খেলাধুলোর মান বাড়াতে সরকারি উদ্যোগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে তৈরি হতে চলেছে মিনি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, জিমন্যাসিয়াম, মাল্টিজিম। একই সঙ্গে বিভিন্ন খেলার মাঠের হাল ফেরাতেও পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
যুব কল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিক সত্যব্রত হালদার বলেন, “ক্রীড়া-পরিকাঠামো গড়ার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। প্রস্তাবিত সমস্ত প্রকল্পের কাজ শেষ হলে অনেকেই উপকৃত হবেন। জেলায় খেলাধুলোর প্রসার হবে।”
খেলাধুলোর মানোন্নয়নে রাজ্য সরকার যে সব রকম চেষ্টা করবে, তা গোড়া থেকেই বলে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত জানুয়ারিতেও জঙ্গলমহল সফরে এসে স্থানীয় যুবক-যুবতীদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, “পড়াশোনা ভাল করে করুন। খেলাও করুন। মানুষ হতে হবে।” বার্তা দেন, “আর বিপথগামী হওয়া নয়। হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে লুকিয়ে থাকার পরিবর্তে প্রকাশ্যে পায়ে ফুটবল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াও। তীরন্দাজি, কবাডি নিয়ে মেতে থাকো। সঙ্গে পড়াশোনাটাও সমান তালে চালিয়ে যাও। সরকার সব সময় পাশে থাকবে।” সেই মতো খেলাধুলোর মানোন্নয়নে পশ্চিম মেদিনীপুরে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে জেলায় ২৬টি মিনি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, ৮টি জিমনাসিয়াম, ৬০টি মাল্টিজিম তৈরির অনুমোদন মিলেছে। প্রয়োজনীয় অর্থও বরাদ্দ হয়েছে। সঙ্গে ৩৭টি মাঠের হাল ফেরানোর জন্যও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। এক-একটি মিনি ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরির ক্ষেত্রে খরচ হবে ২০ লক্ষ টাকা। মাল্টিজিমের ক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকা। জিমন্যাসিয়ামের ক্ষেত্রে সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা। অন্য দিকে, খেলার মাঠের মানোন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লক্ষ টাকা।
কোথায় তৈরি হবে মিনি ইন্ডোর স্টেডিয়াম? জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, মূলত বিভিন্ন স্কুল চত্বরেই মিনি ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরি হবে। এখনও পর্যন্ত ২৬টি মিনি ইন্ডোর তৈরির অনুমোদন মিলেছে। এর মধ্যে গোপীবল্লভপুর ১ ব্লকে ২টি, ঝাড়গ্রামে ৪টি, সবংয়ে ২টি, খড়্গপুর ২ ব্লকে ৩টি, চন্দ্রকোনা ১-এ একটি, চন্দ্রকোনা ২ ব্লকে ১টি, দাঁতন ২ ব্লকে ২টি, পিংলায় ২টি, গড়বেতা ১ ব্লকে ২টি, শালবনিতে ১টি, নারায়ণগড়ে ১টি, দাসপুর ১ ব্লকে ৩টি, কেশপুরে ১টি মিনি ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সূত্রের দাবি, এর মধ্যে ৩টির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ১৪টির কাজ চলছে। বাকি ৯টির কাজ এখনও শুরু হয়নি। শীঘ্রই শুরু হবে।
অন্য দিকে, জেলায় এখনও পর্যন্ত ৬০টি মাল্টিজিম তৈরির অনুমোদন মিলেছে। মূলত, বিভিন্ন স্কুল-ব্যায়ামাগার-ক্লাবে এগুলো তৈরি হবে। এর মধ্যে গোপীবল্লভপুর ২-এ ১টি, গোপীবল্লভপুর ১-এ ৫টি, সাঁকরাইলে ২টি, ঘাটালে ৩টি, পিংলায় ৩টি, ঝাড়গ্রামে ২টি, জামবনিতে ১টি, শালবনিতে ৩টি, নারায়ণগড়ে ৩টি, কেশিয়াড়িতে ২টি, দাঁতন ২ ব্লকে ২টি, চন্দ্রকোনা ১ ব্লকে ১টি, চন্দ্রকোনা ২ ব্লকে ৪টি, গড়বেতা ১ ব্লকে ২টি, মেদিনীপুর সদরে ১টি, সবংয়ে ৩টি, নয়াগ্রামে ৫টি, খড়্গপুর ১ ব্লকে ১টি, খড়্গপুর ২ ব্লকে ১টি, দাসপুর ১ ব্লকে ৩টি, দাসপুর ২ ব্লকে ২টি, ডেবরায় ২টি, মেদিনীপুর পুর-এলাকায় ৮টি মাল্টিজিম তৈরি হওয়ার কথা রয়েছে। ওই সূত্রের দাবি, এরমধ্যে ২৩টির কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ১৪টির কাজ চলছে। বাকি ২৩টির কাজ এখনও শুরু হয়নি। শীঘ্রই শুরু হবে।
৮টি জিমন্যাসিয়াম তৈরির অনুমোদনও মিলেছে। এর মধ্যে গোপীবল্লভপুর-২ ব্লকে একটি, সাঁকরাইলে ২টি, ঘাটালে একটি, পিংলায় ২টি, ঝাড়গ্রামে একটি এবং শালবনিতে একটি মাল্টিজিম তৈরি হবে। অন্য দিকে, ৩৭টি খেলার মাঠের হাল ফেরাতেও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। মাঠগুলো মূলত বিভিন্ন স্কুল-ক্লাবের।
রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের ফলে খেলাধুলোর প্রসার হবে বলে মানছে জেলা ক্রীড়া সংস্থাও। মেদিনীপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটির সদস্য বিদ্যুৎ বসু বলেন, “আমাদের জেলায় প্রতিভার অভাব নেই। পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো হলে ক্রীড়া-পরিকাঠামোর উন্নতি হবে। অন্য দিকে, প্রতিভাবান ছেলেমেয়েরা প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলে আগামী দিনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সফল হবে। রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগের ফলে শহর এলাকার পাশাপাশি পঞ্চায়েত এলাকাতেও খেলাধুলোয় উৎসাহ বাড়বে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy