Advertisement
E-Paper

নেপালি স্কুল নেই, ক্ষোভ সালুয়াবাসীর

‘মিনিইন্ডিয়া’ খড়্গপুর নানা জনজাতির মিলনক্ষেত্র। তেলুগু, হিন্দি, ওড়িয়া, গুজরাতির সঙ্গে রয়েছেন নেপালি ভাষাভাষীরা। তাঁদের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়, প্রায় এগারো হাজার। ক্রমশ এই রেলশহরে গড়ে উঠেছে তেলেগু, হিন্দি, ওড়িয়া, গুজরাতিদের জন্য একাধিক স্কুল। তবে এখনও নেপালি শিক্ষার্থীদের জন্য হয়নি একটিও নেপালি মাধ্যমের স্কুল।

দেবমাল্য বাগচি

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:১১

‘মিনিইন্ডিয়া’ খড়্গপুর নানা জনজাতির মিলনক্ষেত্র। তেলুগু, হিন্দি, ওড়িয়া, গুজরাতির সঙ্গে রয়েছেন নেপালি ভাষাভাষীরা। তাঁদের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়, প্রায় এগারো হাজার। ক্রমশ এই রেলশহরে গড়ে উঠেছে তেলেগু, হিন্দি, ওড়িয়া, গুজরাতিদের জন্য একাধিক স্কুল। তবে এখনও নেপালি শিক্ষার্থীদের জন্য হয়নি একটিও নেপালি মাধ্যমের স্কুল।

প্রায় সাত দশক ধরে খড়্গপুরের সালুয়ায় বাস নেপালি জনজাতির। এখানেই বেড়ে উঠছে বহু শিশু। কিন্তু, তাদের জন্য রয়েছে বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজি মাধ্যমের হাতে গোনা পাঁচটি স্কুল। নেই মাতৃভাষায় পঠনপাঠনের উপযুক্ত কোনও স্কুল। শুধু তাই নয়, অন্য মাধ্যমের যে স্কুলগুলি রয়েছে সেখানে ঐচ্ছিক হিসেবেও পড়ানো হয় না এই ভাষা। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে তাদের পরিবারে।

সালুয়া এলাকার তৃণমূল নেতা রোশন লামা (ঘিসিঙ্গ) সরাসরি বলছেন, “আমরা গোর্খাল্যান্ডের বিপক্ষে। তবে মাতৃভাষাকে অন্য ভাষার মতোই শ্রদ্ধা করি। কিন্তু, তাই বলে এত বছর পরেও এলাকায় নেপালি ভাষার একটিও স্কুল না পেয়ে আমরা ক্ষুব্ধ।” এই বঞ্চনার কথা তাঁরা সকলে মিলে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাবেন, বলছেন রোশন।

বস্তুত, ১৯৪৭ সালে বাংলা ভাগের সময় বাংলাদেশ মিলিটারি পুলিশের একটি অংশকে নিয়ে আসা হয় খড়্গপুরের হিজলি এলাকায়। তখনই পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব সীমান্ত রক্ষার জন্য একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠিত হয়। সেই বাহিনীর সব জওয়ান ছিলেন নেপালি। ১৯৫০ সালে বাহিনী নাম বদলে হয় ইস্টার্ন ফ্রন্টেয়ার রাইফেল (ইএফআর)। মেলে পশ্চিমবঙ্গের স্বীকৃতিও। তাঁদের পরিজনদের বসবাসের জন্য রেলশহরের অদূরে জঙ্গলে ঘেরা সালুয়াকে বাছা হয়। ১৯৬২ সালে চিন-ভারতের যুদ্ধের সময় নতুন করে আরও একটি ব্যাটালিয়ান গড়ে এই বাহিনীকে পাঠানো হয় সেই যুদ্ধে। বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধেও এই বাহিনী তৎপরতার সঙ্গে কাজ করে বাহিনী। ১৯৮৪ সালে তৃতীয় ব্যাটেলিয়ান গঠিত হয়। এখনও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে এই বাহিনী কাজ করেছে। অনেকেই অবসরের পরে থেকে গিয়েছেন সালুয়াতেই। আবার অনেকে কর্মসূত্রে পাহাড় থেকে এসেছেন।

এখন এই সালুয়ায় পুরাতন বস্তি, নতুনবস্তি, নো-শ্যুটিং, খয়রাচটি, শিরষি, কাঁথার এলাকার নেপালি পড়ুয়াদের জন্য বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলই ভরসা। এই এলাকার সংলগ্ন ভেটিয়াচণ্ডীতে রয়েছে বাংলা মাধ্যমের হাইস্কুল। সালুয়ায় রয়েছে ‘ইএফআর প্রাইমারি স্কুল’। এটিও বাংলা মাধ্যমের। আর রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়। সেখানেও নেই কোনও নেপালি বিষয়। এ ছাড়া দু’টি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল রয়েছে। এই অবস্থায় এলাকার পড়ুয়াদের মাতৃভাষা শিক্ষার জন্য কোনও স্কুল না থাকায় সমস্যায় পড়েছেন নেপালি ভাষায় শিক্ষিত অভিভাবকেরা। অনেকের আবার বক্তব্য পাহাড়ে চাকরির ক্ষেত্রে অনেক সময়েই নেপালি ভাষা জানা কর্মপ্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে এই ভাষায় কথা বললেও, স্কুল শিক্ষায় নেপালি ভাষায় কোনও শংসাপত্র না থাকায় তা দেখাতে পারেন না এই এলাকার কর্মপ্রার্থীরা। এ ছাড়াও নানা কারণে বঞ্চনার শিকার হতে হয় তাঁদের।

মাতৃভাষার স্কুল না থাকার সমস্যা যে কোথাও একেবারে জানানো হয়নি তা-ও নয়। পুরাতন বস্তি এলাকার বাসিন্দা মোহন থাপা, দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ানের কোয়ার্টারের বাসিন্দা তিলক রাই বলেন, “পাহাড় থেকে এখানে আসা মানুষের নেপালি ভাষার স্কুল না থাকায় খুবই অসুবিধা হচ্ছে। তাই অন্তত একটি স্কুলে কোনও একটি বিষয় নেপালিতে পড়ানোর দাবি নিয়ে মহাকরণ পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু কিছু লাভ হয়নি। সালুয়ায় নেপালি মাধ্যমের স্কুল অবিলম্বে চাই।”

যদিও এই বিষয়ে খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্যের বক্তব্য, “আমিও মনে করি, অন্য ভাষার মতো সালুয়ার নেপালিদের জন্য একটি স্কুল হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এ জন্য ওঁদের পক্ষ থেকে উপযুক্ত মাধ্যমে আমার কাছে এই দাবি জানাতে হবে।” তা এলে, তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

debmallya bagchi kharagpur
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy