জেলাশাসকের অফিসের সামনে আলু চাষিদের বিক্ষোভ।-—নিজস্ব চিত্র।
এ বার পথে নামলেন আলু ব্যবসায়ীরা। ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপর রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সমালোচনায় সরব হলেন। আলু ব্যবসায়ীদের হুঁশিয়ারি, ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলে ভবিষ্যতে চাষিদের কাছ থেকে তাঁরা আলু কিনবেন না।
বুধবার ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোর উপর রাজ্য সরকারি নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতি। মিছিল করে জেলাশাসকের অফিস ও জেলা পরিষদে বিক্ষোভ দেখান তারা। তারপর স্মারকলিপিও জমা দেন। যদিও এ ব্যাপারে প্রশাসনিক কোনও আশ্বাস মেলেনি। ফলে ক্ষোভ চেপে রাখেননি ব্যবসায়ীরা। সংগঠনের জেলা সম্পাদক বরেন মণ্ডল বলেন, “ভাবতেও অবাক লাগছে জেলাশাসক ও জেলা সভাধিপতি নিজেরা স্মারকলিপি নিলেন না। তাই অন্যদের দিয়েছি। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে একটা অসহযোগিতার চেষ্টা চলছে। এরকম চললে ভবিষ্যতে আমরাও আর চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনব না। তখন চাষিরা বিপাকে পড়লে সেই দায় রাজ্য সরকারকে নিতে হবে।”
গত মরসুমের শুরু থেকেই ভিন্ রাজ্যে আলু পাঠানোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাজ্য সরকার। তার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে দু’বার কর্মবিরতির ডাক দিতে হয়েছিল ব্যবসায়ীদের। তার জেরে সরকার আলোচনায় বসে। ১৩ টাকা কেজি দরে দিনে সরকারকে ২০০ মেট্রিক টন আলু দিলে তবেই বাইরের রাজ্যে ১১০০ মেট্রিক টন আলু পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীকালে আরও কিছু বাড়িয়ে দিনে ১৭০০ মেট্রিক টন আলু পাঠানোর অনুমতি দেয় রাজ্য। বাইরের রাজ্যে আলু পাঠানোর অনুমতিপত্র (ব্যবসায়ীদের ভাষায় টোকেন) নিয়েও ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
বিক্ষোভে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ দিন প্রকাশ্যে ব্যবসায়ীরাও অভিযোগ তোলেন, “আলুর গাড়ি দেখলেই সকলে ছুটে আসতে শুরু করে। যেন টাকার গাড়ি যাচ্ছে। এক একটি গাড়ি ধরে পুলিশ ৬০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করেছে। পুলিশি এই হয়রানি বন্ধ করতে হবে।”
গত ১৩ নভেম্বরের টাস্কফোর্সের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আর বাইরে আলু পাঠানোর অনুমতি দেওয়া যাবে না। তখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যায় ব্যবসায়ীদের। কারণ, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এখনও ৪০ লক্ষ প্যাকেট (অর্থাৎ ২০ লক্ষ কুইন্টাল) আলু হিমঘরে রয়েছে। ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই আবার নতুন আলু উঠে যাবে। ফলে যোগান বেড়ে গেলে দাম কমতে বাধ্য। ফলে হিমঘরে রাখা আলুর দাম পাবেন না ব্যবসায়ীরা। সংগঠনের জেলা সভাপতি ফনীভূষণ দে-র কথায়, “চাষিরা যখন পঞ্জাব থেকে আনা ৫০ কিলোগ্রাম আলু বীজ ২৫০০ টাকায় কিনছেন, তখন সরকারের মাথাব্যাথা নেই। অথচ, এত খরচ করে চাষ করা ৫০ কিলোগ্রাম আলু ৭০০ টাকায় বিক্রি হলেই আলুর দাম বেড়ে গেল, বেড়ে গেল বলে রব উঠবে। তা কী করে হয়? সরকার কেন বীজের দাম, রাসায়নিক সারের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে না। উল্টে বাইরের রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করছে।”
ব্যবসায়ীদের অভিমত, অন্য রাজ্যগুলি এ রাজ্যের আলু নিয়ে অনিশ্চয়তার পড়লে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরশীল হবে, নিজের রাজ্যেও আলুর চাষ বাড়ানোর চেষ্টা করবে। তখন এ রাজ্যের আলু শিল্প, হিমঘর শিল্প, লরি শিল্প - তিনটি শিল্পই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চাষিদের কাছ থেকে আলু কিনবেন না। বেশিরভাগ চাষির পক্ষেই অন্য রাজ্যে আলু পাঠানোর মতো ক্ষমতাও নেই। তাই সাত দফা দাবিতে সেই সব কথা জানিয়ে অবিলম্বে রাজ্য সরকারকে পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে। যার মধ্যে প্রধান দাবিগুলি হল, বাইরের রাজ্যে আলু পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা যাবে না, চাষিকে কম দামে আলু বীজ দিতে হবে, কৃষকের আলুর সহায়ক মূল্য নির্দিষ্ট করতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ বলেন, “এ ব্যাপারে রাজ্য টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে। তাঁরা যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই। আমরা স্থানীয় স্তরে এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করতে পারব না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy