতাপপুরের মসজিদে ঈদের নমাজ হয়। মেচেদার শান্তিপুর, কোলাঘাটের দেনান, ভোগপুর, আমলহাণ্ডা, সাগরবাড়, সিদ্ধা, জিয়াদা, গোপালনগর, নন্দকুমারের মহম্মদপুর, পরমহংসপুর, নামালক্ষ্যা, চণ্ডীপুরের চৌখালি, ময়নার গড়সাফাত, তমলুক ব্লকের চনশ্বরপুর, দরজা, নিমতলা প্রভৃতি এলাকায় মসজিদে ঈদের নমাজ পাঠ হয়। জেলার সর্বত্র শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ পালিত হয়েছে বলে জানান পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার সুকেশকুমার জৈন।

উত্‌সাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সোমবার সারা রাজ্যের সঙ্গে কাঁথি মহকুমাতেও ঈদুজ্জোহা পালিত হল। কাঁথি শহরের দারুয়া, হরিপুর, খাগড়াবনি, ধনদিঘি, জালালখাঁবাড়, ধর্মদাসবাড় ছাড়াও নামাল, গিমাগেড়িয়া মাজনা মীরগোদা, রানিবসান, দেউলিহাট, কালিন্দী অঞ্চলের মসজিদে ভিড় ছিল নজরে পড়ার মতো। কাঁথির এসডিপিও ইন্দ্রজিত্‌ জানিয়েছে, অনুষ্ঠান ঘিরে এ দিন কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর, খড়্গপুর শহরেও ঈদের নমাজ পাঠ হয়। শুধু শহর কেন, কেশপুর, গড়বেতার মতো মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাতেও একইভাবে আনন্দে মেতে উঠেছেন সকলে। বাড়িতে নানা ধরনের খাবারের আয়োজন তো রয়েছেই, তার সঙ্গে যাঁরা কিছুটা অর্থশালী তাঁরা পরেছেন নতুন পোশাক। সারাদিনই আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাড়ি যাওয়াও চলছে। সব মিলিয়ে উত্‌সবে মেতে উঠল সকলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

eid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE