সকলেই ছাত্রঅন্ত প্রাণ। কেউ স্কুলছুটদের স্কুলে ফেরাতে তত্পর হয়েছিলেন, কেউ উঠেপড়ে লেগেছিলেন মেয়েদের মধ্যে শিক্ষা প্রসারে, কেউ বা নিজে চিকিত্সক হওয়ার সুবাদে নিখরচায় ছাত্রছাত্রীদের চিকিত্সা করেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের উচ্চ মাধ্যমিকস্তরের এমনই চার জন শিক্ষককে এ বার শিক্ষারত্ন পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে রাজ্য সরকার। আজ, শিক্ষক দিবসে এঁদের সম্মান জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষারত্ন পুরস্কারের খবর পেয়ে সুভাষচন্দ্র মাইতি, পৃথ্বীনাথ বেরা, গৌরপদ আচার্য এবং মোহিতলাল দাস চার জনই বলছেন এই সম্মান দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিল।
সুভাষচন্দ্র মাইতি বিনপুর-১ ব্লকের (লালগড়) আঁধারিয়া রাজবল্লভ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। গত এপ্রিলে অবসর নিয়েছেন। তাঁর বাড়ি বাঁকুড়ার সারেঙ্গায়। রোজ ৬০ কিলোমিটার পথ উজিয়ে মোটর বাইকে করে স্কুলে আসতেন সুভাষবাবু। জঙ্গলমহলে যখন নিত্য অশান্তি, মাওবাদী- উপদ্রবে গুলি-বোমার শব্দে বাতাস ভারী, তখন বহু স্কুলে পড়াশোনা ব্যাহত হলেও আঁধারিয়া হাইস্কুল একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। এলাকার মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসারেও অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন সুভাষবাবু। কোনও মেয়ে পরপর কয়েকদিন স্কুল কামাই করলেই তার অভিভাবককে ডেকে জানতে চেয়েছেন, কেন মেয়ে স্কুলে আসছে না। সমস্যা জেনে তা সমাধানে উদ্যোগীও হয়েছেন। সুভাষবাবুর কথায়, “অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বললে অনেকটাই সমস্যার সমাধান হয়। মায়েদের নিয়ে স্কুলসভাও করেছি। মেয়েরা কেন স্কুলে আসছে না, তাদের দুর্বলতাগুলো কী, তাই খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি। এতে কাজও হয়েছে।” প্রধান শিক্ষক হিসেবে ১৯৯৭ সালে এই স্কুলে কাজে যোগ দেন সুভাষচন্দ্রবাবু। তাঁর হাত ধরেই স্কুল ধীরে ধীরে উন্নতির শিখরে উঠেছে, পরিকাঠামোয় আমূল বদল এসেছে।
গৌরপদ আচার্য খড়্গপুর-২ ব্লকের বারবাসী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি এই স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র। শিক্ষকজীবন শুরু ১৯৭৭ সালে। ওই বছর খাটরাঙা হাইস্কুলের সহ-শিক্ষকের পদে যোগ দেন। ২০০২ সালে বারবাসী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। এক সময় সাক্ষরতা অভিযানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাক্ষরতা অভিযান নিয়ে বেশ কিছু গান লিখেছেন। স্কুলছুটদের স্কুলে ফিরিয়েও এনেছেন। গৌরপদবাবু হোমিওপ্যাথি চিকিত্সক। নিজে চিকিত্সক হওয়ায় বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের চিকিত্সাও করেন। ওই শিক্ষকের কথায়, “সহ-শিক্ষকেরা, অভিভাবকেরা সাহায্য করেছেন বলেই কিছু কাজ করতে পেরেছি। আমি নিজে এই স্কুলেরই প্রাক্তন ছাত্র। ফলে, স্কুলের জন্য কিছু করতে পারলে ভালই লাগে।”
মোহিতলাল দাস নারায়ণগড় রাজা ঋষিকেশ লাহা উচ্চ শিক্ষা নিকেতনের সহ-শিক্ষক। সেই ১৯৭৮ সাল থেকে শিক্ষকতা করছেন। সুযোগ পেলে দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করেন। তাদের বইপত্র কিনে দেন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির সঙ্গেও যুক্ত থাকেন। অন্যদিকে, পৃথ্বীনাথ বেরা দাঁতন- ২ এর পুরুন্দা রামকৃষ্ণ শিক্ষাসদনের প্রধান শিক্ষক। তিনিও এই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৮০ সালে সহ-শিক্ষকের পদে যোগ দেন। ২০০২ সালে সহ- প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন। ২০০৭ সালে প্রধান শিক্ষকের। স্কুলে আশ্রমিক পরিবেশেই পড়াশোনা হয়। দু’বেলা প্রার্থনাসভা হয়। ছাত্রছাত্রীদের থাকার জন্য হস্টেলও রয়েছে। ওই শিক্ষকের কথায়, “সকলের সহযোগিতা পেয়েছি বলেই স্কুলের উন্নয়নে কিছু কাজ করতে পেরেছি। এই সহযোগিতাই তো কাজে উত্সাহ জোগায়।”
পশ্চিম মেদিনীপুরের চার জন প্রাথমিক শিক্ষকও এ বার শিক্ষারত্ন পাচ্ছেন। এঁরা হলেন অমলকুমার ভঞ্জ, নারায়ণচন্দ্র হেমব্রম, পঙ্কজকুমার রাণা এবং কমল শীট। অমলবাবু ডেবরার পরমহংস পাঠ বেসিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। নারায়ণচন্দ্রবাবু নয়াগ্রামের পানারিয়া প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। পঙ্কজবাবু জামবনির মোহনপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। কমল শীট বেলদার বিনোদপুর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি নারায়ণ সাঁতরা বলেন, “আমাদের জেলার চারজন প্রাথমিক শিক্ষক শিক্ষারত্ন সম্মান পাচ্ছেন। এটা খুশির খবর। আশা করি, এই সম্মান ওঁদের আরও ভাল কাজ করার ক্ষেত্রে উত্সাহ দেবে।”
পূর্বে শিক্ষারত্ন সম্মান ছ’জনকে
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক
আজ, শিক্ষক দিবসে রাজ্য সরকারের ‘শিক্ষা রত্ন’ সম্মান পাচ্ছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ছয় শিক্ষক-শিক্ষিকা। এদের মধ্যে তিন জন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ও তিন জন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়নার মাসমচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লতিকা মাইতি, রামনগরের অর্জুনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফুল্ল কুমার জানা ও চণ্ডীপুরের ব্রজলালচক বোর্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বাদল কুমার ভঁূইয়া শিক্ষারত্ন পুরষ্কার পাচ্ছেন। অন্য দিকে, জেলার খেজুরির কলাগেছিয়া জগদীশ বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের সহ-শিক্ষক স্বপনকুমার মণ্ডল, নন্দকুমারের বাগডোবা জালপাই হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বিধানচন্দ্র সামন্ত, পাঁশকুড়ার বাকুলদা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কানাইলাল মণ্ডলও শিক্ষারত্ন পুরষ্কার পাচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy