আমন্ত্রণপত্র যা ছিল (বাঁ দিকে), যা হল (ডান দিকে) নিজস্ব চিত্র।
মহকুমা ক্রীড়ার আমন্ত্রণপত্রে স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক)-এর নাম ঠাঁই পেয়েছিল জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষদের নামের আগে। তাতেই বেজায় চটে গিয়েছেন তৃণমূল পরিচালিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি। মূলত তাঁর নির্দেশেই মেদিনীপুর সদর মহকুমা ক্রীড়া প্রতিযোগিতার (প্রাথমিক ও শিশু শিক্ষা) আমন্ত্রণপত্র নতুন করে ছাপাতে হয়েছে। সেই নতুন আমন্ত্রণপত্রে জেলা স্কুল পরিদর্শকের (প্রাথমিক) নাম গিয়েছে একেবারে শেষে। তৃণমূলের দলাদলির জেরে আমন্ত্রণপত্র থেকে বাদ গিয়েছে জেলা পরিকল্পনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষের নামও।
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের উদ্যোগে আজ, শনিবার থেকে শালবনিতে শুরু হচ্ছে মেদিনীপুর সদর মহকুমা ক্রীড়া প্রতিযোগিতা (প্রাথমিক ও শিশু শিক্ষা)। তার আমন্ত্রণপত্র ছাপা নিয়েই শোরগোল পড়েছে। নতুন করে আমন্ত্রণপত্র ছাপার প্রয়োজন পড়ল কেন? জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরার দাবি, “এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না!” আর জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) তথা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সচিব আমিনুল আহসানের বক্তব্য, “মহকুমাস্তরের ক্রীড়ার জন্য একটি কমিটি তৈরি করা হয়। কমিটিই সবটা দেখে। কী হয়েছে ঠিক জানি না। তবে কোথাও ত্রুটি হয়ে থাকলে সংশোধন হতেই পারে।” সমস্যা যে হয়েছে, তা মানছেন তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি চন্দন সাহা। তিনি বলেন, “একটা সমস্যা হয়েছিল। তা মিটেও গিয়েছে।” আর জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহের মন্তব্য, “একটু এ দিক-সে দিক হয়েছে। এটা এমন কিছু নয়!”
মহকুমা স্তরের এই ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য চলতি সপ্তাহের গোড়ায় আমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়। সূত্রের খবর, তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের জেলা নেতৃত্বের মতামত নিয়েই অতিথিদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছিল। প্রথম ছাপানো আমন্ত্রণপত্রে নাম ছিল বিধায়ক তথা এমকেডিএর চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতির (উদ্বোধক), জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ (প্রধান অতিথি), স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েস্টার্ন রিজিয়নের চেয়ারম্যান সুজিতকুমার চট্টোপাধ্যায় (বিশেষ অতিথি), জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরা, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) আমিনুল আহসান, জেলা পরিকল্পনা কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান প্রদ্যোৎ ঘোষ, জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র, নারী ও শিশু উন্নয়ন কর্মাধ্যক্ষ কাবেরী চট্টোপাধ্যায়, বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ কাজী আব্দুল হামিদ এবং বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোর।
জানা গিয়েছে, এই আমন্ত্রণপত্র হাতে পেয়েই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সভাধিপতি উত্তরাদেবী। জানিয়ে দেন, নতুন করে আমন্ত্রণপত্র ছাপাতে হবে। মহকুমা-ক্রীড়ার জন্য তৈরি কমিটির সভাপতি মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্ত। আর আহ্বায়ক অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অরুণাভ প্রহরাজ। উত্তরাদেবী মহকুমাশাসককেই ফোন করেন। মহকুমাশাসক তখন অরুণাভবাবুকে সভাধিপতির কাছে পাঠান। জেলা পরিষদের এক সূত্রে খবর, আমন্ত্রণপত্রে জেলা স্কুল পরিদর্শকের নাম আগে এবং কর্মাধ্যক্ষদের নাম পরে দেখে খেপে যান উত্তরাদেবী। প্রদ্যোৎ ঘোষের নাম দেখেও অসন্তুষ্ট হন তিনি। কমিটির এক কর্তার কথায়, “ওঁনার (উত্তরাদেবী) মতে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান, জেলা পরিকল্পনা কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান পলিটিক্যাল লোক। এঁদের নাম উপরের দিকে থাকতে পারে না।”
সমস্যা সমাধানে দিন তিনেক আগে উত্তরাদেবীর সঙ্গে কথা বলেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। তবে সমস্যা মেটেনি। পরিস্থিতি দেখে প্রদ্যোৎ ঘোষ জানিয়ে দেন, নতুন করে আমন্ত্রণপত্র ছাপানো হলে সেখানে যেন তাঁর নাম না রাখা হয়। তিনি শালবনির ওই অনুষ্ঠানে যাবেনই না। শেষমেশ সভাধিপতির মন রাখতে নতুন করেই আমন্ত্রণপত্র ছাপাতে হয়েছে। তাতে একেবারে শেষে রয়েছে জেলা স্কুল পরিদর্শকের (প্রাথমিক) নাম। আর বাদ গিয়েছে প্রদ্যোৎবাবুর নাম। এ প্রসঙ্গে প্রদ্যোৎবাবু বলেন, “একটা সমস্যা হচ্ছিল। তাই আমিই নাম রাখতে না বলেছি।” আর উত্তরাদেবীর বক্তব্য, “প্রদ্যোৎদা থাকবেন না। অথচ তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল!”
কেন আমন্ত্রণপত্রে প্রদ্যোৎবাবুর নাম দেখে অসন্তুষ্ট হলেন উত্তরাদেবী?
তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, সম্প্রতি দুর্গাপুরে দীনেন রায়, প্রদ্যোৎ ঘোষ, উত্তরা সিংহ-সহ জেলার চার নেতা-নেত্রীকে ডেকে বৈঠক করেছেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে জেলা পরিষদের কাজ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। হুঁশিয়ারিও দিয়ে রাখেন, দু’মাসের মধ্যে কাজে গতি না দেখলে সভাধিপতি পাল্টে দিতে পারেন। আগামী ১৯ ডিসেম্বর দুই মেদিনীপুরের নেতা-কর্মীদের নিয়ে খড়্গপুরে সাংগঠনিক সভা রয়েছে মমতার। দলের এক সূত্রের দাবি, সভাধিপতি মনে করছেন, প্রদ্যোৎবাবুরাই তাঁর নামে দলনেত্রীর কাছে কিছু নালিশ করেছেন। এরপর থেকে উত্তরাদেবীর সঙ্গে প্রদ্যোৎবাবুদের ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy