সামনেই পুর-নির্বাচন। তার আগে রেলশহরে দলের গোষ্ঠীকোন্দল মেটাতে যুযুধান দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসলেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। সোমবার খড়্গপুরের কৌশল্যায় এক নেতার বাড়িতে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন যুযুধান দুই গোষ্ঠীর নেতা শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী ও জেলা নেতা জহরলাল পাল। বিরোধ মিটিয়ে সহমতের ভিত্তিতে প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে তাঁদের নির্দেশ দেন জেলা নেতারা। বৈঠকে ছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায়, জেলা কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোৎ ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী। ৮ মার্চের মধ্যে ৩৫টি ওয়ার্ডের প্রার্থী তালিকা জেলা নেতৃত্বের কাছে জমা দিতে বলা হয়।
২০১০ সালের পুরসভা নির্বাচন থেকেই খড়্গপুরে দেবাশিস ও জহর অনুগামীদের বিরোধ অব্যাহত। এ বার পুরভোটের মুখেও দলের দুই মহিলা সভানেত্রী এবং দুই যুব সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খড়্গপুর পুর-এলাকায় গত লোকসভা নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। সব কিছু ঠিক থাকলে এপ্রিলেই পুরভোট। এই পরিস্থিতিতে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে পুরবোর্ড দখলে মরিয়া তৃণমূল। সেই মতো এ দিন কোন্দল মেটাতে দেবাশিস ও তাঁর তিন অনুগামী এবং জহরবাবু ও তাঁর তিন অনুগামীকে নিয়ে বৈঠকে হয়। যদিও এই দুই শিবিরকে ঐক্যবদ্ধ করার বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করছেন না জেলা তৃণমূল সভাপতি দীনেন রায়। তিনি বলেন, “আমাদের কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ। তার প্রমাণ বনগাঁ ও কৃষ্ণগঞ্জের উপ-নির্বাচন। খড়্গপুরেও পুর-নির্বাচন নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে এই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে।” তবে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি আশিস চক্রবর্তীর কথায়, “বৈঠকে জহরলাল পাল ও দেবাশিস চৌধুরীকে সহমতের ভিত্তিতে ১৯টি ওয়ার্ডের প্রার্থী খুঁজতে বলা হয়েছে। ওঁরা দু’জনে সাক্ষর করে দিলেই জেলার পক্ষ থেকে রাজ্যের নির্দেশে তাতে অনুমোদন দেওয়া হবে।” এর জন্য আগামী ৭ মার্চ মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর হলে জেলা কমিটির ডাকা সভার শেষে ফের এক দফা বৈঠক হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তৃণমূলের দলীয় সূত্রে খবর, এ দিনও বৈঠক শান্তিপূর্ণ হয়নি। বৈঠক চলাকালীন প্রার্থী তালিকা নিয়ে দু’পক্ষের বাদানুবাদ বাধে। তবে জেলা নেতৃত্ব জানিয়ে দেন, দু’পক্ষকে সমস্যা মিটিয়ে প্রার্থী বাছাই করতে হবে। স্থির হয়েছে, খড়্গপুরের যে ১৬টি ওয়ার্ডে গত পুরভোটে তৃণমূল জয়ী হয়েছিল, সেখানে বর্তমান কাউন্সিলররাই প্রার্থী হবেন। যদিও এ বার আসন সংরক্ষণের গেরোয় ২, ৫, ৮, ৩৩, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের জয়ী কাউন্সিলেরা আর ওই ওয়ার্ড থেকে লড়াই করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলররাই প্রার্থী বাছাই করবেন। আর বাকি ১৯টি ওয়ার্ডের জন্য প্রার্থী বাছাই করতে হবে জহরলাল পাল ও দেবাশিস চৌধুরীকে। আলাপ-আলোচনা করে প্রার্থী তালিকা আগামী ৮ মার্চের মধ্যে জেলা নেতৃত্বের কাছে পাঠালে তাতে অনুমোদন দেবে দল।
কিন্তু শহরের তৃণমূল নেতৃত্ব পাঁচ বছরের কোন্দল একদিনে ঝেড়ে ফেলে পুর-নির্বাচনে সাফল্য ধরে রাখতে পারবে কি না তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে, দুই শিবিরের বিরোধ সাময়িক মিটে গেলেও একাধিক গোঁজ প্রার্থী থাকার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও এ দিনের বৈঠক শেষে শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিসবাবু বলেন, “দলের ও শহরের জন্য পুর-নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা লড়াই করব। আমার ধারণা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আমরা পুরবোর্ড দখল করব।” আর প্রাক্তন পুরপ্রধান জহরবাবুর বক্তব্য, “ব্যক্তিগত মতানৈক্য থাকেই। তবে দলের নির্দেশ মেনেই আমরা কাজ করি। পুরনির্বাচনেও একসঙ্গে কাজ করে আমরা সব আসনে জয়ী হব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy