Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তালিকা দিতে পারেনি স্কুল, পড়ে রয়েছে শিক্ষাশ্রীর টাকা

টাকা এসে গিয়েছে, অথচ তা দেওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষাশ্রী প্রকল্পে এমনই ঘটছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। কারণ, স্কুলগুলি এখনও ছাত্রছাত্রীদের নামের তালিকায় পাঠাতে পারেনি। ফলে টাকা থাকা সত্ত্বেও পড়ুয়ারা তাঁদের প্রাপ্য ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ আধিকারিক সৌমেন্দু বিশ্বাস বলেন, “আমরা টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু স্কুলগুলি ছাত্রছাত্রীদের তালিকা না পাঠানোয় তা দেওয়া যাচ্ছে না।”

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২২
Share: Save:

টাকা এসে গিয়েছে, অথচ তা দেওয়া যাচ্ছে না। শিক্ষাশ্রী প্রকল্পে এমনই ঘটছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। কারণ, স্কুলগুলি এখনও ছাত্রছাত্রীদের নামের তালিকায় পাঠাতে পারেনি। ফলে টাকা থাকা সত্ত্বেও পড়ুয়ারা তাঁদের প্রাপ্য ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ আধিকারিক সৌমেন্দু বিশ্বাস বলেন, “আমরা টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু স্কুলগুলি ছাত্রছাত্রীদের তালিকা না পাঠানোয় তা দেওয়া যাচ্ছে না।”

তফসিলি জাতি ও উপজাতির ছাত্রছাত্রীদের বই কেনা, স্কুলের মাইনে দেওয়া-সহ বিভিন্ন বিষয়ে টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এ বার রাজ্য সরকার সেই ভাতাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ না করে এক সঙ্গে পুরো টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারই সঙ্গে এই প্রকল্পের নতুন পোশাকি নাম হয়েছে, ‘শিক্ষাশ্রী’। যে প্রকল্পে এক জন তফসিলি জাতির পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া বছরে ৫০০ টাকা, ষষ্ঠ শ্রেণির ৬৫০ টাকা, সপ্তম শ্রেণির ৭০০ ও অষ্টম শ্রেণির ৮০০ টাকা পাবে। তফসিলি উপজাতির ক্ষেত্রে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি- সমস্ত পড়ুয়াই ৮০০ টাকা করে পাবে। এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে পরিবারের বাৎসরিক আয় হতে হবে আড়াই লক্ষ টাকার কম। ক্লাসে উপস্থিতি সন্তোষজনক হতে হবে। তবে যাঁরা ছাত্রাবাসে সরকারি খরচে থাকা খাওয়ার সুযোগ পায়, তারা এই প্রকল্পের সুবিধে পাবে না। এই সুবিধে পেতে হলে অবশ্যই পড়ুয়ার নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।

২০১৪-১৫ আর্থিক বছরে এই জেলায় ৭৭,১২৮ জন তফসিলি জাতির ও ৫১৭২৩ জন তফসিলি উপজাতির পড়ুয়া রয়েছে। কিন্তু এখনও সব পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়নি। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের হিসেবে, তফসিলি জাতির ৪৪,৭৮৬ ও তফসিলি উপজাতির ২৬৬৪৯ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। তবে আরও বেশি পড়ুয়ার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান। কারণ, সব স্কুল অ্যাকাউন্টের নথি দফতরে পাঠাতে পারেনি। শুধু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর পাঠালেই তো হবে না, পড়ুয়ার বিস্তারিত তথ্যও পাঠাতে হবে। হাতে গোনা ৪-৫টি ব্লক থেকে কয়েকটি স্কুলের সেই নথি এলেও অনেক স্কুলই এখনও নথি জমা দিতে পারেনি।

প্রধান শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, এর কারণ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে দেরি হওয়া। ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীর কথায়, “ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে হিমসিম। বহু ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে বিডিও-র কাছে অভিযোগ জানাতে হয়েছে। প্রশাসনের চাপে অ্যাকাউন্ট খুলতে উদ্যোগী হয় ব্যাঙ্ক।” শিবির করে অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা হয়। তারপরেও পাসবই না পাওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।

এই প্রকল্পে জেলায় প্রায় ১০ কোটি টাকা প্রয়োজন। প্রথম ধাপে ৪ কোটি টাকা এসেছে। প্রথমে চেষ্টা হবে জঙ্গলমহলের স্কুলগুলিকে দেওয়ার। পরে টাকা এলে অন্য স্কুলেও দেওয়া হবে। কিন্তু টাকা কবে পাবে পড়ুয়ারা? তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার পড়ুয়ার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র হাজার চারেক পড়ুয়ার নথি এসেছে জেলা অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরে। প্রশাসন জানিয়েছে, সব স্কুলকে দ্রুত নথি পাঠাতে বলা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের হাতে যাতে দ্রুত টাকা পৌঁছে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টা চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE