Advertisement
১১ মে ২০২৪

একদা ‘দুর্গ’ খেজুরিতে শুরুই হয়নি বাম প্রচার

এক সময়ের লালদুর্গে এখনও ওড়েনি লাল পতাকা, রাঙানো হয়নি দেওয়াল! আলিমুদ্দিনের নির্দেশ মতো নিবিড় প্রচার তো দূর, লোকসভার প্রচারেও বের হননি কেউ। বন্ধ রয়েছে প্রায় ৩৫টি শাখা-লোকাল-ব্রাঞ্চ কমিটির কার্যালয়। দলীয় নেতৃত্বের কেউ জেলে, কেউবা পলাতক। এই পরিস্থিতিতে কাঁথি লোকসভার অর্ন্তগত খেজুরি বিধানসভা এলাকায় এখনও ভোট-প্রচারই শুরু করতে পারেনি বামেরা। একই অবস্থায় কংগ্রেস। প্রচার শুরুর পরেও এলাকায় দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি।

সুব্রত গুহ
খেজুরি শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:১৬
Share: Save:

এক সময়ের লালদুর্গে এখনও ওড়েনি লাল পতাকা, রাঙানো হয়নি দেওয়াল! আলিমুদ্দিনের নির্দেশ মতো নিবিড় প্রচার তো দূর, লোকসভার প্রচারেও বের হননি কেউ। বন্ধ রয়েছে প্রায় ৩৫টি শাখা-লোকাল-ব্রাঞ্চ কমিটির কার্যালয়। দলীয় নেতৃত্বের কেউ জেলে, কেউবা পলাতক। এই পরিস্থিতিতে কাঁথি লোকসভার অর্ন্তগত খেজুরি বিধানসভা এলাকায় এখনও ভোট-প্রচারই শুরু করতে পারেনি বামেরা। একই অবস্থায় কংগ্রেস। প্রচার শুরুর পরেও এলাকায় দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি।

৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিলএই এক মাসে কাঁথির অর্ন্তগত ছ’টি বিধানসভা এলাকায় বামপ্রার্থী তাপস সিংহ এখনও পর্যন্ত ৫১৪টি নির্বাচনী নানা সভা করলেও খেজুরিতে প্রচারে যাননি। তিনি বলেন, “খেজুরিতে অবশ্যই যাব। কিন্তু, এখনই নয়।” তাঁর ব্যাখ্যা, “এই মুহূর্তে প্রচারে গেলে কর্মী-সমর্থকদের উপর অত্যাচার করবে তৃণমূল।” এই পরিস্থিতিতে কৌশলে তাঁদের কাছে পৌঁছাতে চান তিনি। এ কাজে সহায় হয়েছে প্রযুক্তি। দলীয় সূত্রে খবর, ‘বন্ধু কাঁথি’ নামে সোশ্যাল নেট ওয়ার্কিং সাইট মাধ্যমে ইতিমধ্যেই খেজুরি এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন কাঁথির এই সাংসদ পদপ্রার্থী। তিনি সরাসরি খেজুরি না ঢুকলেও, খেজুরি-ভগবানপুর সীমান্ত লাগোয়া এলাকায় কর্মিসভায় জোর দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন।

বাম-আমলে ভোট এলেই দেখা যেত লালঝাণ্ডা হাতে মানুষের সঙ্ঘবদ্ধ মিছিল। হাটে-ঘাটে-মাঠে সর্বত্র টাঙানো লাল পতাকা। রাঙানো দেওয়াল। ভোট কাছাকাছি আসতেই এলাকা মুখর হত দলীয় শ্লোগানে। দৈবাত দেখা মিলত বিরোধীদের। গত লোকসভা নির্বাচনেও এটাই ছিল দস্তুর। গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে সেই চিত্র পাল্টাতে পাল্টাতে পুরোপুরি উল্টে গিয়েছে।

কেমন? ২০০৮-এর পঞ্চায়েত ভোটে গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জুড়ে যখন তৃণমূলের জয় জয়কার, তখনও খেজুরির ২টি পঞ্চায়েত সমিতি আর ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৯টি দখলে রেখেছিল সিপিএম। এরই মধ্যে ২০০৯-এর লোকসভায় তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী খেজুরি থেকেই তৎকালীন সিপিএম সাংসদ প্রশান্ত প্রধানের চেয়ে ১,৫৩১টি ভোটে এগিয়ে থেকে সিপিএম দূর্গে প্রথম ফাটল ধরান। পরে ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী রণজিত মণ্ডল ১৬,১৬০ ভোটে বামপ্রার্থীকে হারান। রাজ্যে পরিবর্তনের পর ২০১৩ পঞ্চায়েত ভোটে সেই বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়। খেজুরিতে একাধিপত্য কায়েম করে শাসক দল তৃণমূল।

গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই খেজুরি থেকে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকরা এলাকা ছাড়তে শুরু করেন। একাধিক মামলায় গ্রেফতার হন খেজুরির দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম নেতা হিমাংশু দাস, বিজন রায়, শেখ রবিউলরা। বন্ধ হতে শুরু করে সিপিএমের কার্যালয়গুলি। এই মুহূর্তে যেমন খেজুরি এলাকার সব স্তরের প্রায় ৩৫টি পার্টি অফিস বন্ধ। কেন এই হাল? সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধানের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্যই খেজুরি-সহ জেলার কোনও কোনও জায়গায় প্রচার শুরু করা যায়নি।” তাঁর দাবি, এরপরও খেজুরিতে বামেরা নেই ভাবলে ভুল হবে। কেননা, গত বিধানসভা ভোটেও খেজুরিতে ৭০ হাজারের বেশি মানুষ বামপ্রার্থীকে ভোট দিয়েছিলেন।

জেলার অন্যত্র জোরদার প্রচারে নামলেও, খেজুরিতে এখনও প্রচার শুরু করতে পারেনি কংগ্রেস। খেজুরি গিয়ে সম্প্রতি হেনস্থার শিকার হয়েছেন কাঁথির বিজেপি প্রার্থী কমলেন্দু পাহাড়ি। বিজেপির দুই কর্মীকে অপহরণের অভিযোগে গ্রেফতার হন চার তৃণমূল কর্মী।

প্রাক-নির্বাচনী আবহে বিরোধীরা এমন বেসামাল থাকলেও, প্রচারে রয়েছেন কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী। ইতিমধ্যে তিনি এত বার প্রচার সেরেছেন। বিরোধীদের প্রচারে বাধার অভিযোগ উড়িয়ে তাঁর দাবি, “সিপিএম থেকে শুধু সাধারণ মানুষই নন, দলীয় কর্মীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বাধা দেওয়ার প্রশ্নই নেই। ওরা নিজেদের আতঙ্কে ভুগছে।” সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সম্পাদক মামুদ হোসেনও। তিনি বলেন, “খেজুরিতে কোনও সন্ত্রাস করছে না দল। নিজেদের জমানায় সিপিএম যে সন্ত্রাস চালিয়েছিল, মানুষ তা প্রতিহত করে ওদের বর্জন করেছে মাত্র।”

পুলিশের দাবি, খেজুরিতে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট করাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবায়িত হয় এবং বিরোধীরা কী ভাবে ভোট-প্রচার করে, দেখার সেটাই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE