চলছে কাজের খতিয়ান নেওয়া। ছবি: সোহম গুহ।
প্রকল্পের চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। পরের বছরই শেষ বছর। এত দিনে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থ-সাহায্যে চলা তিনটির প্রকল্পের মধ্যে শুরু হয়েছে কেবল দু’টি। তা-ও আবার কাজ চলছে একেবারে প্রথম পর্যায়ে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সৈকত পর্যটন কেন্দ্র দিঘার সৌন্দর্যায়ন-সহ অন্য তিনটি প্রকল্পে কাজের অগ্রগতির হাল ঘুরে দেখলেন বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদল।
এক দিনের সফরে মঙ্গলবার তিন সদস্যের দলটি দিঘার সৈকত সৌন্দর্যায়ন, নিকাশি নালা বা ‘ড্রেনেজ সিস্টেম’ এবং সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট বা বর্জ্য নিষ্কাশন প্রকল্পের অগ্রগতি খতিয়ে দেখেন। ২০১০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের আর্থিক সহায়তায় সুসংহত উপকূল পরিচালন প্রকল্পে (আইসিজেডএম) ওই কাজ শুরু করে প্রকল্পের নোডাল এজেন্সি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ (ডিএসডিএ)।
প্রথম পর্যায়ে সৈকত সৌন্দর্যায়ন, নিকাশি নালার সংস্কার শুরু হলেও এখনও বর্জ্য নিষ্কাশন প্রকল্পের কাজ শুরুই করতে পারেনি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। কেন? পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিক সুজন দত্ত বলেন, “ওই প্রকল্প চালু হলে তা রক্ষণাবেক্ষণের খরচ পড়বে প্রতি বছরে দু’কোটিরও বেশি। সেই টাকার যোগান কী ভাবে হবে তা নিয়ে কোনও সুরাহা হয়নি। তাই এই কাজ শুরু হয়নি।” বিষয়টি আগেই বিশ্বব্যাঙ্ককে জানানো হয়েছিল বলে নির্বাহী আধিকারিক দাবি করেছেন। উল্লেখ্য, প্রথম পর্যায়ে ওই প্রকল্পে ব্যয় বরাদ্দ হয়েছিল ৯ কোটি ২২ লক্ষ টাকা। বর্তমানে অন্য প্রকল্পগুলির কী অবস্থা?
দিঘা-শহরের নিকাশি সংস্কারের জন্য ‘ড্রেনেজ সিস্টেম’ প্রকল্পে ৪১ কোটি ৩৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে বিশ্বব্যাঙ্ক। নির্বাহী আধিকারিকের দাবি, এই প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষের পথে। সৈকত সৌন্দর্যায়নে বরাদ্দ হয়েছিল ১০ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। ডিএসডিএ সূত্রে খবর, ওই টাকায় ইতিমধ্যেই ২১৯টি স্টল (৫৬টি স্টল তৈরির কাজ চললেও নিউ দিঘায় প্রস্তাবিত হকার পুনর্বাসন কেন্দ্রের জায়গায় জবরদখল থাকায় প্রস্তাবিত ১৬৩টি স্টলের কাজ শুরু করা যায়নি), ২টি ওয়াচ টাওয়ার, ১টি মুক্তমঞ্চ বা ওপেন থিয়েটার, ১টি শিশুউদ্যান ও ২টি শৌচালয় তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দু’টি প্রকল্পেই কাজের গতি দেখে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা সম্তুষ্ট হয়েছেন বলে দাবি পর্ষদের নির্বাহী আধিকারিকের।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের স্টিয়ারিং কমিটির তরফে আগেই প্রকল্পগুলির বাড়তি ব্যয় বরাদ্দের আবেদন জানানো হয়েছিল। মূলত তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা চালু প্রকল্পগুলির কাজ পরিদর্শনে আসেন। কেন বাড়তি টাকা? প্রকল্পের নোডাল এজেন্সি ডিএসডিএ-র আধিকারিক সুজন দত্ত বলেন, “প্রশাসনিক জটিলতার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পগুলির কাজ শুরু করা যায়নি। নির্ধারিত প্রকল্প ব্যয়ে তাই সেই কাজ করা যাচ্ছে না। বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য বিশ্বব্যাঙ্কের কাছে আরও ৭১ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। সেই নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।” বাড়তি ৭১ কোটি টাকা এই তিনটি প্রকল্পে মিললে টাকার পরিমাণ দাঁড়াবে ১৩৬ কোটি।
প্রকল্পগুলির পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁরা গোটা বিষয়টি নিয়ে দ্রুত জাতীয় ও রাজ্যস্তরের ‘প্রোজেক্ট মনিটরিং অথরিটি’কে রিপোর্ট দেবেন বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার এ সীতারামকৃষ্ণণের নেতৃত্বে বিশ্বব্যঙ্কের প্রতিনিধি দল ছাড়াও কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরের প্রোজেক্ট মনিটরিং অথরিটির প্রতিনিধিরা প্রকল্পগুলির হাল খতিয়ে দেখেন। পরে তাঁরা একটি বৈঠকও করেন। ডিএসডিএ-র আধিকারিক সুজন দত্ত জানান, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সৈকত সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৩৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২টি ওয়াচ টাওয়ার, ৫টি শৌচালয় ও ১০৮৩টি হকার স্টল এবং তৃতীয় পর্যায়ে ৩৬ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে আরও ২টি ওয়াচ টাওয়ার, ৮টি শৌচালয়, ৪৯৬টি হকার স্টল করা হবে। এ ছাড়াও দিঘা বাসস্ট্যান্ড ও পিকনিক স্পটের মানোন্নয়ন করা হবে। সব কাজই আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে শেষ করার কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy