পুনর্বিন্যাসের ফলে এক ধাক্কায় সিপিএমের চারটি জোনাল কমিটি কমছে পূর্ব মেদিনীপুরে। সিপিএমের অন্দরের খবর, সাংগঠনিক শক্তি কমে যাওয়ায় কোনঠাসা হয়ে বাধ্য হয়েই এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে নেতৃত্বকে। যদিও তাঁরা প্রকাশ্যে বলছেন, সংগঠনকে আরও জোরদার ও শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই এই বাস্তবোচিত সিদ্ধান্ত।
শুক্রবার কাঁথিতে সিপিএম নেতা তথা পূর্ব মেদিনীপুরের পর্যবেক্ষক রবীন দেবের উপস্থিতিতে পুনর্বিন্যাসের ঘোষণা করেন জেলা নেতৃত্ব। সেখানে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধান, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নির্মল জানা, তাপস সিংহ, চক্রধর মেইকাপ প্রমুখেরা। ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক বলেন, “জেলার দশটি জোনাল কমিটিকে জুড়ে নতুন পাঁচটি জোনাল কমিটি গড়া হবে। তবে হলদিয়া জোনাল কমিটিকে ভেঙে দু’টি জোনাল কমিটি গড়া হবে।” সাংগঠনিক কাজের সুবিধার কথা ভেবেই এই পুনর্বিন্যাসের সিদ্ধান্ত বলে জানান প্রশান্তবাবু।
তবে এই প্রথম নয়, নন্দীগ্রামের জেলায় ২০০৮ সালেই জোনাল কমিটির সংখ্যা কমেছিল। কেন?
২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নন্দীগ্রাম ও খেজুরি এলাকায় দলের সংগঠনে ধ্বস নামে। তা মানেন সিপিএমের একাংশ। তার জেরে ২০০৮ সালে দলের সম্মেলনে ওই দুই এলাকার চারটি জোনাল কমিটি এলাকাকে জুড়ে দুটি সাংগঠনিক জোনাল কমিটি গড়া হয়। নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের নন্দীগ্রাম জোনাল কমিটি ও নন্দীগ্রাম ২ ব্লকের রেয়াপাড়া জোনাল কমিটি জুড়ে গড়া হয়েছিল নন্দীগ্রাম জোনাল কমিটি। একই ভাবে খেজুরি ১ ব্লকের হেড়িয়া জোনাল কমিটি ও খেজুরি ২ ব্লকের খেজুরি জোনাল কমিটি জুড়ে গড়া হয় খেজুরি জোনাল কমিটি। ফলে তখনই জেলায় দলের জোনাল কমিটির সংখ্যা ২৫ থেকে কমে হয় ২৩।
এরপর ২০০৯-এর লোকসভা, ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও রক্তক্ষরণ অব্যহত থাকে সিপিএমের। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও দাঁড়ি পড়েনি সেই প্রবণতায়। এই অবস্থায় চলতি বছরের প্রথমে লক্ষ্মণ শেঠ-সহ তাঁর অনুগামীদের বহিষ্কার করে সিপিএম নেতৃত্ব। বেনোজল বের হওয়ায় সাংগঠনিক শক্তি বেড়েছে বলে বরাবরই দাবি করেন জেলা নেতৃত্ব। কিন্তু, জোনাল কমিটির সংখ্যা কমানোর সিদ্ধান্তে সেই দাবি নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল।
নেতৃত্বের দাবি, পূর্ব মেদিনীপুরে বর্তমানে দলের সদস্য রয়েছেন ১৭ হাজার। ২৩টি জোনাল কমিটি এলাকায় লোকাল কমিটির সংখ্যা ১৩৬টি। এই অবস্থায় যে ১০টি জোনাল কমিটিকে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তার অধিকাংশই কাঁথি, এগরা মহকুমা এলাকার। রামনগর, বালিসাই জোনাল কমিটি যুক্ত করে একটি সাংগঠনিক জোনাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
একই ভাবে কাঁথি-দেশপ্রাণ জোনাল জুড়ে একটি, এগরা ১ ও এগরা ২ জোনাল কমিটি জুড়ে একটি, সিংদা (পটাশপুর ১) ও পটাশপুর ২ জোনাল কমিটি জুড়ে একটি এবং তমলুক শহর ও তমলুক জোনাল (তমলুক ব্লক) কমিটি জুড়ে একটি জোনাল কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতেই ১০টি জোনাল কমিটির কমে ৫টি জোনাল কমিটি হচ্ছে।
কিন্তু, লক্ষ্মণ শেঠের খাসতালুক হিসেবে পরিচিত হলদিয়া জোনাল কমিটি ভেঙে হলদিয়া ১ (হলদিয়া পুরসভা ও হলদিয়া ব্লক) ও হলদিয়া ২ (সুতাহাটা) জোনাল কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্যত্র যেখানে জোনাল কমিটি জুড়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে হলদিয়া ব্যতিক্রম কেন?
সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধানের যুক্তি, “হলদিয়া জোনাল কমিটি এলাকায় বর্তমানে দলের সদস্য সংখ্যা প্রায় বাইশশো। কাজের সুবিধার জন্যই দুটি জোনাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।” হলদিয়ার এক সময়ের প্রভাবশালী নেতা লক্ষ্মণ শেঠের বহিষ্কারের পরেও এলাকায় দলের সাংগঠনিক শক্তি অটুট রয়েছে, এই সিদ্ধান্ত তারই প্রমাণ বলছেন সিপিএম নেতারা।
দীর্ঘ ছ’বছর পরে নন্দীগ্রাম জোনাল কমিটির সম্মেলন নন্দীগ্রাম এলাকায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলের রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশিকা অনুযায়ী, এ বার প্রতিটি লোকাল কমিটিতে অন্তত দু’জন মহিলা সদস্য রাখতে হবে। এ ছাড়া লোকাল কমিটিতে অর্ধেক সদস্য ৫০ বছরের কম বয়সী হতে হবে। আর ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে রাখতে হবে।
এখন দেখার নতুন কৌশল জেলায় সিপিএমের রাজনৈতিক অবস্থানকে কতটা অক্সিজেন যোগায়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy