Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
মেদিনীপুর কমার্স কলেজ

টিএমসিপি-র ঘর ভেঙে শাখা খুলল এবিভিপি

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ঘর ভেঙে মেদিনীপুর কমার্স কলেজে ইউনিট খুলল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। রাজ্যে বিজেপি-র দ্রুত উত্থানের আবহে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ন্তগত দুই মেদিনীপুরের ৪২টি কলেজের মধ্যে এই কলেজে ইউনিট খোলার মধ্যে দিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে এবিভিপি-র নতুন পথ চলা শুরু হল।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:০৮
Share: Save:

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ঘর ভেঙে মেদিনীপুর কমার্স কলেজে ইউনিট খুলল অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)। রাজ্যে বিজেপি-র দ্রুত উত্থানের আবহে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ন্তগত দুই মেদিনীপুরের ৪২টি কলেজের মধ্যে এই কলেজে ইউনিট খোলার মধ্যে দিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরে এবিভিপি-র নতুন পথ চলা শুরু হল।

এবিভিপি সূত্রে খবর, গত শুক্রবার মেদিনীপুর কমার্স কলেজে তারা ইউনিট খুলেছে। তাতে যোগ দিয়েছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বেশ কয়েক জন কর্মী-সমর্থক। এঁদের মধ্যে তিন জন গত বছর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জয়ী প্রার্থী। টিএমসিপি ছেড়ে আসা ছাত্র সংসদের সদস্য রুদ্রজিৎ জানাকেই এবিভিপি-র কমার্স কলেজ ইউনিটের সভাপতি করা হয়েছে। দলবদলের এমন ঘটনা জেলার ছাত্র রাজনীতিতে শোরগোল ফেলেছে।

জেলার রাজনৈতিক মহলের অভিমত, রুদ্রজিৎকে ইউনিট সভাপতি করে টিএমসিপি কর্মীদেরই বার্তা দিতে চেয়েছে এবিভিপি। বোঝাতে চেয়েছে, ভাবমূর্তি ভাল হলে তাদের কাছে কেউই অচ্ছুৎ নয়। মেদিনীপুরে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের একাধিক গোষ্ঠী রয়েছে। নানা কারণে একাংশ কর্মী-সমর্থকের মধ্যে অসন্তোষও রয়েছে। তা নিয়ে জেলায় টিএমসিপি-র গোষ্ঠী সংঘর্ষও নতুন নয়। টিএমসিপি যখন নানা দ্বন্দ্বে দীর্ন, তখন রাজ্যে ক্রমশ উত্থান হচ্ছে এবিভিপি-র। কলেজ পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ আর এফএফআই নয়, আস্থা রাখতে শুরু করেছে এবিভিপিতে। তার প্রমাণ মিলেছে পুরুলিয়ার দুই কলেজে এবিভিপির সাম্প্রতিক জয়ে। ফলে, আগামী দিনে আরও কর্মী-সমর্থক টিএমসিপি ছেড়ে এবিভিপিতে নাম লেখাতে পারেন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।

চলতি মাসের ২৯ তারিখে দুই মেদিনীপুরের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রভোট রয়েছে। তার আগে কেন দলবদল? রুদ্রজিৎ বলছেন, “এসএফআই যে কায়দায় অত্যাচার করত, টিএমসিপিও তেমনটাই শুরু করছে। এসএফআইকে সহ্য করতে পারি না। তাই টিএমসিপি ছেড়ে এবিভিপিতে যোগ দিয়েছি।” তা শুনে এবিভিপি-র জেলা সম্পাদক সুব্রত নন্দী বলছেন, “টিএমসিপি-এসএফআই শুধু মুখেই ছাত্রস্বার্থের কথা বলে। কাজ কিছুই করে না। তা ক্রমশ পড়ুয়ারা বুঝতে পারছেন।” এই পরিস্থিতিতে ছাত্রভোটের আগে জেলার আরও কিছু কলেজে ইউনিটও খোলার ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

এত দিন ছাত্রভোটের লড়াইটা ছিল লাল-সবুজে। এ বার সেই লড়াইয়ে ভাগ বসাচ্ছে এবিভিপি। কলেজে কলেজে মাথা তুলছে তারা। ছাত্রভোটের মুখে এবিভিপি-র এহেন উত্থানে স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে টিএমসিপি, এসএফআইয়ের মতো ছাত্র সংগঠনগুলো। তবে তাদের কেউই বিষয়টিকে প্রকাশ্যে আমল দিচ্ছেন না। গোষ্ঠী কোন্দলের জেরেই কী কমার্স কলেজে এমন হল? সদুত্তর এড়িয়ে টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, “দু-এক জনের সঙ্গে কারও ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকতে পারে! নির্বাচনেই এবিভিপি জবাব পাবে!”

মেদিনীপুর কমার্স কলেজের ছাত্র সংসদ রয়েছে ছাত্র পরিষদের দখলে। অভিযোগ, রাজ্যে পালাবদলের পর বহু চেষ্টা করেও এই ছাত্র সংসদ দখল নিতে পারেনি টিএমসিপি। গেল বার পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৪টি কলেজের মধ্যে মাত্র ৫টি কলেজে নির্বাচন হয়। বাকি ১৯টি কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় টিএমসিপি। ওই ৫টি কলেজের মধ্যেই রয়েছে কমার্স কলেজ। এখানে ৩০টি আসনের মধ্যে সিপি পেয়েছিল ২০টি, টিএমসিপি ৯টি এবং এসএফআই একটি। এবিভিপি ইউনিট খোলার কথা মেনে ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “কিছু মরসুমি ফুল থাকে। ছাত্রভোট এলেই তাঁরা সুবিধে মতো দল বদলান। ছাত্রছাত্রীরা জানেন কোন সংগঠন বছরভর তাঁদের পাশে থাকেন।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক সৌগত পণ্ডা বলেন, “এসএফআই কর্মীরা আদর্শে বিশ্বাস করেন। তাঁরা ক্ষমতার জন্য সংগঠন বদল করেন না।”

নয়েক দশকে জেলার গুটি কয় কলেজে এবিভিপি-র ইউনিট ছিল। সেই ইউনিটগুলিই পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে বলে এবিভিপি সূত্রে খবর। এবিভিপির জেলা সম্পাদক সুব্রতর কথায়, “সর্বত্রই সংগঠনকে মজবুত করার চেষ্টা করছি। ‘সেভ ক্যাম্পাস, সেভ এডুকেশন’ নামে এক শক্তিশালী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছি। সমর্থনও পাচ্ছি।” তা শুনে টিএমসিপির জেলা সভাপতির কটাক্ষ, গুটিকয়েক সংবাদমাধ্যম বেড়ালকে বাঘ বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে! তা তো হয় না! বাঘ বাঘই থাকবে। নির্বাচনেই সব প্রমাণ হয়ে যাবে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE