Advertisement
০২ মে ২০২৪

ঐতিহ্যে আজও অমলিন ঘোষ পরিবারের দুর্গাপুজো

ঐতিহ্য আর বনেদিয়ানার মিশেলে ঘাটালের জয়নগর গ্রামের ঘোষ পরিবারের পুজো অনন্য। জমিদারি নেই তো কী, চারশো বছরেরও প্রাচীন এই পুজো আজও যথাযথ ভাবে রীতি মেনে বহমান। পরিবারের বক্তব্য, ১৬১৪ সালে বংশের প্রথম পুরুষ মুরালীমোহন ঘোষ ঘাটাল শহর সংলগ্ন জয়নগর গ্রামে মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজোর পত্তন করেন। স্বপ্নাদেশ মতো এই পুজোয় কোনও রকম বলি নিষিদ্ধ। তালপাতার ঘর বানিয়ে প্রথম পুজো হয়েছিল বাড়ির সামনেই।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
ঘাটাল শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২১
Share: Save:

ঐতিহ্য আর বনেদিয়ানার মিশেলে ঘাটালের জয়নগর গ্রামের ঘোষ পরিবারের পুজো অনন্য। জমিদারি নেই তো কী, চারশো বছরেরও প্রাচীন এই পুজো আজও যথাযথ ভাবে রীতি মেনে বহমান।

পরিবারের বক্তব্য, ১৬১৪ সালে বংশের প্রথম পুরুষ মুরালীমোহন ঘোষ ঘাটাল শহর সংলগ্ন জয়নগর গ্রামে মা দুর্গার স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুজোর পত্তন করেন। স্বপ্নাদেশ মতো এই পুজোয় কোনও রকম বলি নিষিদ্ধ। তালপাতার ঘর বানিয়ে প্রথম পুজো হয়েছিল বাড়ির সামনেই। বেশ কয়েক বছর পর তৈরি হয়েছিল মাটির দুর্গা দালান। ১৯৭৮-এর বিধ্বংসী বন্যায় ওই দালান ভেসে যায়। তৈরি হয় পাকা মন্দির। জন্মাষ্টমীর দিন গ্রামের শ্মশানকালি মন্দিরের পাশ থেকে মাটি তুলে এক চালার প্রতিমা তৈরি শুরু হয়। শুভ মহালয়ার দিন আঁকা হয় মায়ের চোখ।

পুজোর কাজে কেশপুর সংলগ্ন খেতুয়া থেকে ঢাকি, নহবত-সহ অন্য বাজনা আনার রেওয়াজ এখনও রয়েছে ঘোষ পরিবারে। ষষ্ঠী থেকে মন্দিরের এক কোনে নির্দিষ্ট জায়গায় বসে নহবত। পঞ্চমী থেকেই শুরু হয় পুজো। নৈবেদ্য দেওয়া হয় আতপ চাল, ফল আর লুচি। পুজোয় দিনগুলিতে নিরামিষ খাবার খাওয়াই পরিবারের রীতি। দশমীর পুজো শেষে বাড়ির পুকুর থেকে মাছ ধরে রাতে মাছ-ভাত খাওয়া হয়। সপ্তমীর দিন থেকে মন্দিরের এক পাশে শুরু হয় হোম। নবমীর পুজো শেষে ওই হোম নেভানো হয়।

জয়নগর সংলগ্ন বরদা বিশালাক্ষী মন্দিরের তোপধ্বনি শুনে সন্ধিপুজো শুরু হয় বলে পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। আগে বিশালাক্ষী মন্দিরে কামান ফাটানো হত। এখন বড় বোম ফাটানো হয়। বংশের প্রবীণ সদস্য সুনীল ঘোষ বলেন, “আগে পুজোর সময় পাশাপাশি সব গ্রামের মানুষকে অষ্টমীর দিন নিমন্ত্রণ করা হত। এখন তা বন্ধ হলেও মায়ের ভোগ গোটা গ্রামে বিলি করা হয়।”

ঘোষ পরিবারের বর্তমান সদস্য সংখ্যা প্রায় তিনশো। কর্মসূত্রে সকলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকলেও থাকলেও পুজোর আগে সকলে গ্রামের বাড়িতে হাজির হন।

বাড়ির মহিলা সদস্যা গীতারানি, কৃষ্ণা, সোনা, উপলা, তনুশ্রী ঘোষেরা বলেন, “আমরা বছরভর অপেক্ষা করি পুজোর জন্য!” হই-হই করতে করতে কখন যে পুজোর দিনগুলো কেটে যায়, বোঝাই দায়। বলছেন, পরিবারের সদস্য কাজল, বিমান ঘোষেরা। গ্রামের অনেকেও এই পুজোর জন্য মুখিয়ে থাকেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

abhijit chakraborty ghatal pujo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE