Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূলের তারকা প্রার্থী নিয়ে সতর্ক কংগ্রেস-বাম

মেদিনীপুরে এসে কর্মিসভা করেছেন তৃণমূল প্রার্থী দেব-সন্ধ্যা রায়। আবেগ-উচ্ছ্বাসে মঙ্গলবারের সেই কর্মিসভা পরিণত হয়েছিল জনসভায়। তৃণমূলের তারকা প্রার্থীদের নিয়ে এই উচ্ছ্বাসে কিছুটা হলেও চিন্তিত বিরোধী শিবির।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৪ ০১:০৫
Share: Save:

মেদিনীপুরে এসে কর্মিসভা করেছেন তৃণমূল প্রার্থী দেব-সন্ধ্যা রায়। আবেগ-উচ্ছ্বাসে মঙ্গলবারের সেই কর্মিসভা পরিণত হয়েছিল জনসভায়। তৃণমূলের তারকা প্রার্থীদের নিয়ে এই উচ্ছ্বাসে কিছুটা হলেও চিন্তিত বিরোধী শিবির। পরিস্থিতি দেখে প্রচার-কর্মসূচিতে তৃণমূল প্রার্থীদের সরাসরি আক্রমণ না করারই কৌশল নিয়েছে বিরোধীরা। তাদের যুক্তি, তারকাদের ঘিরে মানুষের মধ্যে আবেগ-উচ্ছ্বাস থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত। তবে লোকসভার নির্বাচন নীতির লড়াই। সেখানে এই আবেগ-উচ্ছ্বাসের কোনও প্রতিফলন ঘটবে না।

জেলায় ইতিমধ্যে বামেদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়েছে। শুরু হয়েছে প্রচার-কর্মসূচিও। ঝাড়গ্রামে বামফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন এলাকার বিদায়ী সাংসদ সিপিএমের পুলিনবিহারী বাস্কে। মেদিনীপুরে ফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন সিপিআইয়ের প্রবোধ পান্ডা। প্রবোধবাবুও এলাকার বিদায়ী সাংসদ। অন্য দিকে, বর্ষীয়ান সাংসদ গুরুদাস দাশগুপ্ত এ বার লোকসভার নির্বাচনে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ঘাটালে ফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন সিপিআইয়ের সন্তোষ রাণা। সন্তোষবাবু দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তথা মেদিনীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক। সিপিআইয়ের দুই প্রার্থীর কাছেই এ বারের নির্বাচন কঠিন লড়াই। কারণ, ঘাটাল এবং মেদিনীপুরে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী রয়েছে। বুধবার এই দুই বামপ্রার্থীই ব্যস্ত ছিলেন সাংগঠনিক সভা নিয়ে। যে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে প্রচারের রণকৌশল নিয়ে।

বিপক্ষে দেব। লড়াইটা কী আরও কঠিন হয়ে গেল না? প্রশ্নের উত্তরে এ দিন সন্তোষবাবু বলেন, “শুনেছি, মেদিনীপুরের কর্মিসভায় দেব বলেছেন, নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে। ভোট দিতে। এতে খারাপের কী আছে? আমরাও চাই, নতুন প্রজন্ম আরও এগিয়ে আসুক।” ঘাটালের বামপ্রার্থীর বক্তব্য, “দেব ভাল শিল্পী। দেব আরও উন্নতি করুন। আমরা লড়াইয়ে নেমে নীতির কথা বলি। দেব যে দলের প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেই দলের নীতি বলে কিছু নেই। লোকসভার নির্বাচন হবে যুক্তিতে। শেষ কথা বলবে জনগণই।” একই রকম কৌশলী প্রবোধ পান্ডাও। তিনি বলেন, “মেদিনীপুরের কর্মিসভায় সন্ধ্যা রায় বলেছেন, রাজনীতিতে উনি নতুন। দেবও বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তিনি ভালবাসেন। তাঁর কথা রাখতেই প্রার্থী হয়েছেন। জেলার মানুষ রাজনীতি-সচেতন। শেষ সিদ্ধান্ত জনগণই নেবেন।”

পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার দু’দফায় ভোট হবে। ৭ মে ঝাড়গ্রাম এবং মেদিনীপুরে। ১২ মে ঘাটালে। গণনা ১৬ মে। বামফ্রন্ট-তৃণমূল-বিজেপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে প্রচার-কর্মসূচি শুরু করলেও কংগ্রেস এখনও এই জেলার প্রার্থী-তালিকা ঘোষণা করতে পারেনি। দলীয় নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, তালিকা প্রকাশ না-হলেও সাংগঠনিক কাজকর্ম শুরু হয়েছে। জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “বিভিন্ন ব্লকে কর্মী-সম্মেলন হচ্ছে। সাংগঠনিক কাজকর্ম চলছে। প্রার্থী-তালিকা প্রকাশের পরই দেওয়াল লেখার কাজ শুরু হবে।” তৃণমূলের তারকা প্রার্থীদের নিয়ে যে কৌশল নিয়েছে বামেরা, সেই একই কৌশল নিয়েছে কংগ্রেসও। দলীয় নেতৃত্ব তৃণমূলের ‘অতিথি’ প্রার্থীদের সরাসরি আক্রমণ করছেন না। বিকাশবাবু বলেন, “দেব-সন্ধ্যা রায়দের নিয়ে আবেগ থাকবেই। ওঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রেই দেখতে ভাল লাগে। কিন্তু, লোকসভার নির্বাচন নীতির লড়াই। এই আবেগ-উচ্ছ্বাস ইভিএমে প্রতিফলিত হবে না।” জেলা কংগ্রেস সভাপতির কটাক্ষ, “তৃণমূল দলটা রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্যই ওরা বিশিষ্টদের প্রার্থী করেছে। তবে এতে সুবিধে হবে না।”

এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরেও ভোটযুদ্ধ জমে উঠবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আগে এ জেলা ‘লালদুর্গ’ বলেই পরিচিত ছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর ‘সবুজের গড়’ হয়ে উঠেছে। গত বিধানসভা থেকে পুরসভা, পঞ্চায়েত, একের পর এক নির্বাচনে পযুর্দস্ত হয়েছে বামেরা। শক্তি বাড়িয়েছে তৃণমূল। তবে, লোকসভা নির্বাচনে যেহেতু চতুর্মুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে চলেছে, সেহেতু ফলাফল কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা থাকছেই। বিরোধী ভোট ভাগাভাগির ফলে বামেরা সুবিধে পাবে বলেও মনে করছেন অনেকে। তবে, সেই সুবিধে বামেদের জয়ের রাস্তা সুগম করতে পারে কি না, সেটাও দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

barun dey medinipur loksabha election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE