Advertisement
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নকলে বাধার জের, শিক্ষকের মাথায় রড

ফের নকলে বাধা দেওয়ার জেরে হামলার ঘটনা ঘটল। এ বার ছাত্রের আক্রোশের শিকার হলেন খোদ শিক্ষক। বুধবার কোলাঘাট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এক শিক্ষকের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র। গুরুতর আহত অবস্থায় হীরককুমার মাইতি নামে ওই শিক্ষককে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহত শিক্ষক হীরককুমার মাইতি (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।

আহত শিক্ষক হীরককুমার মাইতি (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০০:৫৫
Share: Save:

ফের নকলে বাধা দেওয়ার জেরে হামলার ঘটনা ঘটল।

এ বার ছাত্রের আক্রোশের শিকার হলেন খোদ শিক্ষক। বুধবার কোলাঘাট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এক শিক্ষকের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্র। গুরুতর আহত অবস্থায় হীরককুমার মাইতি নামে ওই শিক্ষককে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, রোগীর মাথায় আঘাত রয়েছে। তবে তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।

অভিযুক্ত ছাত্র।

কলেজ সূত্রে খবর, মে মাসে তৃতীয় বর্ষের ষষ্ঠ সেমিস্টারের ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট পরীক্ষায় মনসুর হাবিবুল্লাহ নামে এক ছাত্রকে নকল করতে বাধা দেন পরীক্ষা হলে পাহারার দায়িত্বে থাকা ওই শিক্ষক। মঙ্গলবার পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলে দেখা যায়, মনসুর ওই বিষয়-সহ মোট তিনটি পত্রে অকৃতকার্য হয়েছে। বুধবার সকালে হীরকবাবু কলেজের করিডর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আচমকা মনসুর লোহার রড নিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করে। অভিযুক্ত চতুর্থ বর্ষের ওই ছাত্রকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ পুলিশে ঘটনার অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশের দাবি, মনসুর নিজে কলেজ হস্টেল থেকে লোহার রড এনে ওই শিক্ষকের উপর হামলার কথা স্বীকার করেছে। তাঁর নামে খুনের চেষ্টা, আক্রমণ ও আঘাত হানার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। এ দিন তাঁকে তমলুক আদালতে তোলা হলে বিচারক চোদ্দো দিন জেল হাজতের নির্দেশ দেন। ঘটনার পর এ দিন নোটিস দিয়ে কলেজের পঠন-পাঠন বন্ধ রাখা হয়।

কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, হীরকবাবু কোলাঘাটে বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ইলেকট্রনিক ও কমিউনিকেশন বিভাগে ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষকতা করছেন। তাঁর বাড়ি মেদিনীপুর শহরে। মনসুর ওই কলেজের ইলেকট্রনিক ও ইনস্ট্রুমেন্টেশন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। কোচবিহারের দিনহাটা থানার কোনামুক্তা গ্রামের বাসিন্দা মনসুর কলেজ হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করত। গত মে মাসে ষষ্ঠ সেমিস্টারে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ম্যানেজমেন্ট পরীক্ষায় পাহারার দায়িত্বে থাকা হীরকবাবু নকল করার সময় মনসুরকে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। তিনি মনসুরকে আলাদা জায়গায় বসে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। গত মঙ্গলবার ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হলে দেখা যায়, মনসুর ওই বিষয়-সহ মোট তিনটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। বুধবার নিজের বিভাগে ক্লাস নিয়ে হীরকবাবু কলেজের এক তলার করিডর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় মনসুর আচমকা আক্রমণ করে তাঁকে। গুরুতর জখম অবস্থায় ছাত্র ও অন্য শিক্ষকেরা মিলে তাঁকে প্রথমে কোলাঘাট তাপবিদ্যুত্‌ কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিত্‌সার পর ওই শিক্ষককে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শিক্ষককে আক্রমণের পরে কলেজের লবিতে জটলা

কলেজের শিক্ষক শঙ্করপ্রসাদ ঘোষ, দেবব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, বুধবার সকালে চতুর্থ বর্ষের ক্লাস হলেও মনসুর ক্লাসে আসেনি। এ দিন নিজের বিভাগের ক্লাস শেষে অফিস ঘরে কিছুক্ষণ বসে হীরকবাবু সকাল সোয়া ৯টা নাগাদ সেখান থেকে বেরিয়ে করিডর ধরে হেঁটে আসছিলেন। কিছুটা এগোনোর পরেই মনসুর সামনের দিক থেকে এসে একটি লোহার রড দিয়ে আচমকা হীরকবাবুর মাথায় আঘাত করে। রডের আঘাতে হীরকবাবুর মাথা ফেটে যায়। ঘটনার পরেই মনসুর পালানোর চেষ্টা করলে কলেজের অন্য ছাত্র ও শিক্ষকেরা মিলে তাঁকে ধরে ফেলে। পরে কোলাঘাট থানার পুলিশ এসে তাঁকে গ্রেফতার করে। মনসুরের সহপাঠী চতুর্থ বর্ষের ছাত্ররা জানায়, ক্লাসে মনসুরের উপস্থিতির হার ছিল বেশ কম। ষষ্ঠ সেমিস্টারে একাধিক বিষয়ে ফেল করার ফলে চতুর্থ বর্ষে ক্যাম্পাসিংয়ের মাধ্যমে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধায় পড়ত মনসুর। সেই রাগেই হয়তো সে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।

কলেজের মধ্যে ছাত্রের হাতে শিক্ষক আক্রান্ত হওয়ার এই ঘটনায় শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদের বেপোরয়া মনোভাব ফের প্রকাশ্যে এল। ফলে ফের প্রশ্ন উঠে গেল শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিয়েই। কোলাঘাট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের অধিকর্তা নরেন্দ্রনাথ জানা বলেন, “ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে জানিয়েছি।” প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, পরীক্ষায় টুকলিতে বাধা ও তারপর পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় আক্রোশ থেকেই সে ওই শিক্ষককে আক্রমণ করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE