খড়্গপুরের বলরামপুরে জমি-জটে শুরুই হয়নি রাস্তার কাজ।
জমি-জটে থমকে রাস্তা সম্প্রসারণ।
খড়্গপুর শহরের বুলবুলচটিতে আইআইটি-এর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের নির্মাণকাজ চলছে। কাশীজোড়ায় আবার খড়্গপুর মহকুমা আদালত তৈরি হচ্ছে। এই দুই প্রকল্প এলাকার সংযোগকারী সঙ্কীর্ণ রাস্তা চওড়া করতে সম্প্রতি রাজ্য সরকার উদ্যোগী হয়েছে। কিন্তু সে জন্য রাস্তার দু’ধারে অনেক বাড়ি ভাঙা প্রয়োজন। বাসিন্দারা জমি দিতে অস্বীকার করায় থমকে গিয়েছে কাজ। বুলবুলচটি-কাশীজোড়া রাস্তার দু’ধারের জমি তাদের বলে দাবি পূর্ত দফতরের। যদিও বাসিন্দাদের পাল্টা দাবি, ওই জমি তাঁদের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। রাস্তার জন্য জমি দেওয়া যাবে না।
দীর্ঘদিন ধরেই খড়্গপুর শহরের বুলবুলচটি থেকে গ্রামীণের কাশীজোড়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা পূর্ত দফতরের। বর্তমানে রাস্তাটি প্রায় ১২ ফুট চওড়া। স্থানীয়দের দাবি, রাস্তা চওড়া করতে বিভিন্ন সময়ে বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় জায়গা দিয়েছেন। যদিও পূর্ত দফতরের দাবি, সড়কের জমি তাদেরই। দফতরের নিয়ম অনুযায়ী একটি সড়কের দু’ধারে রাস্তার প্রস্থের প্রায় সম পরিমাণ জমি অতিরিক্ত পড়ে থাকে। দীর্ঘদিন ওই জমি অব্যবহৃত পড়ে থাকায় বেদখল হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ বাড়ি তৈরি করে বসবাসও করছেন। তাই বিভিন্ন সময়ে রাস্তা চওড়া করতে বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় জমি দিয়েছেন। পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অনিন্দ্য রায় বলেন, “পূর্ত দফতরের সড়ক থাকলে সংলগ্ন অধিগৃহীত জমি থাকেই। তবে অনেক সময় ফাঁকা জায়গা থাকলে মানুষ চাষ করে, বেড়া দিয়ে দেয়। তাই অনেকেই জানতে চায়, রাস্তা কী ভাবে হবে বা কতটা চওড়া হবে। জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয় বাসিন্দাদের বুঝিয়েছেন। আশা করি, মানুষ স্বেচ্ছায় জমি দেবেন।”
তবে বাস্তব অবস্থাটা অনেকটাই আলাদা। ওই রাস্তার ধারে বসবাসকারী বলরামপুরের তারাপদ দাসের স্ত্রী বুলুদেবীর দাবি, “এই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছি। আমরাই জমি ছেড়ে দিয়ে রাস্তা চওড়া করতে সাহায্য করেছি। এখন রাস্তা আরও চওড়া করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের পক্ষে আর জমি সম্ভব নয়।”
কাশীজোড়াতেও থমকে সম্প্রসারণ।
পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, বর্তমানে ১২ ফুট চওড়া ওই সড়কটি প্রায় ২৩ ফুট করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য ‘এন্ট্রি ট্যাক্স স্কিমে’ ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য। বলরামপুরে রাস্তা সম্প্রসারণের জমি পাওয়া গেলেও বুলবুলচটিতে জমি-জটে রাস্তা পাঁচ মিটারের বেশি চওড়া করা সম্ভব নয়। সড়কের মধ্যবর্তী অংশে বলরামপুর থেকে কাশীজোড়া পর্যন্ত রাস্তা সাত মিটার চওড়া করার জমি পাওয়া যাবে। একই সড়কের বিভিন্ন অংশে সম্প্রসারণের কাজ সমানভাবে না হলে কাশীজোড়ার বাসিন্দারা আপত্তি জানাতে পারেন। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি বলেন, “ওই সড়ক সাত মিটার চওড়া হলেই ভাল হয়। আমি আবারও এলাকায় যাব। প্রয়োজনে বুলবুলচটি থেকে সমগ্র সড়কটি সাড়ে পাঁচ মিটার চওড়া করা যায় কি না, তা নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে আলোচনা করব।”
ইতিমধ্যেই একাধিকবার পূর্ত দফতরের আধিকারিকরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছেন। কাশীজোড়ার বাসিন্দারা জমি দিতে অস্বীকার করায় সেখানে যান এলাকার নেতা তথা জেলা কৃষি-সেচ-সমবায় কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরি। গত শনিবারও বলরামপুরের কাছে শীতলা মন্দিরে বৈঠক করেন নির্মল ঘোষ ও এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অনিন্দ্য রায়। সেখানেও গ্রামবাসীরা রাস্তার ধারের জমি নিজেদের বলে দাবি করেন। নির্মলবাবু বলেন, “জমি কার, তা পূর্ত দফতর জরিপ করে বলতে পারবে। কিন্তু ওই এলাকার গুরুত্ব বাড়তে থাকায় রাজ্য সরকারের আমলে রাস্তা চওড়া করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মানুষকে বুঝিয়ে আমাদের সেই কাজ করতে হবেই।” স্থানীয় বাসিন্দা বীরেন পট্টনায়েক, সঞ্জীব মাইতিরা বলেন, “রাজনৈতিক নেতারা জমি দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা তো আগেই অনেক জমি ছেড়ে দিয়েছি। পূর্ত দফতরকে অতিরিক্ত জমি দেওয়া অসম্ভব।”
পূর্ত দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অনিন্দ্য রায় বলেন, “হাসপাতালের মতো জরুরি প্রকল্পের জন্যই ওই সড়ক চওড়া করতে হবে। রাস্তা চওড়া হলে এলাকার উন্নতিও হবে। জমি খালি পড়ে থাকলে স্থানীয়রা ব্যবহার করতে পারতেন। কিন্তু জমি ছেড়ে দিলে তা হবে না।” তবে তাঁর আশা, শেষমেশ এলাকার সকলেই সহযোগিতা করবেন।
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy