দক্ষিণবঙ্গে এই প্রথম বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোরে ‘হোম ট্যুরিজম’ চালু করতে চলেছে বন দফতর। এর ফলে পশ্চিম মেদিনীপুরের ওই পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িতে থাকতে পারবেন পর্যটকেরা। পাশাপাশি, স্থানীয় খাবার-দাবার ও জীবনযাত্রার এক অনন্য স্বাদও পাবেন ভ্রমণার্থীরা। কেরালা, জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশের মতো একাধিক রাজ্যে ‘হোম ট্যুরিজম’ রীতিমতো জনপ্রিয়। এ রাজ্যের উত্তরবঙ্গে দার্জিলিঙের লামাহাটায় ‘হোম ট্যুরিজম’-এর ব্যবস্থা রয়েছে। রাজ্যের মুখ্য বনপাল (পশ্চিম চক্র) এন ভি রাজাশেখর বলেন, “দক্ষিণবঙ্গে এই প্রথমবার কাঁকড়াঝোরে ‘হোম ট্যুরিজম’ চালু করা হচ্ছে। পাহাড় ও জঙ্গল ঘেরা নৈসর্গিক ওই এলাকাটি ‘হোম ট্যুরিজম’-এর পক্ষে আদর্শ। এ জন্য কাঁকড়াঝোরের ৮টি পরিবারকে বাছাই করা হয়েছে।”
বন দফতর সূত্রের খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর বন বিভাগের মাধ্যমে দার্জিলিংয়ের লামাহাটার মডেলে কাঁকড়াঝোরে ‘হোম ট্যুরিজম’ প্রকল্পটি রূপায়িত হবে। আগামী বছরের গোড়ায় শীতের মধ্যে প্রকল্পটি পুরোদস্তুর চালু করার ব্যপারে আশাবাদী বন দফতর। যে আটটি পরিবারকে বাছা হয়েছে, তাদের বাড়িগুলিতে পর্যটকদের থাকার উপযোগী ব্যবস্থা করা হবে। তবে পাহাড়ি অঞ্চলের গ্রামীণ পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে থাকার মতো ব্যবস্থা করা হবে। ওই পরিবারগুলিকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যেই ভুলাভেদা থেকে কাঁকড়াঝোর যাওয়ার ১৫ কিমি পরিত্যক্ত পাহাড়ি রাস্তাটির সংস্কারের কাজ চলছে। পুজোর আগে ওই রাস্তাটিকে ‘ট্রেকিং-রুট’ হিসেবে চালু করা হচ্ছে। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই রাস্তার পুলিশের গাড়িতে মাওবাদী মাইন বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে রাস্তাটি প্রায় এক দশক ধরে পরিত্যক্ত ছিল। এবার কাঁকড়াঝোরে হোম ট্যুরিজম চালু করে স্থানীয়দের বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর।
ষাটের দশক থেকেই পর্যটকদের কাছে কাঁকড়াঝোর অতি পরিচিত নাম। বহু বাংলা সিনেমার শু্যটিংও হয়েছে এখানে। আগে কাঁকড়াঝোরে ‘বনানী’ নামে বন দফতরের একটি গেস্ট হাউস ছিল। পরে ২০০১ সালে রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের উদ্যোগে কাঁকড়াঝোরে আরও একটি বন বাংলো তৈরি হয়। পাশাপাশি, কাঁকড়াঝোরের বাসিন্দা গোপীনাথ মাহাতো নিজের বাড়িতে ‘মাহাতো লজ’ চালাতেন। সেখানেও থাকতেন পর্যটকেরা। সেই অর্থে বলা চলে, বেসরকারি ভাবে গোপীনাথবাবুর বাড়িতে অনেক আগে থেকেই হোম ট্যুরিজম চালু ছিল। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে মাওবাদীরা মাইন ফাটিয়ে কাঁকড়াঝোরের দু’টি বন বাংলো ধ্বংস করে দেয়। ওই ঘটনার পর থেকে কার্যত পর্যটক শূণ্য হয়ে যায় কাঁকড়াঝোর। কয়েক বছর আগে গোপীনাথবাবুর মৃত্যুর ফলে মাহাতো লজটিরও বেহাল দশা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলে মাওবাদী কার্যকলাপ স্তিমিত হয়ে গিয়েছে। ধীরে ধীরে পর্যটকেরাও কাঁকড়াঝোরে বেড়াতে আসছেন। তবে উপযুক্ত জায়গা না থাকায় পর্যটকেরা কাঁকড়াঝোরে রাত্রিযাপন করেন না। পক্ষান্তরে, পরিস্থতি শান্ত হলেও এই মুহূর্তে কাঁকড়াঝোরে নতুন করে অতিথিশালা তৈরির কথা ভাবছে না বন দফতর। এক বন আধিকারিক জানান, ‘হোম ট্যুরিজম’ প্রকল্পটি সফল হলে আরও বেশি পরিবারকে ওই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যটকের বাড়লে বন বাংলো তৈরির সিদ্ধান্ত হবে। ঝাড়গ্রামের ডিএফও আশিসকুমার সামন্ত বলেন, “কাঁকড়াঝোরকে আগের চেনা ছন্দে ফিরিয়ে আনাটাই উদ্দেশ্য। হোম ট্যুরিজম প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় আদিবাসীদের বিকল্প আয়ের সুযোগ হবে। এ ছাড়া স্থানীয় যুবকদের গাইডের কাজে লাগানো হবে। এর ফলেও তারাও বিকল্প আয় করতে পারবেন।”
স্থানীয় স্ব সহায়ক দলগুলির পুরুষ সদস্যদের গাইডের কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কাঁকড়াঝোরের বাসিন্দা মঙ্গল সিংহ মুড়া, নবনীতি মাহাতো, ইন্দ্র সিংহদের বক্তব্য, “আগে বহু পর্যটক আসতেন। এখন তাঁরা কম এলেও জায়গার অভাবে রাতে থাকেন না। তাঁরা রাতে থাকলে আমাদের সুদিন ফিরবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy