ক্ষয়িষ্ণু সৈকত বাঁচাতে শেষমেষ উদ্যোগী হল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। দিঘা, মন্দারমণি ও তাজপুর-সহ জেলার সৈকতকেন্দ্রগুলিতে সব রকম যান-চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল। অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) তাপস বাগচী সম্প্রতি এই মর্মে এক নির্দেশিকা রামনগর ১ ও ২, কাঁথি ১, দেশপ্রাণ ও খেজুরি ২ এই পাঁচটি ব্লকের বিডিও-সহ সংশ্লিষ্ট থানাগুলির ভারপ্রাপ্ত কর্তাদের কাছে পাঠিয়েছেন। এই নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি সৈকত ও সৈকত লাগোয়া এলাকায় যাবতীয় বেআইনি নির্মাণ চিহ্নিত করে তার তালিকা জেলার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিকের কাছে দ্রুত পাঠাতে বলা হয়েছে।
এত দিন অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) তাপস বাগচী বলেন, “কাঁথির মহকুমাশাসক ও মহকুমা পুলিশ অফিসারকে চিঠি পাঠিয়ে নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালন করা হচ্ছে কি না, তা অবশ্যই দেখতে বলা হয়েছে।”
দিঘা, মন্দারমণি ও তাজপুর-সহ সৈকতকেন্দ্রগুলির উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের ক্ষয়িষ্ণু চেহারা নিয়ে বিজ্ঞানী, গবেষক-বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ গত ৯ জুন আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে আধুনিক নগরোন্নয়নের সঙ্গে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন- এ দু’য়ের প্রভাবে কী ভাবে জেলার সৈকত পর্যটনকেন্দ্রগুলির ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে তা বিস্তারিত লেখা হয়। সৈকতের অবস্থা দেখে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের সহকারি অধ্যাপক তথা বিশিষ্ট বিজ্ঞানী পুণ্যশ্লোক ভাদুড়ি উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। গোটা দিঘা জুড়ে আধুনিক নগরোন্নয়ন ও পর্যটনের নামে যা চলছে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে তিনি উল্লেখ করেন। একই ভাবে উদ্বেগ জানান বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের গবেষক দলও।
বস্তুত, সৈকতকেন্দ্রগুলির অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, অনেক জায়গায় বালি সরে কাদা বেরিয়ে পড়েছে। অভিযোগ, সৈকত শহরের হোটেল-লজগুলির বর্জ্য পদার্থ, নোংরা জল যে ভাবে সমুদ্রে পড়ছে তাতে সমুদ্রের জল দারুণ ভাবে দূষিত হচ্ছে। অন্য দিকে দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুরে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবস্থার জেরে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হোটেল রিসর্টের বাড়বাড়ন্ত। তাজপুরে সৈকতের কে কত কাছে হোটেল তৈরি করবে তা নিয়ে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। অন্য দিকে, মন্দারমণিতে সৈকতের ধারে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস বা সমুদ্র ভাঙন ঠেকানোর নামে বেসরকারি উদ্যোগে (হোটেল কর্তৃপক্ষ) তৈরি হয়েছে চওড়া কংক্রিটের পাঁচিল। পাশাপাশি, দিঘা ও মন্দারমণিতে পর্যটন বিনোদনের নামে সৈকতের উপর দিয়ে চালানো হচ্ছে মোটরবাইক, জিপ-সহ নানা যানবাহন। এর জেরে হারিয়ে যাচ্ছে সৈকতে বিচরণকারী লাল কাঁকড়ার প্রজাতিও। এর ফলে আঘাত আসছে জীব বৈচিত্রেও।
সব মিলিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের পক্ষ থেকে একটি রিপোর্ট তৈরি করে তা জেলাশাসক অন্তরা আচার্যের কাছে পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, রিপোর্ট পেয়েই জেলাশাসক অন্তরা আচার্য দ্রুত সৈকতে যান-চলাচলে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ দেন। তারই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি রামনগর ১ ও ২, কাঁথি ১, দেশপ্রাণ ও খেজুরি ২ এই পাঁচটি ব্লকের পুলিশ কর্তাদের সৈকতে যান-চলাচলে নিষেধাজ্ঞার নির্দেশ কার্যকর করতে আদেশ দেওয়া হয়েছে। আপাতত ঠিক হয়েছে, সৈকত কেন্দ্রগুলির নানা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সাইনবোর্ড টাঙানো হবে। চলবে পর্যটকদের সচেতন করার প্রয়াসও।
এত দিন পুলিশ-প্রশাসনের নানা মৌখিক নিষেধাজ্ঞায় কাজ হয়নি, সৈকত দাপিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে মোটর বাইক-সহ নানা যানবাহন। এখন দেখার লিখিত নির্দেশিকার পরে কাজের কাজ কতটা হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy