Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ঠাঁই নেই, ঝাড়গ্রামে আসা পর্যটকরা ঘাটশিলামুখী

‘সরি, কোনও ঘর খালি নেই।’ বছরের শেষটা অরণ্যশহরে স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে এসেই ধাক্কা খেলেন বর্ধমানের সঞ্চিতা সরকার। ভেবেছিলেন, স্পট বুকিংয়ে হোটেল বুক করে স্বামীকে চমকে দেবেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। হোটের কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, আগামী বুকিং রয়েছে। ফলে কোনও ঘর পাওয়া সম্ভব নয়। ব্যাজার মুখে সঞ্চিতা তাই বললেন, “কাছেই ঘাটশিলা। দেখি বছর শেষটা সেখানেই কাটাই।”

ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানায় দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানায় দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:০৫
Share: Save:

‘সরি, কোনও ঘর খালি নেই।’

বছরের শেষটা অরণ্যশহরে স্বামীকে নিয়ে ঘুরতে এসেই ধাক্কা খেলেন বর্ধমানের সঞ্চিতা সরকার। ভেবেছিলেন, স্পট বুকিংয়ে হোটেল বুক করে স্বামীকে চমকে দেবেন। কিন্তু সে গুড়ে বালি। হোটের কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, আগামী বুকিং রয়েছে। ফলে কোনও ঘর পাওয়া সম্ভব নয়। ব্যাজার মুখে সঞ্চিতা তাই বললেন, “কাছেই ঘাটশিলা। দেখি বছর শেষটা সেখানেই কাটাই।”

বছর শেষ আর নতুন বছর শুরুতে পর্যটক ভর্তি ঝাড়গ্রামে এমন অভিজ্ঞতা হল অনেকেরই।

পরিসংখ্যান বলছে, খরা কাটিয়ে ছন্দে ফিরেছে ঝাড়গ্রামের পর্যটন-শিল্প। বর্ষশেষের ঝাড়গ্রামে এবার কার্যত পর্যটকদের ঢল নেমেছে। নভেম্বরের শেষ নাগাদ পর্যটকেরা আসতে শুরু করেছিলেন। তবে বড়দিন থেকেই ভিড়টা শুরু হয়েছিল। বুধবার শেষ হল তিন দিনের জঙ্গলমহল উৎসব। আজ, বৃহস্পতিবার নতুন বছরের প্রথম দিনে ঝাড়গ্রাম শহরে শুরু হচ্ছে ঝাড়গ্রাম আর্ট অ্যাকাডেমির বার্ষিক উৎসব-- ‘রং মাটি মানুষ’। সব মিলিয়ে অরণ্যশহরে উৎসবের মেজাজ। তাই এখন অরণ্যশহরের লজ-হোটেলগুলিতে তিল ধারণের জায়গা নেই। উত্তর কলকাতার রঙ্গন দত্ত, বর্ধমানের সঞ্চিতা সরকারের মতো যাঁরা অগ্রিম বুকিং না করে এসেছেন, তাঁদের কার্যত কপাল চাপড়াতে হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রাম শহরে ১৭টি হোটেল-লজ রয়েছে। এগুলিতে প্রায় হাজার খানেক পর্যটক থাকতে পারেন। খুব চাপাচাপি করলে আরও শ’পাঁচেক। ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, ২০১০ সালে মাত্র ২৬ জন পর্যটক ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন। ২০১১ সালে বর্ষশেষের সপ্তাহে এসেছিলেন ১৩৮জন, ২০১২ সালে সংখ্যাটা দেড় হাজার ছাড়িয়েছিল। ২০১৩ সালে হাজার তিনেক পর্যটক এসেছিলেন। আর এ বছর? ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকারের দাবি, “এ বার নভেম্বর-ডিসেম্বর ও বর্ষবরণের সপ্তাহ মিলিয়ে পর্যটকের সংখ্যাটা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে। বিদেশি পর্যটকেরাও ঝাড়গ্রামে আসছেন।” ঝাড়গ্রামের ‘অরণ্যসুন্দরী’ অতিথিশালার মালিক শিবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ঘর খালি নেই। যাঁরা স্পট বুকিংয়ের জন্য আসছেন, তাঁদের ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।” বাঁদরভুলায় জঙ্গলের মধ্যে রাজ্য বন উন্নয়ন নিগমের প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্রে স্পট বুকিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। কেন্দ্রের ইনচার্জ সন্দীপ কুণ্ডু বলেন, “এখন ঝুঁকি নিতে চান না পর্যটকেরা। বেশিরভাগই অন লাইনে আগাম বুকিং করে রেখেছেন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্পট বুকিং দেওয়া যাচ্ছে না।”

পর্যটকেরা যে আসছেন তার প্রমাণ বন দফতরের ঝাড়গ্রাম মিনি চিড়িয়াখানায় দর্শকদের ভিড়। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৫ ডিসেম্বর মিনি চিড়িয়াখানায় রেকর্ড সংখ্যক ভিড় হয়েছিল। বড়দিনে এবার ৩৩ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার মিনি চিড়িয়াখানাটি বন্ধ থাকে। তবে এবার পর্যটকদের ভিড় দেখে ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দফতর। ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার বিজনকুমার নাথ বলেন, “পর্যটকদের স্বার্থে বৃহস্পতিবার পয়লা জানুয়ারির দিন মিনি চিড়িয়াখানা খোলা থাকবে।”

ঝাড়গ্রামে উৎসবের এমন মরসুমে জমেছে কিছুটা অভিযোগের মেঘও। অনেক পর্যটকের অভিযোগ, পরিকাঠামোর অভাবে অরণ্যশহরে এই মরসুমে থাকার সুযোগ পান নি অনেকেই। পুরসভার বিলাসবহুল অতিথি নিবার বনানী তো সেই ২০১০ সাল থেকেই সিআরপিএফ-এর ক্যাম্প। শহরের ১৭টি হোটেলের মধ্যে ৭টির ব্যবস্থা ভালো। কিন্তু ভরা মরসুমে সেগুলোয় ঠাঁই পাওয়া দায়। ফলে অনেকে এখানে থাকার জায়গাটুকুও পাচ্ছেন না। তবে পযর্টকের ভিড়ে খুশি শহরের গাড়ি চালকরা। শেখ সাবের আলি ও লম্বু মাহাতো-রা বলছেন, “আবার পর্যটকরা বেলপাহাড়ি, লালগড়, নয়াগ্রাম যাওয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বহুদিন পরে আমাদের কপাল ফিরেছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tourist ghatsila jhargram kingshuk gupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE