এইচআইভি সংক্রমিত রোগীদের বাড়ি তৈরি করে দিতে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ২০১৫-’১৬ আর্থিক বছরে ইন্দিরা আবাস যোজনায় একশোরও বেশি এইচআইভি সংক্রমিতকে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে জেলা পরিষদের। যাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়, এ ক্ষেত্রে তাঁদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। একাধিক সংস্থার মাধ্যমে এইচআইভি সংক্রমিতদের নামের তালিকা পেয়েছে জেলা পরিষদ। ওই তালিকা বিডিওদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ বার বিডিওরা সব দিক খতিয়ে দেখে উপভোক্তাদের চিহ্নিত করবেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরী বলেন, “সরকারি নির্দেশ রয়েছে যাঁরা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত, ইন্দিরা আবাসের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। একাধিক সংস্থা মারফত এইচআইভি সংক্রমিতদের নামের তালিকা এসেছে। ওই তালিকা বিডিওদের পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।” জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার কথায়, “এইচআইভি সংক্রমিত রোগীদের বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার উদ্যোগটা খুবই ভাল।”
গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির জন্যই ইন্দিরা আবাস প্রকল্প রয়েছে। আগে বাড়ি পিছু ৪৮,৫০০ টাকা বরাদ্দ হত। এখন বাড়ি পিছু ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। আগে দুই কিস্তিতে টাকা দেওয়া হত। এখন তিন কিস্তিতে টাকা দেওয়া হয়। গত আর্থিক বছর, অর্থাৎ ২০১৩-’১৪ সালে জেলায় ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে ১৫ হাজার ৮০৫টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল। চলতি আর্থিক বছরে অর্থাৎ ২০১৪-’১৫ সালে সেখানে ৩৬,৯৮৯টি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে।
জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “এইচআইভি সংক্রমিতদের চিকিৎসার জন্য সরকারি উদ্যোগে সব রকম ব্যবস্থাই রয়েছে। চিকিৎসা শুরু হওয়ার ফলে রোগটাও আর ছড়াবে না। সংক্রমিতদের মধ্যে যাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়, সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পেলে তাঁরা উপকৃতই হবে।” জানা গিয়েছে, আপাতত ১৩২ জনের নামের একটি তালিকা তৈরি পেয়েছে জেলা পরিষদ। যাঁরা এইচআইভি সংক্রমিত এবং যাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এই তালিকা খতিয়ে দেখেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
এডস্ সচেতনতায় প্রচার যে হয় না তা নয়। তবে ওই প্রচারই সার। পরিসংখ্যান বলছে, গত কয়েক বছর ধরেই পশ্চিম মেদিনীপুরে এইচআইভি সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৪ সালের হিসেব অনুযায়ী জেলায় এইচআইভি সংক্রমিত রয়েছেন ১,৬০০ জন। এর মধ্যে প্রায় ৯০০ জনই ঘাটাল মহকুমার বাসিন্দা। দাসপুর-১, দাসপুর-২, ঘাটাল প্রভৃতি ব্লকেই এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি। কারণ, এই সব এলাকার প্রচুর মানুষ কাজের জন্য ভিন্ রাজ্যে যান। মাস কয়েক সেখানে থেকে আবার ঘরে ফেরেন। এঁদের কেউ সোনার কাজ করেন, কেউ বা শ্রমিক। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, “দেখা গিয়েছে, যে সব এলাকার যুবকেরা কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে চলে যান, মাস কয়েক সেখানে থেকে আবার ঘরে ফেরেন, সেই সব এলাকাতেই এইচআইভি সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি। অর্থাৎ, কাজের খোঁজে যাঁরা ঘর ছাড়েন, তাঁদেরই কয়েকজন এইচআইভি-র বাহক হয়ে ফিরে আসেন।” জেলায় যে সংখ্যক এইচআইভি সংক্রমিত রোগী রয়েছে, তাদের একাংশ কিশোর-কিশোরী।
সচেতনতা প্রচার কি তাহলে কোনও প্রভাবই ফেলছে না?
পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার বক্তব্য, “এডস্ নিয়ে সচেতনতা রয়েছে। তবে এটা ঠিক, সর্বত্র সমান সচেতনতা নেই। এ নিয়ে সবস্তরে সচেতনতা আরও বাড়ানো জরুরি।” এইচআইভি নিয়ে কাজ করে, এমন এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রোজেক্ট কো-অর্ডিনেটর অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘাটালের দিকে প্রচুর সচেতনতা শিবির হয়েছে। ফলে, ওই এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে একটা ধারণা হয়ে গিয়েছে যে কী ভাবে এই মারণ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তাই ঘাটালে নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা কম। যে সব এলাকায় বেশি প্রচার হয়নি যেমন ডেবরা, ঝাড়গ্রাম, কেশিয়াড়ি সেখানে নতুন সংক্রমিতের সংখ্যা বেশি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy