Advertisement
০৬ মে ২০২৪

গাড়িতে প্রেস, ভুয়ো সাংবাদিক ধরল স্থানীয়রাই

দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল প্রতারণা। স্থানীয়দের চেষ্টায় সেই ভুয়ো সাংবাদিক এ বার গ্রেফতার হল। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে খড়্গপুর শহরের ইন্দা মোড় সংলগ্ন ক্ষুদিরাম মার্কেট এলাকায়। ধৃত নিজেকে শহরের ইন্দা সারদাপল্লি এলাকার বাসিন্দা জয়দীপ সামুই বলে পুলিশের কাছে পরিচয় দিয়েছে। সেই পরিচয় ঠিক কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তার কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একটি দামী গাড়িও।

ধৃত জয়দীপ সামুই। নিজস্ব চিত্র।

ধৃত জয়দীপ সামুই। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:৪৫
Share: Save:

দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল প্রতারণা। স্থানীয়দের চেষ্টায় সেই ভুয়ো সাংবাদিক এ বার গ্রেফতার হল। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে খড়্গপুর শহরের ইন্দা মোড় সংলগ্ন ক্ষুদিরাম মার্কেট এলাকায়। ধৃত নিজেকে শহরের ইন্দা সারদাপল্লি এলাকার বাসিন্দা জয়দীপ সামুই বলে পুলিশের কাছে পরিচয় দিয়েছে। সেই পরিচয় ঠিক কিনা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তার কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে একটি দামী গাড়িও। সেই গাড়ির সামনে ও পিছনে ‘প্রেস স্টিকার’ সাঁটিয়ে ঘুরত বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবক। শনিবার রাতে ইন্দা মোড়ের কাছে গাড়িটি দেখে সন্দেহ হয় স্থানীয় দোকানিদের। স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় উপাধ্যায় ওই যুবককে পাকড়াও করলে সে এক এক বার এক একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি বলে পরিচয় দেয়। সন্দেহ হওয়ায় স্থানীয়রাই পুলিশে খবর দেয়।

খড়্গপুর শহরে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সুবিধা আদায়ের ঘটনা নতুন নয়। এমনকী পুলিশ অফিসার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সংবাদপত্রের নাম করে হুমকি দেওয়ার অভিযোগও বহুবার উঠেছে। পরে সেই সব সংবাদপত্রের অফিসে যোগাযোগ করে জানা গিয়েছে ওই সাংবাদিক ভুয়ো। যদিও এই সব ভুয়ো সাংবাদিকের গাড়ি, ক্যামেরা, স্পাই ক্যাম, ভুয়ো পরিচয়পত্র দেখে নকল বোঝার জো থাকে না। এই সব প্রতারকেরা চাকরি পাইয়ে দেওয়া, মন্ত্রী-আমলার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা আদায় করে। পুলিশ, সরকারি আধিকারিক, ট্রেনে-বাসে, ব্যবসায়ীদের থেকে অতিরিক্ত সুবিধা নেওয়ার চেষ্টাও চালায় এরা।

২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ইন্দার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা দৈনিকের নাম ভাঁড়িয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিল প্রলয় সামন্ত নামে এক যুবক। তার কাছে মিলেছিল সংবাদমাধ্যমের পরিচয়পত্র, স্পাই ক্যামের মতো নানা জিনিসপত্র। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই যুবক এক পুলিশকর্তাকে ফোনে হুমকি ও থানায় নিজেকে মুখ্যমন্ত্রীর আপ্তসহায়ক বলেও ফোন করত। ওই ঘটনার পরেও যে সাংবাদিকের ভুয়ো পরিচয় দেওয়ার প্রবণতা ঠেকানো যায়নি শনিবারের ঘটনাই তার প্রমাণ।

খড়্গপুর শহরে ঘুরে বেড়ানো বহু গাড়িতেই প্রেস স্টিকার লক্ষ করা যায়। অনেক সময় ওই গাড়ির মালিকের কাছে দেখতে পাওয়া যায় সংবাদমাধ্যমের পরিচয়পত্র। অথচ জেলার সাংবাদিক মহলে তারা অপরিচিত। শহরের কয়েকজন ছোটখাটো ব্যবসায়ী এই কারবারে যুক্ত বলে স্থানীয়দের দাবি। তবে পুলিশ কখনও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অভিযান চালায়নি। উল্টে নির্দিষ্ট ব্যক্তির নামে অভিযোগ জানাতে বলেছে। শনিবারের ঘটনার পরে অবশ্য শহর জুড়ে অভিযান শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঠিক হয়েছে, সন্দেহভাজন গাড়ি দেখলে পাকড়াও করা হবে এবং যাচাই করা হবে পরিচয়পত্র। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক গুপ্ত বলেন, “আমরা ওই ভুয়ো সাংবাদিককে গ্রেফতার করে ৪১৯ধারায় মামলা রুজু করেছি। এর পরে আমরা সর্বত্র অভিযানে নামতে চলেছি। প্রেস স্টিকার সাঁটানো গাড়ি দেখলেই আটক করে কাগজপত্র খতিয়ে দেখা হবে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শনিবার রাতে ইন্দা ক্ষুদিরাম মার্কেটের কাছে ‘প্রেস স্টিকার’ সাঁটানো গাড়ি থেকে নেমে ওই যুবক কয়েকটি দোকানে ঘোরাফেরা করছিল। স্থানীয়দের অভিযোগ, এর আগেও ওই যুবককে এলাকায় দেখা গিয়েছে। জানতে চাইলে সে নিজেকে কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা দৈনিকের সাংবাদিক বলে পরিচয় দিয়েছিল। তবে বেশি প্রশ্ন করায় সে এলাকা ছাড়ে। শনিবার ফের তাকে দেখে ছুটে যান নামে স্থানীয় বাসিন্দা সঞ্জয় উপাধ্যায়। জিজ্ঞাসাবাদ করলে ওই যুবক ফের কলকাতা থেকে প্রচারিত অন্য একটি বাংলা দৈনিকের সাংবাদিক বলে পরিচয় দেয়। পরিচয়পত্র দেখতে চাইলে আবার অন্য একটি সংবাদ সংস্থার নাম করে সে। সঞ্জয়বাবু বলেন, “আমি বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করায় তিন হাজার টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করতে চেয়েছিল। তারপরই পুলিশে খবর দিই।” খবর পেয়ে পৌঁছন টাউন থানার সাব-ইন্সপেক্টর স্বরূপ মুখোপাধ্যায়। তিনি প্রেস স্টিকার সাঁটানো গাড়ি-সহ যুবককে থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক জেরায় ভেঙে পড়েছে ওই যুবক। জানিয়েছে গাড়িতে সুশান্ত রায় নামে কলকাতার এক ব্যক্তি ওই প্রেস স্টিকার সাঁটিয়েছেন। নিজেকে ওই যবুক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইন-চার্জ বলে পরিচয় দিয়েছে। শনিবার রাতেই লিখিত অভিযোগ জমা দেন সঞ্জয় উপাধ্যায়। এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডল ও আইসি জ্ঞানদেওপ্রসাদ সাউ থানায় এসে খতিয়ে দেখেন ধৃতের গাড়ির কাগজপত্র। পরীক্ষা করা হয় তার মোবাইল। দেখা যায় অনেককে ওই যুবক নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর কথা বলেছে। তদন্তে পুরো বিষয়টিই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE